ভারতের এই ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগে কলকাতার এটি তৃতীয় শিরোপা। প্রথম দুটি জিতেছিল ২০১২ ও ২০১৪ সালে। চেন্নাইয়ে রোববারের একপেশে ফাইনালে হায়দরাবাদের বিপক্ষে কলকাতার জয় ৮ উইকেটে। এমএ চিদাম্বারাম স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ৯ বল বাকি থাকতে স্রেফ ১১৩ রানে গুটিয়ে যায় হায়দরাবাদ। আইপিএল ফাইনালে সর্বনিম্ন স্কোর এটিই। ২০১৩ আসরে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে রান তাড়ায় চেন্নাই সুপার কিংসের ৯ উইকেটে ১২৫ ছিল আগের সর্বনিম্ন।
প্রাথমিক পর্বে এবার একের পর এক ম্যাচে রানের জোয়ার বইয়ে দিয়েছে হায়দরাবাদ। তিনবার ছাড়িয়েছে আড়াইশ রানের সীমানা। টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ সংগ্রহের রেকর্ড তারা ভেঙে দিয়েছে একাধিকবার। বিস্ময়করভাবে, সেই দলটিই প্লে অফে তিন ম্যাচ খেলে একটিতেও ছুঁতে পারল না দুইশ, সর্বোচ্চ ১৭৫।
ফাইনালে তো হায়দরাবাদের ইনিংসে ত্রিশও ছুঁতে পারেননি কেউ। সব আসর মিলিয়ে ফাইনালে কোনো দলের এমন ঘটনা এটিই প্রথম। আইপিএল ইতিহাসে নিলামে সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার স্টার্ক পাওয়ার প্লেতে ৩ ওভারে স্রেফ ১৪ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট।
গত ডিসেম্বরের নিলামে রেকর্ড ২৪ কোটি ৭৫ লাখ রুপিতে অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি পেসারকে দলে নেয় কলকাতা। আট বছর পর আইপিএলে খেলতে এসে প্রাথমিক পর্বে খরুচে বোলিংয়ে ১২ ম্যাচে তিনি উইকেট নেন ১২টি। সেখানে প্লে অফে দুই ম্যাচে দারুণ বোলিংয়ে তার শিকার ৫ উইকেট। প্রথম কোয়ালিফায়ারের পর ফাইনাল, হায়দরাবাদের বিপক্ষে দুবারই ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতলেন তিনি।
এদিন কলকাতার সফলতম বোলার অবশ্য আন্দ্রে রাসেল। ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার ১৯ রানে নেন ৩ উইকেট। সহজ লক্ষ্য কলকাতা ছুঁয়ে ফেলে ৫৭ বল হাতে রেখেই। ৩টি ছক্কা ও ৪টি চারে ২৬ বলে ৫২ রানের ইনিংসে দলকে জিতিয়ে ফেরেন ভেঙ্কাটেশ।
প্রথম কোয়ালিফায়ারের মতো ফাইনালেও ম্যাচের প্রথম ওভারে কলকাতাকে সাফল্য এনে দেন স্টার্ক। স্বপ্নের মতো এক ডেলিভারিতে বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান আভিষেক শার্মাকে ফিরিয়ে দেন তিনি। বল মিডল স্টাম্পে পড়ে সুইং করে ছোবল দেয় অফ স্টাম্পের মাথায়।
পরের ওভারে আরেক বিধ্বংসী ওপেনার ট্রাভিস হেডকে ‘গোল্ডেন ডাক’ এর তেতো স্বাদ দেন বৈভব আরোরা। কলকাতার বিপক্ষে টানা দ্বিতীয় এবং সবশেষ চার ম্যাচের মধ্যে তিনবার শূন্য রানে ফিরলেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান। আসরজুড়ে যে দুজন বিস্ফোরক সব ইনিংস উপহার দিয়েছেন হায়দরাবাদকে, ফাইনালে তারা সম্মিলিতভাবে করতে পারলেন ৬ বলে ২ রান! পাওয়ার প্লেতে নিজের তৃতীয় ওভারে রাহুল ত্রিপাঠিকেও বিদায় করেন স্টার্ক।
