খেলার মাঠে সবার আগে
Nsports-logo

শনিবার, ২৭শে জুলাই ২০২৪

হায়দরাবাদ টেস্টে দুর্দান্ত এক জয় পেল ইংল্যান্ড

ব্রিজবেন থেকে হায়দরাবাদ- বিশ্বের দুই প্রান্তে একই দিনে অসাধারণ দুটি টেস্ট ম্যাচের সমাপ্তি দেখল ক্রিকেট বিশ্ব। ঘরের মাঠে গত এক যুগ ধরে যারা কোনো টেস্ট সিরিজ হারেনি, সেই ভারতকে ২৮ রানে হারিয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেল ইংল্যান্ড।

দুই দলের প্রথম ইনিংস শেষ হওয়ার পর এই টেস্টে একটি দলকেই সম্ভাব্য বিজয়ী বলে ধরে নিয়েছিলেন সবাই। ১৯০ রানে পিছিয়ে থাকার পর ইংল্যান্ড আর কীভাবে জেতে! দেশের মাটিতে প্রথম ইনিংসে ১৫০ রান বা এর বেশি রানে এগিয়ে থাকা টেস্টে যে এর আগে কখনোই হারেনি ভারত। সব মিলিয়েই তো হেরেছে মাত্র একবার।

কিন্তু খেলাটা যখন ক্রিকেট, বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেট; সব সময় কি সেটি পরিসংখ্যানের আলোকে এগোবে! বিশেষ করে একটা দলের নাম যেখানে ইংল্যান্ড, টেস্ট ক্রিকেটের ব্যাকরণ যারা নতুন করে লিখছে। দ্বিতীয় ইনিংসে ওলি পোপের ১৯৬ রানে ইংল্যান্ড অলআউট হয়ে যাওয়ার আগে করে ফেলেছে ৪২০ রান। জয়ের জন্য ভারতের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৩১ রান।

১১৯ রানে ৭ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ইংল্যান্ডের জয় যখন শুধুই সময়ের ব্যাপার বলে মনে হচ্ছে, ভরত–অশ্বিনের অষ্টম উইকেট জুটিতে জমে উঠেছিল ম্যাচ। ৫৭ রানের জুটিটি অবশ্য ভেঙে গেছে দিনের নির্ধারিত ওভার শেষ হওয়ার আগেই। প্রথমে আউট হলেন ভরত, এর পরপরই অশ্বিন। ৯ উইকেট পড়ে যাওয়ায় আম্পায়াররা আধঘণ্টা সময় বাড়িয়ে দেন। শেষ দুই ব্যাটসম্যান বুমরা ও সিরাজ মিলে সেটিও প্রায় পার করে দিচ্ছিলেন। কমিয়ে আনছিলেন জয়ের সঙ্গে দূরত্বও। কিন্তু দিনের শেষ ওভারে আর ধৈর্য হারিয়ে ফেলে ডাউন দ্য উইকেট খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হয়ে গেলেন সিরাজ।

ব্রিসবেনে দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা শামার জোসেফ ৭ উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের নায়ক, এখানেও ইংল্যান্ডের এক বোলারের ৭ উইকেট। ব্রিসবেনে সপ্তম উইকেট নিয়ে টেস্ট ম্যাচ শেষ করে দিয়েছেন জোসেফ, হায়দরাবাদে তা করেছেন অভিষিক্ত বাঁহাতি স্পিনার টম হার্টলি।

ইংল্যান্ডের অধিনায়ক বেন স্টোকস যেন ভারতের অস্ত্রেই ভারতকে বধ করতে চেয়েছেন। প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট নেওয়া পার্টটাইম স্পিনার জো রুটকে দিয়ে বোলিং উদ্বোধন করান তিনি। অন্য প্রান্তে ফাস্ট বোলার মার্ক উডকে বল দিলেও এক ওভার পর তাঁকে সরিয়ে আনেন বাঁহাতি স্পিনার হার্টলিকে।

দুই প্রান্ত থেকে স্পিন আক্রমণের বিপক্ষে রোহিত শর্মা ইতিবাচক থাকলেও প্রথম ইনিংসের মতো ঝড় তুলতে পারেননি যশস্বী জয়সোয়াল। দলের ৪২ রানে আউট হয়ে ফেরেন প্রথম ইনিংসে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ৭৪ বলে ৮০ রান করা এই ওপেনার।

একই স্কোরে ফিরে যান শুবমান গিলও। অধিনায়ক রোহিত ৩৯ রান করে আউট হন দলের ৬৩ রানে। হার্টলিকে সামলাতে বাঁহাতি অক্ষর প্যাটেলকে পাঁচ নম্বরে পাঠিয়ে দেয় ভারত, তবে তাতে কাজ হয়নি। চা-বিরতির ঠিক পরের ওভারেই আউট হয়ে যান অক্ষর। ভারতের প্রথম ৪টি উইকেটই নেন হার্টলি।

