অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের নতুন রাজা ইয়ানিক সিনার
প্রথমবার কোনো গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে উঠেই বাজিমাত করলেন ২২ বছর বয়সী ইয়ানিক সিনার।
প্রথম দুই সেটে কোনো লড়াই-ই করতে পারলেন না ইয়ানিক সিনার। দাপুটে পারফরম্যান্সে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের মুকুট মাথায় তোলার স্বপ্ন তখন খেলা করতে শুরু করেছে দানিল মেদভেদেভের চোখে-মুখে। পিছিয়ে পড়ে ফিরে আসার রোমাঞ্চকর উপহাসের পটভূমি এঁকে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শিরোপা নিজের করেন নিলেন ইতালির ২২ বছরের টগবগে তরুণ ইয়ানিক সিনার। তখন কে জানত, ‘অনভিজ্ঞ’ সিনার এভাবে লিখবেন প্রত্যাবর্তনের মহাকাব্য! অবিশ্বাস্য দৃঢ়তায় ঘুরে দাঁড়ালেন তিনি। একটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী এবং আগে দুইবারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালিস্টকে হারিয়ে পরলেন শ্রেষ্টত্বের মুকুট। রাশিয়ার দানিল মেদভেদেভকে তাই তৃতীয়বার ভগ্ন মনেই ছাড়তে হলো অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালের মঞ্চ।
মেলবোর্ন পার্কের রড লেভার অ্যারেনায় ৬-৩ গেমে প্রথম দুই সেট জিতে নেন মেদভেদেভ। এর পর আড়মোড়া ভাঙেন সিনার। লেখেন ফিরে আসার গল্প। ৬-৪ গেমে জিতে নেন তৃতীয়্ ও চতুর্থ সেট। শেষ সেটেও তিনি জিতে নেন ৬-৩ ব্যবধানে। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শিরোপা জেতা প্রথম ইতালিয়ান টেনিস খেলোয়াড় হলেন সিনার।
ইতিহাস পুনরাবৃত্তির কী দারুণ সম্ভাবনা ছিল মেদভেদেভের হাতে। ১৮ বছর পর আরেকবার কোনো রাশিয়ানের হাতে উঠতে পারতো অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শিরোপা। স্বদেশী মারাত সাফিনের পথ ধরে দুবার ফাইনাল হারের ক্ষতে প্রলেপ লাগাতে পারতেন শিরোপা জেতার উচ্ছ্বাস দিয়ে।
২০০৬ থেকে শুরু করে গত ১৭ বছরে কেবল একবারই আধুনিক টেনিসের তিন কিংবদন্তি ফেদেরার-নাদাল-জকোভিচের হাতের ছোঁয়া পায়নি অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শিরোপা। ২০১৪ সালে স্তান ভাভরিঙ্কা এ শিরোপা জেতেন নাদালকে হারিয়ে। এ ছাড়া প্রত্যেক বছরই এ তিনজনের কারও হাতেই উঠেছে রুপালী ট্রফিটি। সবশেষ র্যাংকিংয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ বাছাই ফাইনাল খেলেন ২০০৫ সালে। স্বাগতিক লেটন হিউইটকে হারিয়ে সে বছর শিরোপা জেতেন রাশিয়ার মারাত সাফিন। ওই বছর তিনিও ছিলেন তৃতীয় বাছাই। শিরোপা জেতার আগে দুবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের রানার আপ হয়েছিলেন সাফিন।
চতুর্থ বাছাই সিনার এবারই প্রথম খেলেন কোনো গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনাল। এবারের আসরে সেমির আগে হারেননি কোনো সেট। সেমিতে পরাস্ত করেছেন কিংবদন্তি নোভাক জকোভিচকে। শুধু হারাননি, জকোভিচের কাছ থেকে কুড়িয়েছেন ভূয়সী প্রশংসা। কেন জকোভিচ প্রশংসা করেছিলেন এ তরুণের তা দুর্দান্তভাবে ফিরে এসে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয়ের মধ্য দিয়েই প্রমাণ করলেন ইয়ানিক সিনার।
টেনিস ইতিহাসে কোনো গ্র্যান্ড স্ল্যামে চ্যাম্পিয়ন হওয়া ইতালির তৃতীয় পুরুষ খেলোয়াড় তিনি। এর আগে নিকোলা পিয়েত্রাঙ্গেলি দুবার ফ্রেঞ্চ ওপেন জেতেন ১৯৫৯ ও ১৯৬০ সালে। ১৯৭৫ সালে আদ্রিয়ানো পানাত্তা জিতেছিলেন ফ্রেঞ্চ ওপেন। ৪৯ বছর পর সিনারের হাতি দিয়েই ইতালির কোনো খেলোয়াড় গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা উঁচিয়ে ধরলেন।