পোপের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ইংল্যান্ডের লড়াই
সিরিজের প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ৬ উইকেটে ৩১৬ রান। প্রথম ইনিংসে ১৯০ রানের ঘাটতি পুষিয়ে ইংলিশরা এগিয়ে আছে ১২৬ রানে, হাতে আছে ৪ উইকেট।
স্পিন সহায়ক উইকেটে একটা পর্যায়ে ১৬৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল ইংল্যান্ড। সেখান থেকে বেন ফোকসের সঙ্গে ১১২ রানের জুটিতে দলকে উদ্ধার করেন পোপ। ক্যারিয়ারের পঞ্চম টেস্ট সেঞ্চুরিতে দিন শেষে ১৪৮ রানে অপরাজিত আছেন তিনি। তার ২০৮ বলের ইনিংস গড়া ১৭টি চারে।
২০১২ সালে আহমেদাবাদে অ্যালেস্টার কুকের ১৭৬ রানের পর ভারতের মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে সফরকারী কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ ইনিংস এটি। তখনকার ইংলিশ অধিনায়ক কুকের ইনিংসটিও ছিল সিরিজের প্রথম টেস্টে। দেশের মাটিতে সেবারই সবশেষ কোনো টেস্ট সিরিজ হেরেছিল ভারত।
গত জুনে লর্ডসে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করেন পোপ। একই মাসে অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই টেস্টের চার ইনিংসে আর পঞ্চাশ ছুঁতে পারেননি তিনি। এর মাঝেই ফিল্ডিংয়ের সময় কাঁধে চোট পেয়ে সিরিজ থেকে ছিটকে যান পোপ।
তারপর এই ভারত সিরিজ দিয়েই লম্বা সময় পর স্বীকৃত ক্রিকেটে ফিরে প্রথম ইনিংসে তিনি আউট হন স্রেফ ১ রানে। সেই হতাশা পেছনে ফেলে দ্বিতীয় ইনিংসে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ালেন ২৬ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
ভারত শনিবার তৃতীয় দিন শুরু করে ৭ উইকেটে ৪২১ রান নিয়ে। এ দিন তারা যোগ করতে পারে আর কেবল ১৫ রান। ইয়াশাসবি জয়সওয়াল ও লোকেশ রাহুলের মতো রবীন্দ্র জাদেজাও শতকের সুযোগ হাতছাড়া করে থমকে যান আশির ঘরে।
৮১ রান নিয়ে দিনের ব্যাটিং শুরু করে জাদেজা আউট হন ৮৭ রানে। তার ১৮০ বলের ইনিংস গড়া ৭ চার ও ২ ছক্কায়। পরপর দুই বলে জাদেজা ও জাসপ্রিত বুমরাহকে ফিরিয়ে দেন জো রুট। পরের ওভারে রেহান আহমেদের শিকার আকসার প্যাটেল (১০০ বলে ৪৪)। স্কোর ৪৩৬ রেখেই শেষ ৩ উইকেট হারায় ভারত!
