‘কে বলেছে চোখের জন্য সমস্যা হচ্ছে?’: সাকিব আল হাসান
চোখের সমস্যায় মাঠে ব্যাটিংটাই ঠিকঠাক করতে পারছেন না সাকিব। তাই বেশিরভাগ প্রশ্নই হলো তার চোখ ও ব্যাটিং ঘিরে। কখনও মজা করে তা উড়িয়ে দিলেন সাকিব। কখনও আবার বোঝানোর চেষ্টা করলেন সমস্যা। তার কথায় যা ফুটে উঠল, নিজেও জানেন না সমস্যা কোথায়!
সাকিবের আলোচিত সংবাদ সম্মেলন সবটুকুই তুলে ধরা হলো এখানে।
কেমন আছেন?
সাকিব আল হাসান: ভালো আছি, আলহামদুলিল্লাহ।
চোখের অবস্থা এখন কেমন?
সাকিব: ভালো আছে।
চোখের কারণে ব্যাটিংয়ে আপনার একটু সমস্যা হচ্ছিল। এখন কি স্বস্তি বেড়েছে?
সাকিব: আপনাকে কে বলছে চোখের জন্য সমস্যা হচ্ছে? (হাসি)
গত ম্যাচের পর সোহান (রংপুর অধিনায়ক) বলেছিলেন, আপনাকে অনুরোধ করবেন সংবাদ সম্মেলনে আসার জন্য…
সাকিব: অনুরোধ করেনি, অর্ডার দিয়েছে (হাসি)… অধিনায়ক অর্ডার দিয়েছে, চলে এসেছি।
সার্বিক পরিস্থিতির কথা যদি বলা হয়, গত দুই ম্যাচে ব্যাটিংয়ে নামেননি। আজকে চার নম্বরে নেমেছেন। ব্যাটিংয়ে স্বস্তিটা কি বেড়েছে?
সাকিব: এটা তো বলা মুশকিল। আসলে রান যত করব, তত কমফোর্ট লেভেলটা বাড়বে। রান যতক্ষণ না করছি, ততক্ষণ ওই ছন্দও আসবে না, কমফোর্ট জোনটাও থাকবে না। এটা খুব স্বাভাবিক।
কোনো হতাশা আছে? ব্যাটিং করতে না পারা নিয়ে?
সাকিব: না!
আজকে ব্যাটিংয়ে নামার পর যেভাবে আউট হলেন… পরে দেখলেন রিভিউ নেওয়ার সময়ও চলে গেছে। তখন কি খারাপ লাগা কাজ করছিল যে, দুই ম্যাচ পর ব্যাটিংয়ে নামলেন কিন্তু…
সাকিব: বুঝলাম যে, খারাপ সময়ে সবই খারাপ যায় (হাসি)।
দেশের দুই কোচ, সোহেল (ইসলাম) ও (মোহাম্মদ) সালাউদ্দিন আপনার সঙ্গে কাজ করেছেন। আপনার চোখের একটা বাজে সময় যাচ্ছে…
সাকিব: চোখের বাজে সময় যাচ্ছে…?
মানে আপনার একটা খারাপ সময় যাচ্ছে, দুই কোচকে পাশে পেয়ে কেমন লেগেছে? বিশেষ করে সালাউদ্দিন, আপনার ছোটবেলার কোচ…
সাকিব: সবাই চেষ্টা করছে সাহায্য করার। যাতে করে আমি যে সমস্যাটা মোকাবিলা করছি, সেই সমস্যাটা যেন উতরে যেতে পারি।
সালাউদ্দিন বলেছেন, আপনি যদি ব্যাটিংয়ে স্বাচ্ছ্যন্দবোধ না করেন, ব্যাটিংয়ে ফিরতে না পারেন, তাহলে আর ক্রিকেটই খেলবেন না। আপনার কি ভাবনা?
সাকিব: আমার এখন পর্যন্ত কোনো ভাবনা নেই। চেষ্টা করছি। আগে চেষ্টা শেষ করে নেই। পরেরটা পরে দেখব।
আপনি মূলত একজন অলরাউন্ডার। কিন্তু শেষ কয়েক ম্যাচে বিশেষজ্ঞ বোলার হিসেবেই মূলত খেলেছেন। একজন অলরাউন্ডারের জায়গা থেকে শুধু বোলার হিসেবে খেলা এবং দলের জন্য অবদান রাখা, এটার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া কতটা কঠিন?