শুরুর ধাক্কা আর সামলে উঠতে পারেনি হায়দরাবাদ। নিয়মিতই উইকেট হারায় তারা। নিজের পরপর দুই ওভারে এইডেন মারক্রাম ও হেডের ইমপ্যাক্ট বদলি আব্দুল সামাদকে ফেরান রাসেল। হাইনরিখ ক্লসেন ও নিতিশ কুমারকে বিদায় করেন হার্শিত রানা। ৯০ রানেই ৮ উইকেট হারানো হায়দরাবাদ অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের সর্বোচ্চ ২৪ রানের সুবাদে কোনোমতে ছাড়াতে পারে একশ। স্টার্ক ১০ রানে কামিন্সের ক্যাচ না ফেললে লক্ষ্য হতে পারত আরও ছোট।
কলকাতার হয়ে ছয় জন বোলিং করে প্রত্যেকেই পান উইকেটের স্বাদ। ৪ ওভারে ১৬ রানে একটি উইকেট নেওয়া সুনিল নারাইন রান তাড়ায় মুখোমুখি প্রথম বলে বিশাল ছক্কা মারেন কামিন্সকে। পরের বলেই অবশ্য ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।
তিনে নেমে ভেঙ্কাটেশ মুখোমুখি প্রথম তিন বলে দুটি ছক্কা ও একটি চার মারেন ভুবনেশ্বর কুমারকে। দ্বিতীয় উইকেটে রাহমানউল্লাহ গুরবাজের সঙ্গে ৪৫ বলে ৯১ রানের বিস্ফোরক জুটিতে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নেন তিনি। জয় থেকে ১২ রান দূরে থাকতে বিদায় নেন আফগান ব্যাটসম্যান গুরবাজ (৩২ বলে ৩৯)। অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ারের সঙ্গে বাকিটা সারেন ভেঙ্কাটেশ, ঠিক প্রথম কোয়ালিফায়ারের মতো। ভেঙ্কাটেশ জয়সূচক রান নেওয়ার পরই ডাগআউট থেকে মাঠে ছুটে যান কলকাতার ক্রিকেটাররা। মেতে ওঠেন তারা আনন্দ-উল্লাসে। স্ট্যান্ডে উচ্ছ্বসিত দেখা যায় ফ্র্যাঞ্চাইজিটির মালিকদের একজন, বলিউড তারকা শাহরুখ খানকে।
পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থেকে প্রাথমিক পর্ব শেষ করেছিল কলকাতা। মুকুট জিতেই তারা শেষ করল অভিযান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
সানরাইজার্স হায়দরাবাদ: ১৮.৩ ওভারে ১১৩ (আভিষেক ২, হেড ০, ত্রিপাঠি ৯, মারক্রাম ২০, নিতিশ ১৩, ক্লসেন ১৬, শাহবাজ ৮, সামাদ ৪, কামিন্স ২৪, উনাদকাট ৪, ভুবনেশ্বর ০*; স্টার্ক ৩-০-১৪-২, আরোরা ৩-০-২৪-১, রানা ৪-১-২৪-২, নারাইন ৪-০-১৬-১, রাসেল ২.৩-০-১৯-৩, ভারুন ২-০-৯-১)
কলকাতা নাইট রাইডার্স: ১০.৩ ওভারে ১১৪/২ (গুরবাজ ৩৯, নারাইন ৬, ভেঙ্কাটেশ ৫২*, শ্রেয়াস ৬*; ভুবনেশ্বর ২-০-২৫-০, কামিন্স ২-০-১৮-১, নাটারাজান ২-০-২৯-০, শাহবাজ ২.৩-০-২২-১, উনাদকাট ১-০-৯-০, মারক্রাম ১-০-৫-০)
ফল: কলকাতা নাইট রাইডার্স ৮ উইকেটে জিতে চ্যাম্পিয়ন
ম্যান অব দা ফাইনাল: মিচেল স্টার্ক
ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট: সুনিল নারাইন