৭৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের সফলতম বোলার ‘পার্ট টাইম’ স্পিনার রুট।
পিছিয়ে থেকে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ইনিংসের মতো এবারও শুরুটা ভালো করে জুটি বড় করতে পারেননি জ্যাক ক্রলি ও বেন ডাকেট। ক্রলিকে ফিরিয়ে ৪৫ রানের শুরুর জুটি ভাঙেন অফ স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ডিফেন্স করার চেষ্টায় স্লিপে ধরা পড়েন ক্রলি।
আগ্রাসী ব্যাটিংয় এগিয়ে যেন বেন ডাকেট। তবে ফিফটি থেকে ৩ রান দূরে থাকতে বিদায় নেন তিনি (৫২ বলে ৪৭)। ডাকেটকে বোল্ড করে ৬৮ রানের জুটি ভাঙা বুমরাহ নিজের পরের ওভারে রুটকে এলবিডব্লিউ করেন ইনসুইঙ্গারে।
এ দিন ২ রান করার পথেই একটি রেকর্ড নিজের করে নেন রুট। সাবেক অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক রিকি পন্টিংকে (২ হাজার ৫৫৫) ছাড়িয়ে ভারতের বিপক্ষে টেস্টে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড এখন শুধুই সাবেক ইংলিশ অধিনায়কের (২ হাজার ৫৫৭)।
জনি বেয়ারস্টোকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি জাদেজা। বাঁহাতি স্পিনারের বল ছেড়ে দিয়ে বোল্ড হন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। দারুণ এক ডেলিভারিতে বেন স্টোকসকে বোল্ড করে দেন অশ্বিন। ইংলিশ অধিনায়ক ৩৩ বলে করেন ৬ রান।
সাদা পোশাকে ২৫ ইনিংসে এই নিয়ে ১২ বার স্টোকসকে আউট করলেন অশ্বিন, একজন ব্যাটসম্যানকে ভারতীয় কোনো বোলারের আউট করার হিসেবে যা যৌথভাবে সর্বোচ্চ। পাকিস্তানের মুদাসসার নাজারকে ১২ বার আউট করেছিলেন কপিল দেব।
৫ উইকেট হারিয়ে তখন বিপদে ইংল্যান্ড। ভারতের থেকে তখনও ২৭ রানে পিছিয়ে তারা। সেখান থেকেই পোপ ও ফোকসের ১৮৩ বলে ১১২ রানের জুটি।
পোপ স্পিন সামলান দারুণভাবে। সুইপ, রিভার্স-সুইপে মারেন বাউন্ডারি। ৫৪ বলে ফিফটি করেন তিনি। পরের পঞ্চাশ করতে খেলেন অবশ্য ১০০ বল। ৯৭ থেকে জাদেজার বলে ৩ রান নিয়ে পা রাখেন তিন অঙ্কে।
এই প্রথম দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি পেলেন পোপ। তার আগের চারটি ছিল প্রথম ইনিংসে। ২০১৮ সালের পর দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ভারতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে শতক করলেন তিনি। ২০২২ সালে ১০৭ রান করেছিলেন শ্রীলঙ্কার দিমুথ কারুনারান্তে।
১১০ রানে পোপকে ফেরানোর সুযোগ এসেছিল। তবে জাদেজার বলে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ক্যাচ নিতে ব্যর্থ হন আকসার। পরে তিনিই মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠা জুটি ভাঙেন নিচু হওয়া ডেলিভারিতে ফোকসকে (৮১ বলে ৩৪) বোল্ড করে।
রেহানকে সঙ্গে নিয়ে দিনের বাকি ১০ ওভার কাটিয়ে দেন পোপ। দারুণ কিছু বাউন্ডারিতে পৌঁছে যান তিনি দেড়শর দুয়ারে। চতুর্থ দিনেও তার ব্যাটের দিকেই তাকিয়ে থাকবে দল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২৪৬
ভারত ১ম ইনিংস: ১২১ ওভারে ৪৩৬ (আগের দিন ৪২১/৭) (জাদেজা ৮৭, আকসার ৪৪, বুমরাহ ০, সিরাজ ০*; উড ১৭-১-৪৭-০, হার্টলি ২৫-০-১৩১-২, লিচ ২৬-৬-৬৩-১, রেহান ২৪-৪-১০৬-২, রুট ২৯-৫-৭৯-৪)
ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: ৭৭ ওভারে ৩১৬/৬ (ক্রলি ৩১, ডাকেট ৪৭, পোপ ১৪৮*, রুট ২, বেয়ারস্টো ১০, স্টোকস ৬, ফোকস ৩৪, রেহান ১৬*; বুমরাহ ১২-৩-২৯-৩, অশ্বিন ২১-৩-৯৩-২, আকসার ১৫-২-৬৯-১, জাদেজা ২৬-১-১০১-১, সিরাজ ৩-০-৮-০)