বিশ্বকাপ ও অলিম্পিক সামনে রেখেও ‘এক কোচ সব দল’ তত্ত্বেই বিশ্বাসী বাফুফে
প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপে খেলবে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল।
এশিয়া কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে পারলে ২০২৭ সালের বিশ্বকাপে এবং ২০২৮ সালের লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিকে খেলার সুযোগ রয়েছে তাদের।
অপার সম্ভাবনা থাকলেও বাফুফে আগের মতোই ‘এক কোচ সব দল’ তত্ত্বেই নারী ফুটবলের একাধিক দল পরিচালনা করতে চায়।
১১ জুলাই, শুক্রবার থেকে বসুন্ধরার কিংস অ্যারেনায় শুরু হচ্ছে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী টুর্নামেন্ট।
১১-২১ জুলাই এই টুর্নামেন্ট শেষ হতেই আবার ২-১০ আগস্ট লাওস থাকতে হবে এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ টুর্নামেন্টের বাছাইয়ে অংশগ্রহণ করতে।
সেই লাওস থেকে ফিরে ভুটানে ২০-৩১ আগস্ট সাফ অনূর্ধ্ব-১৭ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ। সেপ্টেম্বরে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্টের বাছাই।
ফলে জাতীয় দলের হেড কোচ পিটার বাটলারকে আগামী দুই মাস বয়স ভিত্তিক দল নিয়েই ব্যস্ত সময় কাটাতে হচ্ছে। যা জাতীয় দলের পরিকল্পনা ও অনুশীলনে স্বাভাবিকভাবেই ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
সাফ অনূর্ধ্ব-২০ টুর্নামেন্টের আগে আজ সাংবাদিক সম্মেলনে ঘুরে ফিরে পূর্বের ন্যয় একই কোচ একাধিক দল পরিচালনার বিষয়টি এসেছে।
বাফুফের নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ অবশ্য আগের মতোই ‘এক কোচ সব দল’ তত্ত্বে বিশ্বাসী।
তিনি বলেছেন,
‘আগে একজন হেড কোচের অধীনেই সকল নারী দল পরিচালিত হতো। এতে আমাদের কোনো অসুবিধা হয়নি। একটা সামঞ্জস্য ছিল, এখনও আমরা সেটাই অনুসরণ করছি। পিটার সিনিয়র দল নিয়ে বাইরে থাকলেও তার ডিজাইনেই দেশীয় কোচরা অনূর্ধ্ব-২০ দলকে কোচিং করিয়েছে। আবার এখন সে অনূর্ধ্ব-২০ দলে কোচিং করাচ্ছে। সিনিয়ররা তার কোচিংয়েই অনুশীলনে থাকবে।’
গোলাম রব্বানী ছোটন ও পল স্মলি অনূর্ধ্ব-১৫ থেকে শুরু করে জাতীয় দলে অনুশীলন করাতেন। এক সঙ্গে একাধিক দলের অনুশীলন করিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল তখন দক্ষিণ এশিয়ার গন্ডিতে সীমাবদ্ধ ছিল। এখন এশিয়ান মঞ্চে।
দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, চীনের মতো দলগুলোর সঙ্গে লড়াই করে বিশ্বকাপ ও অলিম্পিকের সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখতে কোচকে শুধুমাত্র জাতীয় দল নিয়েই প্রতিটি মুহুর্ত কাজ করা জরুরী।
এরপরও বাফুফের নারী উইংয়ের প্রধান আগের সিস্টেমে, এক কোচের অধীনেই সব পরিচালনা করার পক্ষে,
‘এক বটবৃক্ষের অধীনে থাকাই ভালো। পিটারই সব দল পরিচালনা করবে।’
জাতীয় পুরুষ ফুটবল দলের স্পেনিশ কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা শুধুমাত্র সিনিয়র দলেই কোচিং করান।
২০২৩ এশিয়ান গেমস ছাড়া তিনি অনূর্ধ্ব-২৩ দলেরও কোচিং করাননি। বয়স ভিত্তিক পর্যায়ের জন্য বাফুফের অন্য কোচরা কাজ করেন।
সেখানে নারী ফুটবল নতুন এক উচ্চতায় যাওয়ার পরও আগের মতো এক কোচ দিয়েই সব দল পরিচালনার পথে হাঁটছে বাফুফে।
দিন তিনেক আগে মিয়ানমার থেকে দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের বৃটিশ কোচ পিটার বাটলার। অস্ট্রেলিয়ায় এশিয়া কাপ মিশন শুরুর আগেই এখন আবার তার মাথায় সাফ অনূর্ধ্ব-২০।
একই ব্যক্তির অধীনে একাধিক দল চাপ হলেও বাংলাদেশ ও বাফুফের বাস্তবতায় মেনেই নিয়েছেন তা বাটলার,
‘একটু চ্যালেঞ্জিং তবে আমি কাজ পছন্দ করি। সিনিয়র দলের সাত জন খেলোয়াড় অনূর্ধ্ব-২০ দলে রয়েছে।’
অধিনায়ক আফঈদা খন্দকারের বয়স বিশের নিচে হওয়ায় তিনি এই দলেরও অধিনায়ক। সাবিনার সঙ্গে সিনিয়র দলের আরো সাত জন রয়েছেন এই সাফ স্কোয়াডে।
সিনিয়রদের বয়স ভিত্তিক দলে বিবেচনা না করে অন্যদের সুযোগ দিলে নতুন ফুটবলার আসার পথ তৈরি হতো কি না?
এই প্রশ্নের উত্তরে বাটলার বলেন,
‘তাদের যেহেতু বয়স রয়েছে এবং খেলার যোগ্য এজন্য বিবেচনা করেছি। তাদের বলা হয়েছিল বিশ্রাম না খেলা? তারা খেলার পক্ষে মত দিয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে পাশে বসা অধিনায়ক আফঈদাও তখন সম্মতি দিয়ে বলেন, ‘প্লে’।
সাফের টুর্নামেন্ট হলেও সংবাদ সম্মেলন জুড়ে ছিল এশিয়ান কাপের রেশ। এশিয়ান কাপের প্রস্তুতি নিয়ে বাফুফের নারী উইংয়ের প্রধান বলেন,
‘আমি দক্ষিণ এশিয়ার কারো সঙ্গে খেলতে চাই না। আমরা এশিয়ান কাপের জন্য চীন, জাপানের মতো শক্তিশালী দলের সঙ্গে খেলার পরিকল্পনা করছি। বাফুফে সভাপতির সঙ্গে এ নিয়ে আমি আলাপ করব।’
বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে থেকে অনুশীলন করেন ও ম্যাচ খেলেন। এশিয়ান কাপ নিশ্চিত করার পর ফুটবলারদের পক্ষ থেকে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর দাবি এসেছে।
নারী ফুটবলে বাফুফের প্রধান পার্টনার ঢাকা ব্যাংক। ২০১৮ সাল থেকে এই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নারী ফুটবলে পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছে।
এশিয়ান কাপে যাওয়ায় ঢাকা ব্যাংক পৃষ্ঠপোষকতার পরিমাণ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।
ব্যাংকটির উর্ধ্বতন কর্মকর্তা পলাশ বলেন,
‘বর্তমান যে চুক্তি রয়েছে এর থেকে অবশ্যই আর্থিক সহায়তার পরিমাণ বাড়বে সামনে যে চুক্তি হবে। কারণ নারী ফুটবল দল এখন ভিন্ন উচ্চতায় পৌঁছেছে। ঢাকা ব্যাংক নারী ফুটবল দলের পাশে শুরু থেকেই ছিল এবং থাকবে।’