এর আগে ২৫টা ম্যাচ হয়ে গেছে। কারও ব্যাট থেকে শতক দেখেনি এবারের বিপিএল। ২৭ জানুয়ারি ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে চটগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের আভিস্কা ফার্নান্ডোর অপরাজিত ৯১ রানই ছিল সর্বোচ্চ।
অবশেষে ২৬তম ম্যাচে এসে সেই অপেক্ষা ফুরাল। এবারের বিপিএল পেল প্রথম শতক, সেটাও বাংলাদেশের এক ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে। তাওহিদ হৃদয় খেললেন ৫৭ বলে ১০৮ রানের এক দুর্দান্ত এক ইনিংস, তাঁর টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারেরও প্রথম শতক।
হৃদয়ের এই বিস্ফোরক ইনিংসেই দুর্দান্ত ঢাকার করা ৪ উইকেটে ১৭৪ রান তাড়া করতে নেমে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স জিতেছে ৪ উইকেট ও ১ বল হাতে রেখে। যে জয়ে ৭ ম্যাচে ৫ জয়ে বিপিএলের পয়েন্ট তালিকার দুইয়ে উঠে এসেছে কুমিল্লা। ঢাকার এটি টানা সপ্তম হার। ২০১২ বিপিএলে সিলেট রয়েলসের টানা হারের রেকর্ড স্পর্শ করেছে দলটি।
বড় রান তাড়া করার কিছু শর্ত থাকে। পাওয়ার প্লেতে উইকেট না হারানো তার মধ্যে একটি। কিন্তু প্রতিপক্ষ দলে যখন থাকেন শরীফুল ইসলাম, তখন দ্রুত কিছু উইকেট হারানোর ঝুঁকি থাকেই। প্রতি ম্যাচের মতো আজও তাই হলো। নিজের স্পেলের প্রথম দুই ওভারেই শরীফুলের বলে আউট কুমিল্লার লিটন দাস ও ইমরুল কায়েস। রান আউট হয়েছেন আরেক ওপেনার উইল জ্যাকস। ইনিংসের শুরুতেই ২৩ রানে ৩ উইকেট নেই কুমিল্লার। এমন ধসের পরও কুমিল্লাকে জেতাতে কারও বিশেষ কিছু করতেই হতো। সেটাই করলেন হৃদয়।
শুরুতেই শরীফুলের জোড়া আঘাতের পরও কুমিল্লা পাওয়ার প্লেতে ৫৪ রান তুলেছে। ইংলিশ ব্যাটসম্যান ব্রুক গেস্টকে নিয়ে হৃদয় ৮৪ রান যোগ করেন ৬৯ বলে। গেস্ট ৩৫ বলে ৩৪ রানের মন্থর ইনিংস খেলে ১৪তম ওভারে আউট হলেও হৃদয় চার-ছক্কায় রান বাড়াতে থাকেন। সাইফের করা ১৫তম ওভারে ৩ ছক্কায় ২০ রান নিয়ে লক্ষ্যটাকে নাগালে নিয়ে আসেন হৃদয়।
৩২ বলে অর্ধশত করা হৃদয় টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম শতকটি পেয়ে যান ৫৩তম বলে।তাসকিনের করা ১৯তম ওভারে লং অনের দিকে ঠেলে দৌড়ে দুই রান নিয়েই তিন অঙ্কে পৌঁছে যান। মোহাম্মদ ইরফানের করা ইনিংসের শেষ ওভারে হৃদয়ের ব্যাট থেকেই আসে দলের জয়সূচক রান। ৫৭ বলে ১০৮ রানের ইনিংসে হৃদয় মেরেছেন ৮টি চার ও ৭টি ছক্কা।
এর আগে রান এসেছে ঢাকার টপ অর্ডার থেকেও। প্রায় প্রতি ম্যাচেই ঢাকাকে ভালো শুরু এনে দিয়েছেন মোহাম্মদ নাঈম। কিন্তু তাঁকে ব্যাটিং করতে হয়েছে অন্যদের আসা যাওয়ার মধ্যে। ঢাকার কী ভাগ্য, আজ নাঈমকে সঙ্গ দিলেন সাইফ হাসান। চতুর্থ ওভারে ক্রিজে এসে তিনি টিকে রইলেন ১৭তম ওভার পর্যন্ত, নাঈমও ছিলেন ওই ওভার পর্যন্ত। দুজনের সৌজন্যে শেষের দুই ওভারে হাত খুলে খেলার স্বাধীনতা পেয়েছেন অস্ট্রেলীয় অ্যালেক্স রস।
পাকিস্তানের সাইম আইয়ুব চলে যাওয়ায় নাঈমের একজন ওপেনিং সঙ্গী খুঁজতে হতো ঢাকার। নতুন কাউকে না এনে লোয়ার অর্ডার থেকে উঠিয়ে ওপেনিংয়ে আনা হয় শ্রীলঙ্কান চতুরাঙ্গা ডি সিলভাকে। তাঁর ১৩ বলে ১৪ রান শুরুর চাপ কিছুটা কমিয়েছে।
পুরো বিপিএলে ঢাকার সেরা ব্যাটিংটা শুরুটা হয় এর পরেই। নাঈম ও সাইফ দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে যোগ করেছেন ৭৮ বলে ১১৯ রান। সাইফের ব্যাট থেকে এসেছে ৪২ বলে ৫৭ রান, ৪টি চার ও ৩টি ছক্কা ছিল তাঁর ১৩৫ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসে। সাইফের চেয়ে দ্রুত রান তুলেছেন নাঈম। ৯টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪৫ বলে ৬৪ রান করেছেন এই বাঁহাতি, স্ট্রাইক রেট ১৪২। বাকি কাজটা করেছেন রস। তিনি অপরাজিত ছিলেন ১১ বলে ২১ রানে।
কিন্তু হৃদয়ের ঝড়ে শেষে ম্লান হয়ে গেছেন তাঁরা সবাই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
দুর্দান্ত ঢাকা : ২০ ওভারে ১৭৫/৪
(নাঈম ৬৪, সাইফ ৫৭, রস ২১*, ডি সিলভা ১৪, মেহেরব ১১*, ম্যাকার্থি ০; ফোর্ড ৪–০–৩৫–৩, আলিস ৪–০–২৯–১)।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস : ১৯.৫ ওভারে ১৭৬/৬
(হৃদয় ১০৮*, গেস্ট ৩৪, জ্যাকস ৯, লিটন ৮, রেইফার ৬, জাকের ৬, ফোর্ড ১*, ইমরুল ১; শরীফুল ৪–০–৩২–২, ডি সিলভা ৪–০–২১–১, ইরফান ২.৫–০–২৪–১, সানি ৪–০–৩৩–১)।
ফল : কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান ৪ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : তাওহিদ হৃদয়।