রিয়ালের কামব্যাক না হলেও ১৬ বছরের অপেক্ষা ঘুচিয়ে সেমিফাইনালে আর্সেনাল
রিয়াল মাদ্রিদ ১ (১)–(৫) ২ আর্সেনাল
সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর ছাদ আটকে কামব্যাক করার স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল আনচেলত্তির হালা মাদ্রিদের। দ্বিতীয় লেগেও পরাজিত করে ১৬ বছরের অপেক্ষা ঘুচিয়ে সেমিফাইনালে নিজেদের আসন গেড়ে দিল আর্সেনাল।
ঘরের মাঠে অনেকবারই কামব্যাকের ইতিহাস লিখলেও এবার নায়োকোচিত হাসি নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেননি লুকা মদরিচ, এমবাপ্পে, ভিনিসিয়ুস জুনিয়ররা। তিন গোলের ঘাটতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর মরিয়া ভাবটা যে তাদের পারফরম্যান্সে এতটুকুও পড়ল না!
মিকেল আরতেতার আর্সেনাল প্রথম লেগে ৩–০ গোলে এগিয়ে থাকার পর আজ বার্নাব্যুর ভয়কেও জয় করে ফেলল। ফিরতি লেগে আর্সেনাল জিতল ২–১ ব্যবধানে
তাতে দুই লেগ মিলিয়ে ৫–১ অগ্রগামিতায় চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে পৌঁছে গেল লন্ডনের ক্লাবটি। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রিয়ালকে থমকে যেতে হলো এখানেই।
রেকর্ড পনেরোবারের চ্যাম্পিয়ন রিয়াল সর্বশেষ চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয়েছিল ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময়ে। বিপরীতে আর্সেনাল সেমিফাইনালে উঠল ১৬ বছর পর।
গানাররা শেষ চারে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেল ফরাসি চ্যাম্পিয়ন পিএসজিকে।
ঘুরে দাঁড়ানোর অদম্য গল্প লিখতে হলে রিয়ালকে শুরু থেকেই গোলের সন্ধান করতে হতো। ভিনিসিয়ুস–বেলিংহামরা সেটাই করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাঁদের একের পর এক আক্রমণ রুখে দিয়েছে আর্সেনালের জমাট রক্ষণ। পাল্টা আক্রমণে আর্সেনালও রিয়াল ডিফেন্ডারদের তটস্থ রেখেছিল।
ফরাসি রেফারি ফ্রাঁসোয়া লেতেক্সিয়ের দুইবার পেনাল্টির বাঁশি, একবার পেনাল্টি মিস, একবার পেনাল্টি বাতিল, হলুদ কার্ড প্রদর্শন, অফসাইডের ফাঁদে আটকা, ভিএআর যাচাই করতে গিয়ে কালক্ষেপণ—প্রথমার্ধে মোটামুটি সবই হয়েছে। হয়নি শুধু গোল!
বাঁচা–মরার ম্যাচের শুরুতেই ভিনির ক্রস থেকে আর্সেনালের জালে বল পাঠান এমবাপ্পে। কিন্তু অফসাইডের কারণে সেটি বাতিল হয়ে যায়।
৬ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে আর্সেনালের বুকায়ো সাকার বিদ্যুৎ গতির শট রিয়ালের বারের খুব কাছ দিয়ে চলে যায়।
কিছুক্ষণ পর রিয়ালের রাউল আসেনসিও নিজেদের বক্সে মিকেল মেরিনোকে ফেলে দিলে পেনাল্টি পায় আর্সেনাল। কিন্তু স্পট কিক থেকে সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি সাকা। তাঁর নেওয়া পানেনকা শট ঠেকিয়ে রিয়ালকে যেন জাগিয়ে তোলেন গোলকিপার থিবো কোর্তোয়া।
প্রথমার্ধের সবচেয়ে নাটকীয় ঘটনার উৎপত্তি ২৩ মিনিটে। দুই দলের আগের লড়াইয়ের নায়ক ডেকলান রাইস নিজেদের বক্সে এমবাপ্পের জার্সি টেনে ধরলে সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি লেতেক্সিয়ে। রাইসকে হলুদ কার্ডও দেখান।
এ নিয়ে আর্সেনাল খেলোয়াড়রা প্রতিবাদ জানালে ভিএআর যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নেন।
প্রায় ৫ মিনিট ধরে ভিএআর যাচাই করতে গিয়েই ধরা পড়ে আরেক ঘটনা। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, রাইস এমবাপ্পের জার্সি টেনে ধরার আগে অফসাইডে ছিলেন রিয়ালের রদ্রিগো।
ফলে পেনাল্টি বাতিল তো হয়ই; সঙ্গে রাইসের হলুদ কার্ডের শাস্তিও তুলে নেওয়া হয়।
প্রথম লেগে তিন গোলে পিছিয়ে পড়া রিয়াল এ দিন প্রথমার্ধে একটি শটও লক্ষ্যে রাখতে পারেনি। ফলে কার্লো আনচেলত্তির দলের ওপর দ্রুততম সময়ের মধ্যে গোল করার চাপ আরও জেঁকে বসে। গোলের জন্য হন্যে হয়ে ওঠা আনচেলত্তি ৬১ মিনিটে তিন বদলি নামান।
কিন্তু হিতে বিপরীত হয়। ৬৫ মিনিটে উল্টো গোল করে বসে আর্সেনাল। দুর্দান্ত ফুটবলশৈলীর প্রদর্শনীতে বুকায়ো সাকা এবার কোর্তোয়াকে ফাঁকি দিয়ে যেন প্রথমার্ধে পেনাল্টি মিসের প্রায়শ্চিত্ত করেন। দুই লেগ মিলিয়ে রিয়াল তখন ৪–০ গোলে পিছিয়ে।
তবে দুই মিনিটের মধ্যে গোল শোধ দিয়ে নিভু নিভু আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখেন ভিনিসিয়ুস। আর্সেনালের এই গোল খাওয়ার দায়টা অবশ্য উইলিয়াম সালিবার।
ডান পাশের ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা সালিবাকে পাস দিয়েছিলেন গোলকিপার দাভিদ রায়া।
কিন্তু সালিবা বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেননি। সুযোগ সন্ধানী ভিনিসিয়ুস তাঁর কাছে ছোঁ মেরে বল কেড়ে নিয়ে আর্সেনালের জালে পাঠান।
এক গোল শোধ দিলেও রিয়ালের সময় ফুরিয়ে আসছিল। বাধ্য হয়ে প্রায় সবাইকে ওপরে উঠে খেলতে হচ্ছিল। যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে মার্তিনেল্লি সেই সুযোগটাই কাজে লাগান।
কোর্তোয়াকে একা পেয়ে রিয়ালের জাল কাঁপাতে ভুল করেননি আর্সেনালের এই ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার।