অবিশ্বাস্য জয়!
সপ্তম উইকেটে রেকর্ডগড়া জুটিতে সফরকারী আফগানিস্তানকে ৪ উইকেটে হারালো বাংলাদেশ। বাংলাদেশ-আফগানিস্তান সিরিজে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে আগে ব্যাট করতে নেমে ২১৫ রানে থামে আফগানরা। জবাবে টপ অর্ডারের ব্যর্থতায় মাত্র ৪৫ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে শেষ পযর্ন্ত আফিফ-মেহেদীর দুর্দান্ত ইনিংসে ৭ বাকি থাকতেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় টাইগাররা।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় আফগানিস্তান। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই আফগান শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন মোস্তাফিজুর রহমান। দলীয় ১১ রানে রহমানউল্লাহ গুরবাজকে সাজ ঘরে ফিরান এই টাইগার পেসার।
এরপর রহমত শাহ ও ইব্রাহিম দুজন মিলে দলকে ধীরে ধীরে এগিয়ে নিয়ে জুটি গড়েন ৪৫ রানের। তবে ১৯ রান করা ইব্রাহিমকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন শরিফুল ইসলাম। ইব্রাহিমের বিদায়ের পর উইকেটে থিতু হওয়া ব্যাটার রহমত শাহকে আউট করেন তাসকিন আহমেদ। ৬৯ বলে তিন চারে ৩৪ রান করেন রহমত।
এরপর মোহাম্মদ নবীকে নিয়ে অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ জুটি গড়ার চেষ্টা করলেও শেষ ভরসা হয়নি তার, দলীয় রান এক শ’ পার হতেই আফগান অধিনায়ককে ফেরান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দলীয় ১০২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়া আফগান দলের হাল ধরেন নাজিবুল্লাহ জাদরান ও মোহাম্মদ নবী। পঞ্চম উইকেট জুটিতে দুজনের ব্যাট থেকে আসে ৬৩ রান।
২০ রান করে মো. নবী সাজ ঘরে ফিরলে এরপর একই ওভারে গুলবাদিন নাইব ও রশিদ খানকে শিকার করে আফগানিস্তানকে বেশি দূর যেতে দিল না টাইগার। ইনিংসের ৫ বল বাঁকি থাকতেই ৪৯.১ ওভারেই ২১৫ রানে অলআউট হয়ে যায় আফগানরা।
এদিকে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেন মোস্তাফিজুর রহমান। এছাড়া দুটি করে উইকেট নেন তাসকিন, সাকিব ও শরিফুল।
জবাবে ছোট লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ দল। মাত্র তিন বলের ব্যবধানে সাজঘরে ফিরেন দুই টাইগার ওপেনার লিটন দাস ও তামিম ইকবাল। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই লিটন ১ রানে এবং তামিম ৮ রানে আউট করেন আফগান পেসার ফজল হক ফারুকী।
১৪ রানে দুই ওপেনার ফেরার পরও বিপদ কাটেনি টাইগারদের। উইকেটে এসে ভরসা দেওয়ার বদলে ৩ রানে আউট হন মুশফিক। শিকারী সেই ফারুকী। এরপর ব্যাট করতে নেমে নিজের অভিষিক্ত ম্যাচে রানের খাতা খোলার আগেই সাজ ঘরে ফিরেন ইয়াসির আলি।
১৮ রানে চার উইকেট হারানো দলের সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ মিলে চেষ্টা করেন প্রতিরোধ গড়তে। কিন্তু সেটাও বেশিক্ষণ টেকেনি। আফগান দুই স্পিনারের তোপে এ দু’জনও সাজ ঘরে ফিরেন দ্রুত। ১০ রান করা সাকিব আল হাসানকে বোল্ড করে মুজিব ও ৮ রান করা মাহমুদউল্লাহকে বিদায় করেন রশিদ খান।
এমণ অবস্থায় নিজেদের ইতিহাসের সর্বনিম্ন (৫৮) রানের মধ্যে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয় টাইগারদের সামনে। কিন্তু সপ্তম উইকেট জুটিতে আফগান বোলারদের বুড়ো আঙুল দেখাতে থাকেন আফিফ হোসেন এবং মেহেদি হাসান মিরাজ।
চাপ সমালে দুজনের সাবলীল ব্যাটিংয়ে জয়ের দিকে আস্তে আস্তে এগোতে থাকে বাংলাদেশ দল। সপ্তম উইকেটে দুজন মিলে ১৭৪ রানে অপ্রতিরোধ্য জুটি গড়েন। যা বাংলাদেশের হয়ে সপ্তম উইকেট জুটিতে রেকর্ড। এর আগে ১২৭ রান করেছিলেন ইমরুল কায়েস এবং সাইফউদ্দিন।
এছাড়া ক্রিকেটবিশ্বে সপ্তম উইকেটে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। ২০১৫ সালে জস বাটলার এবং আদিল রশিদ মিলে তুলেছিলেন ১৭৭ রান।
শেষ পযর্ন্ত দুজনের অবিচ্ছেদ্য ১৭৪ রানের জুটিতে ৪ উইকেট আর ৭ বল হাতে রেখে জয় পায় বাংলাদেশ দল। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম অর্ধশতকের স্বাদ পেয়েছেন আফিফ হোসেন। মিরাজ তুলে নিয়েছেন দ্বিতীয় অর্ধশতক। এদিকে আফগানদের একাই চারটি উইকেট শিকার করেন ফজলে হক ফারুকি।
এ জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল টাইগাররা।