পাকিস্তানকে হারিয়ে নয় বছরের খরা কাটাল বাংলাদেশ
সর্বশেষ পাকিস্তান সফরে স্বাগতিকদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল টাইগাররা। মিরপুরের চেনা কন্ডিশনে ফিরে অবশেষে পাকিস্তানকে হারিয়ে নয় বছরের খরা কাটাল।
২০১৬ সালে এশিয়া কাপে ৫ উইকেটে জেতার পর দেশে কিংবা দেশের বাইরে টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ।
আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে চতুর্থ জয় পেল বাংলাদেশ।
কথায় আছে, শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। শ্রীলঙ্কা সফরের শুরুটা খারাপ হলেও শেষটা অবশ্য ভালোই করেছে টাইগাররা।
সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এবার পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭ উইকেটের জয় দিয়েই টি-টোয়েন্টি সিরিজে এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নয় বছরের খরা কাটাল বাংলাদেশ।
ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে অধিনায়ক লিটন বলছিলেন,
‘মিরপুরের উইকেট সম্পর্কে আমরা জানি, কারণ এখানে আমরা অনেক ম্যাচ খেলেছি। দ্বিতীয় ইনিংসে বল ভালো আসছিল, হয়তো শিশিরের কারণে। আমরা আজ দ্রুত উইকেট তুলে নিতে পেরেছিলাম।’
‘আর ক্যাচ মিস কিছুসময় হতে পারে, আবার অনেকসময় কঠিন ক্যাচ ধরবেন। আর মিরপুরে মুস্তাফিজ কেমন কাজে লাগে সেটা তো জানাই। এ ছাড়া তাসকিন, সাকিব দারুণ বল করেছে।’
-যোগ করেন তিনি।
মিরপুরে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে ভালো শুরুর আভাস দিলেও সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৯ ওভার ৩ বলে ১১০ রানের বেশি করতে পারেনি পাকিস্তান। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৪ রান করেছেন ফখর জামান।
জবাবে খেলতে নেমে ১৫ ওভার ৩ বলে ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় বাংলাদেশ।
ইনিংসের প্রথম ওভারেই সাজঘরে ফেরেন তানজিদ তামিম। ইনফর্ম এই ওপেনার ৪ বল খেলে এক রানের বেশি করতে পারেননি।
তিনে নেমে ব্যর্থ লিটন দাস। বাংলাদেশ অধিনায়কও করেছেন এক রান।
৭ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বেশ বিপাকেই পড়েছিল বাংলাদেশ।
তবে তৃতীয় উইকেট জুটিতে সেই বিপদ সামাল দেন পারভেজ ইমন ও তাওহিদ হৃদয়। এই দুজনের ৭৩ রানের জুটিতে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় বাংলাদেশ। ৩৭ বলে ৩৬ রান করেছেন হৃদয়।
হৃদয় থিতু হয়ে ফিরলেও ব্যক্তিগত ফিফটি তুলে নিয়েছেন ইমন। মাত্র ৩৪ বলে মাইলফলক ছুঁয়েছেন তিনি।
শেষ পর্যন্ত ৩৯ বলে অপরাজিত ৫৬ রান এসেছে এই ওপেনারের ব্যাট থেকে। এ ছাড়া অপরাজিত ১৫ রান করেছেন জাকের।
এর আগে বল হাতে বাংলাদেশের হয়ে ইনিংস ওপেন করেন শেখ মেহেদি। এই ডানহাতি অফ স্পিনার সদ্য সমাপ্ত শ্রীলঙ্কা সিরিজের শেষ ম্যাচে দারুণ বোলিং করেছিলেন।
লঙ্কায় যেখানে শেষ করেছিলেন আজ যেন ঠিক সেখান থেকেই শুরু করেন মেহেদি।
ইনিংসের প্রথম ওভারেই দলকে ব্রেকথ্রু এনে দিতে পারতেন তিনি। তবে তাসকিন আহমেদ সহজ ক্যাচ ফেলেছেন।
তাতে ৪ রানে জীবন পান ফখর জামান।
ফখরের ক্যাচ মিসের মাশুল দিতে অবশ্য খুব বেশি সময় নেননি তাসকিন। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে নিজের প্রথম ওভার করতে এসেই সায়িম আইয়ুবকে ফিরিয়েছেন এই পেসার। ৪ বলে ৬ রান করেছেন সায়িম।
পরের ওভারেই উইকেট পেয়েছেন মেহেদি।
তিনে নামা মোহাম্মদ হারিস এই স্পিনারকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে কাউ কর্ণারে শামীম হোসেনের হাতে ধরা পড়েন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে ৩ বলে ৪ রান করেছেন তিনি।
ইনিংসের পঞ্চম ওভারে বোলিংয়ে পরিবর্তন আনেন লিটন।
আক্রমণে এসেই ব্রেকথ্রু দিয়েছেন তানজিম সাকিব। সালমান আলি আগাকে রীতিমতো বোকা বানিয়েছেন সাকিব।
এই পেসারকে র্যাম্প স্কুপ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে লিটনের হাতে ধরা পড়েন সালমান।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভার করতে এসে উইকেট পার্টিতে যোগ দেন মুস্তাফিজুর রহমানও।
এই বাঁহাতি পেসারকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে টপ এজ হয়ে থার্ড ম্যানে ধরা রিশাদ হোসেনের হাতে ধরা পড়েন হাসান নাওয়াজ।
ডাক খেয়ে এই ব্যাটার ফেরায় ৪১ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারায় পাকিস্তান।
মিডল অর্ডারে সুবিধা করতে পারেননি মোহাম্মদ নাওয়াজও। রান আউটের শিকার হয়েছেন এই ব্যাটার।
বাকিদের ব্যর্থতার দিনে এক প্রান্ত আগলে রেখে ব্যাটিং করেছেন ফখর। ব্যক্তিগত ফিফটির পথেই ছিলেন তিনি।
তবে রান আউটের শিকার হয়ে ৪৬ রানে থামতে হয়েছে তাকে।
৭০ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর খুশদিল শাহ ও আব্বাস আফ্রিদি মিলে ৩৩ রান যোগ করেন। এই জুটি ভেঙছেন মুস্তাফিজুর রহমান।
১০৩ রানে সপ্তম উইকেট হারানো পাকিস্তান অলআউট হয়েছে ১১০ রানে। ৭ রান যোগ করতেই শেষ ৩ উইকেট হারিয়েছে তারা।
মিরপুরের আজকের উইকেটে যেন ফিরে এসেছিলেন পুরোনো মুস্তাফিজ।
তার স্লোয়ার আর কাটার পড়তে বেশ বেগ পেতে হয়েছে পাকিস্তানিদের। ৪ ওভারে মাত্র ৬ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন এই বাঁহাতি পেসার।
এ ছাড়া তাসকিন পেয়েছেন ৩ উইকেট। একটি করতে উইকেট পেয়েছেন তানজিম সাকিব ও মেহেদি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান: ১৯.৩ ওভারে ১১০ (ফখর ৪৪, আব্বাস ২২, খুশদিল ১৭; তাসকিন ৩/২২, মোস্তাফিজ ২/৬, তানজিম ১/২০, মেহেদী ১/৩৭)।
বাংলাদেশ: ১৫.৩ ওভারে ১১২/৩ (পারভেজ ৫৬*, হৃদয় ৩৬, জাকের ১৫*, তানজিদ ১, লিটন ১; মির্জা ২/২৩, আব্বাস ১/১৬)।
ফল: বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: পারভেজ হোসেন।
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে।