প্রস্তুতি ম্যাচের দুর্দশাই যেন শান্তদের ‘রিয়্যালিটি চেক’
ক্রিকেট দুনিয়াতে বাংলাদেশের অর্জনের খাতায় যা কিছু রয়েছে, তার সবটাই ৫০ ওভারের ক্রিকেটের কল্যাণে। কিন্তু ২০২৩ সালের বিশ্বকাপের আগে থেকেই নিজেদের প্রিয় ফরম্যাটটিই যে বাংলাদেশের ভরাডুবির মঞ্চে পরিণত হয়েছে। সবশেষ কবে বাংলাদেশ টানা দুই ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে– এমন একটি প্রশ্নের ক্ষেত্রে কিছুটা থমকে যেতেই হয়।
ক্যালেন্ডারের পাতা উলটে ২০২৩ সালেই ফিরে যাই। সে বছর ঘরের মাঠে মার্চে ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডকে ওয়ানডে সিরিজে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর আফগানিস্তানের কাছে সিরিজ হারের ক্ষত নিয়ে বাংলাদেশ গিয়েছিল এশিয়া কাপে। দুঃস্বপ্নের পর্বটাও পুরোপুরি শুরু হয় সেখান থেকে। সেই পুরাতন ক্ষত নতুন করে না জাগানোই হয়ত শ্রেয়।
এরপর বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে কেবল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ২০২৪ সালের মার্চে। বিগত বছরে বাংলাদেশের প্রাপ্তি ছিল ওটাই। আফগানিস্তান আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হারের লজ্জা নিয়েই নতুন বছরে প্রবেশ করেছে টাইগার ক্রিকেট। যেখানে বছরের প্রথম ওয়ানডেতে পাকিস্তান শাহীনস দলের কাছে জুটেছে ৭ উইকেটের বড় হার।
এমন একটা হার হয়ত বাংলাদেশের জন্য রিয়েলিটি চেক। আইসিসির একাডেমি মাঠে বাংলাদেশ গতকাল অনেকটা কষ্ট করে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়েই ২০০ রান পার করেছে উদীয়মান পাকিস্তান দলের বিপক্ষে। এমন একটা ব্যাটিং প্রদর্শনী চ্যাম্পিয়নস ট্রফির জন্য যে একেবারেই মানানসই না, তা মেনে নিতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। প্রমাণ হিসেবে স্মরণ করতে পারেন আয়োজক পাকিস্তানের মাটিতে শেষ হওয়া ত্রিদেশীয় সিরিজটাকে।
চার ম্যাচের টুর্নামেন্টে খেলা হয়েছে মোট ৮ ইনিংস। যার মাঝে ৫ বার স্কোর হয়েছে ৩০০ এর বেশি। দক্ষিণ আফ্রিকার ৩০৫ রানের টার্গেট নিউজিল্যান্ড যেমন পার করেছে হেসেখেলে, তেমনি প্রোটিয়াদের ৩৫২ রানও পাকিস্তানের সামনে পাত্তা পায়নি। আবার ফাইনালে পাকিস্তানের ২৪৩ রান কিউইরা চেজ করেছে প্রায় ৫ ওভার হাতে রেখে।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ঠিক কেমন রান হতে পারে, সেটার একটা আগাম পূর্বাভাসই হয়ত দিয়ে রেখেছে এই তিন-জাতি সিরিজ। সেখানে বাংলাদেশের প্রস্তুতি ম্যাচে রান ২০২। যার মাঝে ছিল দৃষ্টিকটু এক ব্যাটিং ধস। ২০ ওভারে ১০৪ রান থেকে ৩০ ওভারে ১৪০ রান। ৬০ বলে বাংলাদেশ তুলেছে ৩৬ রান। বিনিময়ে হারাতে হয়েছিল ৪ উইকেট। একাডেমি মাঠের পিচের দোহাই দেয়াও অনুচিত। কারণ, প্রথম ১০ ওভারে বাংলাদেশ তুলেছিল ৬০ রান। পরবর্তীতে পাকিস্তান শাহীনসও ব্যাট করেছে অবলীলায়।
এক ম্যাচের স্কোরকার্ডই বাংলাদেশের ব্যাটিং শক্তিমত্তার মানদণ্ড নির্ধারণ করে না– এমন একটা কথাও বলা যেতে পারে দুবাইয়ের প্রস্তুতি ম্যাচের পর। সেক্ষেত্রে পাল্টা যুক্তিও হয়ত দাঁড় করানো যায়। সাম্প্রতিক অতীতটা খুব একটা সঙ্গ দিচ্ছে না ক্রিকেট ভক্তদের। ২০২৪ সালে ৯ ওয়ানডে ইনিংসে বাংলাদেশ ২৫০ পার করতে পেরেছে ৫ বার। আর ২৭০ এর বেশি করেছে মোটে ৩ বার। একবার এসেছে ৩০০ এর বেশি স্কোর, যদিও সেই ম্যাচটায় নাজমুল শান্তর দল হেরেছে আমির জাঙ্গু এবং কেসি কার্টির ব্যাটিংয়ে।
আজ এবং আগামীকালের বিরতির পর চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশ খেলতে নামবে ভারতের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে। তার আগে উসামা মীর, আলী রিয়াজরা টাইগার ব্যাটিং লাইনআপকে কিছুটা বাস্তবতা চিনিয়েছেন সত্য। তবে দেশটা বাংলাদেশ বলেই হয়ত ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখবেন সমর্থকরা।