সাকিব: জিনিসটা হচ্ছে জীবনে কখনও এরকম করিনি যে, শুধু একটা সাইড (বোলিং) দিয়ে খেলতে হচ্ছে। এবারই প্রথম। অবশ্যই রংপুরের জন্য আমার ‘ফিল’ হচ্ছে, কারণ তারা আমাকে যে আশা নিয়ে দলে নিয়েছে, তার অর্ধেক করতে পারছি, অর্ধেক পারছি না।
তারপরও তারা আমাকে যেভাবে সহযোগিতা করছে, সেজন্য তাদের ধন্যবাদ অবশ্যই দিতে হয়। এরকম একটা ফ্র্যাঞ্চাইজিতে খেলতে পেরে আমি খুবই গর্বিত। কারণ তারা যেভাবে এই সময়ে আমার যত্ন নিয়েছে, আমার পরিস্থিতি যেভাবে বুঝে ও হ্যান্ডেল করেছে, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা ছাড়া আমার আর কিছু বলার নেই।
বিপিএল শেষ হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ শুরু। আপনি এখন টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক আছে, টেস্টেও অধিনায়ক আছেন। (ওয়ানডেতেও অধিনায়ক সাকিব) আপনার এখন যে অবস্থা, ব্যাটিংয়েও যেহেতু সমস্যা হচ্ছে, বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলা কতটা চ্যালেঞ্জিং?
সাকিব: এটা আসলে সময়ই বলে দেবে। টুর্নামেন্ট এখনও আছে। দেখি কী অবস্থা দাঁড়ায়। আর অফিসিয়ালদের সঙ্গে কথা হবে। এরপর আসলে সিদ্ধান্তটা হবে।
আপনার চোখের বর্তমান যে অবস্থা, আপনি কতটা আত্মবিশ্বাসী এই টুর্নামেন্টে আপনার ব্যাটিংটা আগের অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে?
সাকিব: জানি না। আমার কোনো ধারণা নেই এটা কখন ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আর এই যে বারবার চোখ, চোখ … চোখের কথা বলছেন, চোখে কোনো সমস্যা নেই। আপনি চশমা পরে যেটা দেখেন, আমি চশমা না পরে এর থেকে ভালো দেখি। ওই পরীক্ষায় কোনো সমস্যা নেই। কী সমস্যা আছে, সেটা খোঁজার চেষ্টা করছি এখনও।
সিঙ্গাপুর গিয়েও কি পাননি সমস্যাটা?
সাকিব: সিঙ্গাপুরে তো চোখ দেখিয়েছি, শরীর দেখিয়েছি… (হাসি)।
সমস্যাটা আসলে কোথায় হচ্ছে?
সাকিব: এটাই তো আমি খুঁজতেছি যে, সমস্যাটা কোথায় হচ্ছে। এটা আমি বের করার চেষ্টা করছি। বাকিরাও চেষ্টা করছে।
বলা হচ্ছে চাপের কারণে আপনার এই সমস্যা হচ্ছে…
সাকিব: কোন বিজ্ঞ এই কথা বলেছে?
চিকিৎসকদের কথাই আর কী…
সাকিব: কোন চিকিৎসক?
বিসিবি আপনার অবস্থা জানিয়ে একটি আনুষ্ঠানিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল…
সাকিব: ওহ আচ্ছা! বিসিবি দিয়েছিল?
সেখানে বলা হয়েছে, আপনার যে সমস্যা, এটা কনজারভেটিভ পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হবে।আর এজন্য আপনার মানসিক চাপ ও ক্লান্তি কমাতে হবে। এর মানে তো হলো, চাপের একটা প্রভাব আছে।
সাকিব: জ্বী.. সেটা তারা বলছে…?
এখন তো আপনি বারবার (ব্যাটিং ঠিক করার) চেষ্টা করছেন। এটা কি চাপ উল্টো বাড়িয়ে দিচ্ছে কিনা?
সাকিব: এটা একটা ভালো প্রশ্ন যে, চাপ বেড়ে যাচ্ছে কি না! মাঝেমাঝে আমারও চিন্তা হয় যে, এটা করলে কি বেশি হচ্ছে? নাকি এটা করা ঠিক হবে! এখন এটা কিভাবে বের করব? আপনি বলেন তো, কিভাবে করা উচিত? (হাসি) এখনও কনফিউজড এটা নিয়ে।
এটা কি অনেকটা ট্রায়াল এন্ড এরর-এর মতো হচ্ছে যে, চেক করে দেখি কাজ হয় কি না?
সাকিব: হ্যাঁ…এখন তো আপনি চেষ্টা করে যদি ঘরে বসে থাকেন… তারপরে এলেন যে, চেষ্টাই করলাম না! সেটা তো কোনো কিছু হলো না।
বিশ্বকাপের আগে আপনি বলেছিলেন, ওয়ানডের অধিনায়কত্ব সাময়িকভাবে নিয়েছেন। এখন শ্রীলঙ্কা সিরিজ সামনে। একটা সিদ্ধান্তে তো আসতে হবে। আপনি কি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কি? তিন সংস্করণেই অধিনায়কত্ব চালিয়ে যাবেন?
সাকিব: বোর্ডের সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এখনও কোনো আলাপ হয়েছে ?
সাকিব: না, এখন পর্যন্ত এটা নিয়ে কোনো আলাপ হয়নি।
আপনি ব্যাটিংটা যেহেতু করতে পারছেন না, আগের ম্যাচে সাত নম্বরেও নামেননি। তার আগের ম্যাচে ১১ নম্বরে ছিলেন। এজন্য বোলিংয়ে কি বাড়তি চাপ কাজ করছে যে, ভালো করতে হবে?
সাকিব: বোলিংটা কি খুব ভালো হচ্ছে? (হাসি) আচ্ছা, যাক… আলহামদুলিল্লাহ।
ব্যাটিং না করায়ই কি বোলিংটা বেশি ভালো হচ্ছে?
সাকিব: না না… এই উইকেটে আসলে সব স্পিনারই ভালো বল করছে। আমি যদি বেশি খারাপ করি, দেখতেও তো খারাপ লাগে (হাসি)। ওই কারণে একটু ভালো করার চেষ্টা করেছি। কারণ এখানে সব স্পিনার ভালো করছে। যে বল করে, সে-ই। তানভির কালকে ৪ উইকেট পেল। আজকে তাইজুল ভালো বল করেছে। আমাদের শেখ মেহেদি ভালো করেছে, নাবি ভালো করেছে।
এখন আমি যদি খারাপ বোলিং করি, দেখতে কেমন লাগে না? (হাসি) একটা রেপুটেশন তো আছে। হাহাহা…। এ কারণেই একটু চেষ্টা করছি ভালো করার (হাসি)।
সিলেট পর্বের শুরুর দিকে আপনি বোলিংয়ে এলে চিত্রটা কেমন ছিল, সেদিকে না যাওয়া যাক (গ্যালারি থেকে ‘ভুয়া ভুয়া’ চিৎকার শোনা গেছে)। তবে শেষটা যেভাবে হলো… আপনাকে দেখে সবাই ‘সাকিব’ ‘সাকিব’ করল… এই যে কঠিন সময় থেকে বেরিয়ে…
সাকিব: এটা একটা ইন্টারেস্টিং বিষয়। আমি ওদের যখন ‘ভুয়া ‘ভুয়া!’ করলাম, ওরা সবাই খুশি হয়ে গেল! তারপরে দেখি সবাই আমার পক্ষে কথা বলছে। আমি বুঝলাম না আসলে ঘটনাটা কী! (জোরে হাসি)
বিপিএলে দেশি ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স আপনি কিভাবে বিশ্লেষণ করবেন?
সাকিব: আমার কাছে মনে হয় ,এটা নিয়ে আলোচনা না করাই ভালো। সবাই যখন জাতীয় দলের হয়ে খেলবে… সবাই যার যার জায়গাতেই আছে। আমি মনে করি, ভালো অবস্থায়ই আছে। বিপিএল একটা কঠিন টুর্নামেন্ট। এবারের পিচগুলোও খুব আদর্শ না। গতবার পিচ ও কন্ডিশন দুটোই ভালো ছিল এবং অনেক রান হচ্ছিল। যেটা আসলে এবার হচ্ছে না।
স্বাভাবিকভাবেই জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা বেশি খেলতে খেলতে অনেক সময় একটু রিল্যাক্সড হয়ে যায়। এরকম একটা টুর্নামেন্টে হয়তো সময় নিচ্ছে। এখান থেকে বিল্ড আপ করে হয়তো বিশ্বকাপে দল ভালো করবে। আমার মনে হয় না, এটা নিয়ে হতাশ বা দুশ্চিন্তার কিছু আছে। আমি নিশ্চিত যারা দলে থাকবে, যার যার জায়গা থেকে ভালোই করবে।
দল হিসেবে গত এক-দেড়-বছর টি-টোয়েন্টিতে ভালো করছি। এ বছর যেহেতু বিশ্বকাপ আছে, আমি আশা করব সবাই যেন ভালো করে। একই সঙ্গে টেস্টেও আমাদের শুরুটা ভালো হয়েছে। কার সঙ্গে যেন জিতলাম? নিউ জিল্যান্ডের সাথে জিতলাম। আমাদের শুরুটা ভালো হয়েছে।
এ বছর যেহেতু অনেক টেস্ট ম্যাচ আছে, সবাই যেন সেটা ভালোভাবে খেলতে পারে। বেশ কয়েকটা ম্যাচ যদি জিততে পারি, আমাদের জন্য খুবই ভালো হবে। যেহেতু এই বছর অনেক খেলা আছে… ১২-১৪টার মতো টেস্ট ম্যাচ। স্বাভাবিকভাবে আমাদের জন্য ভালো সুযোগ টেস্টে আমাদের একটা পয়েন্ট প্রমাণ করার।