পরের দুটি উইকেট রুট ও ও হাঁটুর চোটে ভোগা জ্যাক লিচের। আর রবীন্দ্র জাদেজা ফিরেছেন বেন স্টোকসের অবিশ্বাস্য ফিল্ডিংয়ে রানআউট হয়ে। মিড অনে বল পাঠিয়ে রান নিতে গিয়েছিলেন জাদেজা, উল্টো ঘুরে পড়ে যাওয়ার আগে সরাসরি থ্রোয়ে নন স্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্প ভাঙেন স্টোকস। ১১৯ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলার পরই শিখর ভরত ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ওই প্রতিরোধ।

এই জুটিটিও ভেঙেছেন হার্টলি। অসাধারণ এক ডেলিভারিতে তিনি ফেরান ৫৯ বলে ২৮ রান করা ভরতকে। ২৮ রান করে হার্টলির বলেই স্টাম্পড ফেরেন অশ্বিনও।

শেষের নায়ক টম হার্টলি। তবে ম্যাচটা তো ঘুরিয়ে দিয়েছেন আসলে ওলি পোপ। ইংল্যান্ডের শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হয়েছেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট দ্বিশতক থেকে মাত্র ৪ রান দূরে থাকতে। অথচ তাঁর দ্বিশতক পাওয়ার জন্য চোট নিয়েও লিচ মাঠে নেমেছিলেন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। রিভার্স স্কুপ খেলতে গিয়ে যসপ্রীত বুমরার বলে বোল্ড হয়ে যাওয়ার সময় ভারতীয় খেলোয়াড়রাও পোপকে অভিনন্দন না জানিয়ে পারেননি। ভারতের মাটিতে কোনো সফরকারী ব্যাটসম্যানের অন্যতম সেরা ইনিংসের পর তা পারাও যায় না।

রিভার্স স্কুপ করতে গিয়ে দ্বিশতক মিস করলে যেকোনো ব্যাটসম্যানেরই আক্ষেপ হওয়ার কথা। যদিও পোপকে দেখে তা বোঝার উপায় ছিল না। এই ইংল্যান্ড দলের দর্শনটাই যে অন্যরকম। যে কারণে বড় একটা মাইলফলকের সামনে থেকেও অমন একটা শট খেলা যায়! যে শট আসলে ইনিংস জুড়েই খেলেছেন পোপ। ভারতীয় স্পিনারদের লেংথও এলোমেলো হয়ে গেছে এতেই। পোপের ১৯৬ ভারতের মাটিতে দ্বিতীয় ইনিংসে সফরকারী কোনো ব্যাটসম্যানের চতুর্থ সর্বোচ্চ স্কোর। গত ১৪ বছরে সর্বোচ্চ। সর্বশেষ ২০১০ সালে যা করেছিলেন ইংল্যান্ডের এই দলের কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। সেই ২২৫–ও ছিল এই হায়দরাবাদেই।

বোলিং বীরত্বের আগে ব্যাটিংয়েও অবদান রেখেছেন হার্টলি। করেছেন ৩৪ রান। রানের চেয়ে বড় অবশ্য ৮০ রানে অষ্টম উইকেট জুটিতে পোপকে সঙ্গ দেওয়া।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২৪৬

ভারত ১ম ইনিংস: ৪৩৬

ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: ১০২.১ ওভারে ৪২০ (আগের দিন ৩১৬/৬) (পোপ ১৯৬, রেহান ২৮, হার্টলি ৩৪, উড ০, লিচ ০*; বুমরাহ ১৬.১-৪-৪১-৪, অশ্বিন ২৯-৪-১২৬-৩, আকসার ১৬-২-৭৪-১, জাদেজা ৩৪-১-১৩১-২, সিরাজ ৭-১-২২-০)

ভারত ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ২৩১) ৬৯.২ ওভারে ২০২ (রোহিত ৩৯, জয়সওয়াল ১৫, গিল ০, রাহুল ২২, আকসার ১৭, শ্রেয়াস ১৩, জাদেজা ২, ভারত ২৮, অশ্বিন ২৮, বুমরাহ ৬*, সিরাজ ১২; রুট ১৯-৩-৪১-১, উড ৮-১-১৫-০, হার্টলি ২৬.২-৫-৬২-৭, লিচ ১০-১-৩৩-১, রেহান ৬-০-৩৩-০)

ফল: ইংল্যান্ড ২৮ রানে জয়ী

সিরিজ: ৫ ম্যাচের সিরিজে ১-০তে এগিয়ে ইংল্যান্ড

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More

Privacy & Cookies Policy