মৌসুম শেষে ম্যান সিটি ছাড়ছেন ডি ব্রুইনা
চলতি মৌসুম শেষে ম্যানচেষ্টার সিটির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে কেভিন ডি ব্রুইনার। তাকে নিয়ে ক্লাবটির তরফেও তেমন আগ্রহ ছিল না। নতুন করে দলটাকে পুনর্গঠন করতে চান সিটি কোচ পেপ গার্দিওলা।
গুঞ্জন ছিল ইতিহাদ ছাড়তে পারেন বেলজিয়ান ফরোয়ার্ড কেভিন ডি ব্রুইনা। যা এবার তিনি নিজেই নিশ্চিত করলেন। চলমান মৌসুম শেষে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটি ছাড়ছেন ডি ব্রুইনা।
ম্যানচেস্টার সিটির সঙ্গে তাঁর বর্তমান চুক্তি শেষ হবে এ বছরের ৩০ জুন। এরপর আর চুক্তি নবায়ন হচ্ছে না।
২০১৫ সালে জার্মান ক্লাব ভলফসবুর্গ থেকে পাঁচ কোটি ৪৫ লাখ পাউন্ডে তাকে কিনেছিল সিটিজেনরা। ইতিহাদ স্টেডিয়ামের ক্লাবটিতে বর্তমানে তার দশম মৌসুম চলছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ম্যান সিটি ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে ডি ব্রুইনা লিখেছেন,
‘শিরোনাম দেখে আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, কি কথা বলতে চাই। আমি সরাসরি জানিয়ে দিচ্ছি, কয়েকটা মাস শেষে ম্যানচেস্টার সিটি অধ্যায় শেষ হতে যাচ্ছে।’
গত ১০ বছরে সিটির হয়ে ছয়টি প্রিমিয়ার লিগ, একটি চ্যাম্পিয়নস লিগ, দু’টি এফএ কাপ ও পাঁচটি লিগ কাপ জিতেছেন তিনি।
সিদ্ধান্তটা নিতে গিয়ে ডি ব্রুইনাকে কতটা আবেগতাড়িত হতে হয়েছে, সেটাও ফুটে উঠেছে বিবৃতিতে,
‘আমরা যারা পেশাদার ফুটবলার, তারা জানি, এই দিনটা একদিন না একদিন আসবেই। সেই দিনটা আজ এসে গেছে। আর আপনাদের অধিকার আছে, সেটা সবার আগে আমার মুখ থেকেই শোনার। ফুটবলই আমাকে আপনাদের কাছে এনেছে, এই শহরে এনেছে।
স্বপ্নের পেছনে ছুটতে ছুটতে, আমি কখনো কল্পনাও করিনি এই সময়টা আমার জীবনটাই পাল্টে দেবে। এই শহর, এই ক্লাব, এই মানুষগুলো—আমাকে সব কিছু দিয়েছে। তাই আমারও সবটুকু উজাড় করে না দিয়ে কোনো উপায় ছিল না।’
৩৩ বছর বয়সী এই ফুটবলার আরও জানান,
‘আমরা একসঙ্গে সব কিছু জিতেছি। পছন্দ হোক আর না হোক, বিদায় বলার সময় এসে গেছে। সুরি, রোম, মেসন, মিশেল আর আমি—আমরা চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকব, এই শহর আমাদের পরিবারের জন্য যা কিছু করেছে তার জন্য।
“ম্যানচেস্টার” শুধু আমাদের সন্তানদের পাসপোর্টেই থাকবে না, থাকবে আমাদের হৃদয়ের গভীরে। এটাই আমাদের সব সময়ের “বাড়ি”। এই শহর, এই ক্লাব, সব কর্মী, সতীর্থ, বন্ধু ও পরিবারের প্রতি আমাদের সীমাহীন কৃতজ্ঞতা—১০ বছরের এই অসাধারণ যাত্রার জন্য।
প্রতিটি গল্পেরই একটা শেষ থাকে। আমার জীবনের এই অধ্যায়টা নিঃসন্দেহে সবচেয়ে সেরা। আসুন, বাকি সময়টুকু আমরা একসঙ্গে উপভোগ করি! অসংখ্য ভালোবাসা, কেডিবি।’
সিটির হয়ে এই মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৩১ ম্যাচ খেলেছেন ডি ব্রুইনা। গোল করেছেন ৪টি, করিয়েছেন আরও ৭টি।
তাঁর ক্যারিয়ার গ্রাফের সঙ্গে পর্যালোচনা করলে যা নিতান্তই সাদামাটা। চোট তাঁকে সাম্প্রতিককালে বেশ ভুগিয়েছে।
ইতিহাদে ১০ বছরের ক্যারিয়ারে ডি ব্রুইনা নিজেকে ক্লাবটির ইতিহাসেই অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসেও অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার মনে করা হয় তাঁকে।
সব মিলিয়ে ম্যান সিটির হয়ে ৪১৩ ম্যাচে ১০৬ গোল করেন ডি ব্রুইনা। এ ছাড়াও গোল করিয়েছেন ১৭৪টি।
আনুষ্ঠানিক এক বিবৃতিতে সিটি বলেছে,
‘এই গ্রীষ্মে কেভিন ডি ব্রুইনার চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে ম্যানচেস্টার সিটি তাকে আবেগঘন বিদায় জানাবে, শেষ হবে এই ক্লাবে তার ১০ বছরের উজ্জ্বল এক অধ্যায়। ক্লাব ও আমাদের সব ভক্তরা মিলে এখন প্রিমিয়ার লিগের সর্বকালের সেরাদের একজনকে যথাযথ শ্রদ্ধা এবং বিদায় জানানোর প্রস্তুতি নেবে।’
এক সংবাদ সম্মেলনে সিটি কোচ পেপ গার্দিওলা বলেছেন,
‘ডি ব্রুইনা এই ক্লাব-পরিবারের অংশ। আমাদের জন্য এটা খুব কঠিন এক দিন। কারণ, আমাদের একটা অংশ আমাদের ছেড়ে যাবে। এই দেশে খেলা ইতিহাসের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার সে, ম্যানচেস্টার সিটির তো অবশ্যই।’
ডি ব্রুইনার বিদায় স্মরণীয় করতে চান গার্দিওলা,
‘এখনও আমাদের ১০ ম্যাচ বাকি, আশা করি ১১টি। ছয় ম্যাচ হোমে, আমাদের ভক্তদের সঙ্গে আমরা যেন উপভোগ করতে পারি। আমি নিশ্চিত সে ভালোবাসা পাবে এবং প্রাপ্য সম্মান পাবে।’
সিটিতে ডি ব্রুইনার ভাস্কর্য হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন গার্দিওলা।
ম্যান সিটি ছেড়ে কোথায় যাবেন ডি ব্রুইনা, তা এখনও নিশ্চিত নয়। গুঞ্জন আছে, যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ বা সৌদি আরবের সৌদি প্রো লিগে যেতে পারেন তিনি।