খেলার মাঠে সবার আগে
Nsports-logo

শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪

মেসির বার্সেলোনা ছাড়ার নেপথ্যে…

''Messi's Autobiography" থেকে বঙ্গানুবাদ

0

৫ মাস যাবৎ সবকিছু ঠিকঠাকই ছিলো, শুধু কয়েকটা ছোটখাটো বিষয় কমপ্লিট করা বাকী ছিলো। তারপরই ঘোষণা আসতে চলেছিলো মেসির কন্ট্রাক্ট এক্সটেনশনের, বিভিন্ন সময়ে লাপোর্তার স্টেটমেন্টও বেশ পজেটিভ ছিলো৷ কিন্তু হঠাৎ করে কিছু ডাউট, কিছু অনিশ্চয়তা সামনে আসে।

জর্জের সাথে লাপোর্তার প্রথম মিটিংয়েই স্যালারীই বিষয়টা ঠিক হয়ে গেছিলো। জর্জ কোনো আবদার না করেই যা বলেছে তাতেই রাজি হয়ে গেছিলো। যদিও কম্পিটেটিভ টিম তৈরি করার একটা পরোক্ষ শর্ত মেসি আগেভাগেই দিয়েছিলো, কিন্তু সেটা পূরণ না হলেও সবকিছু ঠিকঠাক চলছিলো।

বার্সার ডিরেক্টরদের মধ্যে সবাই জানতো ক্লাবের আর্থিক সমস্যার কথা। এসবের সত্ত্বেও তারা ৫ আগস্ট মেসির এক্সটেনশনের নিউজ এনাউন্স করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। সে-রাতে একটা ডিনারও বুক করে রাখা হয়েছিলো। ক্লাবের মিডিয়া টিম এনাউন্সমেন্ট ভিডিও তৈরিতে ব্যস্ত ছিলো, তারা মোটামুটি শিওর ছিলো এবিষয়ে।

আগস্টের ৪ তারিখ, এক্সটেনশনের ঠিক আগের দিন। বার্সার স্পোর্টিং ডিরেক্টর রাফা ইয়ুস্তে জর্জ মেসিকে কল করে। জর্জ মেসি তখন গুছিয়ে নিয়েছে, গন্তব্য বার্সেলোনা। সে আগেভাগে আসার প্ল্যান করছিলো সবকিছু ঠিকঠাক চলছে কিনা দেখার জন্য। এছাড়া স্কোয়াডের ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কিছু করা যায় কিনা এই বিষয়টাও দেখার জন্য। মেসি তখন তার বার্সেলোনার বাসার পথে ছিলো।

জর্জ রাফাকে জিগ্যেস করে- “সবকিছু ঠিক আছে তো?” রাফা কেমন যেনো আবছা-আবছা, অগোছালো, অসংলগ্ন উত্তর দেয়। এমন উত্তর শুনে জর্জ আগেই ঠিক হয়ে থাকা কন্ট্রাক্ট নিয়ে তাকে আর কিচ্ছু বলেনি। সে সরাসরি মেসিকে ফোন করে এবং এবং রাফার এমন উদ্ভট আচরণের কথা জানায়।

এই ঘটনার ফলে মেসির মনের আকাশেও কালো মেঘ উঁকি দেয়। সে লাপোর্তাকে একটা মেসেজ পাঠায়৷ লাপোর্তা সবসময়ের মতোই আশার বাণী শুনিয়ে রিপ্লাই দেয়। তারপরও একটা ডাউট থেকে যায়।

এর কিছুসময় পরেই রাফা আবার জর্জকে কল করে। এরপর যেটা শোনায় তাতে জর্জের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। (সে বলে)
: লাপোর্তা জানিয়েছে ডিলটা হচ্ছে না (জর্জ হতবুদ্ধি হয়ে জিগ্যেস করে)
:ডিলটা হচ্ছে না মানে কি?
(রাফা উত্তর দেয়)
:লাপোর্তা আর এই ডিলে আগ্রহী না।

জর্জ এই কথাগুলো বিশ্বাস করতে পারছিলো না। সে লাপোর্তার কাছ থেকে সঠিক তথ্য জানতে চাচ্ছিলো। একারণে সে লাপোর্তাকে কল করে। লাপোর্তার কথা তাকে চরমভাবে আঘাত করে। লাপোর্তা বলে “আমি সেটাই করতে যাচ্ছি যেটা আমি আসলেই করতে চাই”

জর্জ কেতাদুরস্ত হয়ে ডিলটা শুধুই টাকার জন্য হচ্ছে না কিনা জিগ্যেস করে, কারণ এর আগে লাপোর্তা বলেছিলো অর্থ কোনো বাঁধা না। জর্জ জিগ্যেস করে “কন্ট্রাক্ট এখন সাইন করা না গেলে আমরা এখন কি করবো?” লাপোর্তা মুখের উপর উত্তর দেয় “আমি আর এই ডিলে কোনোভাবেই আগ্রহী না। এই চ্যাপ্টার অলরেডি শেষ। আমি আমার ক্লাবকে রিস্কে ফেলবো না” জর্জ হতভম্ব হয়ে যায়। সে সরাসরি কথা বলার জন্য লাপোর্তাকে মিটিং এ আহবান জানায়৷ এই সময়ে বার্সা কর্তৃপক্ষ ২টা মিথ্যা প্রচার করে-

১) জর্জ অলরেডি পিএসজির সাথে কন্ট্রাক্ট নিয়ে আলোচনা করেছে এবং বার্সেলোনার উপর চুক্তির জন্য প্রেশার ক্রিয়েট করেছে।
২) জর্জ আগে থেকে ঠিক হয়ে থাকা চুক্তির সাথে আরো বেশি বোনাস চেয়েছে যার কারণে লাপোর্তা তার সীদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে।

এবিষয়ে কোনো সন্দেহ নাই যে মেসি একটা কম্পিটেটিভ টিম চাচ্ছিলো। লাপোর্তা প্লেয়ার মিটিং এ কিছু প্লেয়ার সাজেস্ট করেছিলো, মেসি মাঝে মাঝে তাদের নিয়ে আসা নিয়ে খোঁজখবরও নিতো। মেসির উদ্দেশ্য ছিলো কিছু ভালো প্লেয়ার নিয়ে এসে দলটাকে আবার সেরাদের কাতারে নিয়ে যাওয়া, যার ফলে বার্সেলোনার ঝুলিতে আরো অনেক ট্রফি আসবে।

তবে মেসি এবং জর্জ, কারোরই সরাসরি শর্ত ছিলো না যে কন্ট্রাক্ট সাইন করার জন্য সেই প্লেয়ারগুলোকে আনতেই হবে। মেসির এক এবং একমাত্র ইচ্ছা ছিলো ক্লাবে থাকা। জর্জকে মেসি শুধু এই বিষয়টাকেই মুখ্য বলে জানায়, বাকী সবকিছু গৌণ।

আগস্টের ৫ তারিখ। জর্জ বার্সেলোনায় আসে লাপোর্তার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য। প্রেসিডেন্ট আবারও একই কথা বলে,
: আমি এই ডিলটা করবো না
: আপনি ভেবেচিন্তে সীদ্ধান্ত নিয়েছেন?
: আমি ভেবেচিন্তেই সীদ্ধান্তটা নিয়েছি। আমি এই ডিল করছিনা। আমি আমার ক্লাবকে বিপদের আশঙ্কার মধ্যে ফেলতে পারবো না।

লাপোর্তা সম্ভাব্য ট্রান্সফার, ফিউচার এবং নাম্বার নিয়ে বলে। বার্সেলোনা এখনো আগুয়েরো, এমারসন, এরিক, ডিপেইদের সাইন করাতে পারেনি। সাইন করানোর জন্য বার্সাকে বর্তমান স্কোয়াডের প্লেয়ারদের রাজি করাতে হবে বেতন কমাতে, এগুলো নিয়ে কথা বলে।

ওই সময়টাতে ক্লাব ইনভেস্টমেন্ট বাদ দিয়ে বেতন কাটা নিয়ে ব্যস্ত ছিলো৷ তারা মেসির কমার্শিয়াল সাকসেসের বিষয়টা আমলেই নেয়নি, মেসি যে নিজের বেতনের থেকেও বেশি অর্থ স্পন্সর এবং বিক্রি থেকে ক্লাবকে এনে দিতে পারে এই বিষয়টাকে একপ্রকার এড়িয়েই গেছে ক্লাব।

নতুন চুক্তির প্রথম বছরের ৭৫% বেতনই ছেড়ে দিতে রাজি ছিলো মেসি, সাথে সাথে পুরো ডিলের অর্ধেকও! এমনটা গোটা ট্রান্সফার উইন্ডোতে কেউ করেনি৷ মেসি এতকিছু করছিলো তার কারণ সে শুধু থাকতে চেয়েছিলো ক্লাবে। ক্লাবটা যে তার অস্ত্বিত্বের অংশ!

লাপোর্তার ওই আচরণ এবং কথাগুলার পর ডিসকাশনের সুযোগ খুব কমই ছিলো। জর্জ এবং লাপোর্তা ঠিক করে যা কিছুই হোক তারা একে অপরকে দোষ দিবে না, এইটা লাপোর্তার মিডিয়া থেকে বাঁচার জন্য একটা মাস্টারস্ট্রোক ছিলো। মিটিংটা শেষ হয় এবং তাদের মাঝে কুশল বিনিময় হয়। আর এভাবেই মেসির রূপকথার মতো সুন্দর বার্সেলোনা ক্যারিয়ারের পরিসমাপ্তি ঘটে…..

[Lionel Messi’s departure from FC Barcelona. Written by Julius Balague
(Messi’s Autobiography). Bangla Translation: Merza Hashib. Everything in this book approved by Lionel Messi Himself]

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More

Privacy & Cookies Policy