খেলার মাঠে সবার আগে
Nsports-logo

রবিবার, ১১ই মে ২০২৫

বিসিবির টাকা স্থানান্তর বিষয়ে যা বললেন ক্রীড়া উপদেষ্টা

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ইদানিংকার কর্মকাণ্ড নিয়ে সারাদেশেই চলছে সমালোচনা। ফিক্সড ডিপোজিটের কোটি টাকা অন্য ব্যাংকে স্থানান্তর বিষয়ে এবার মুখ খুলেছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।

ফিক্সড ডিপোজিটের ২৩৮ কোটি টাকা ১৪ ব্যাংকে স্থানান্তর বিষয়ে বিসিবি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর আগেই গণমাধ্যমে চলে আসে। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে শুরুতে সদুত্তর দিতে পারেননি বিসিবির প্রভাবশালী পরিচালক নাজমুল আবেদিন ফাহিম।

পরে অবশ্য জোরেশোরে আলোচনা হলে এর সারবত্তা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ। পরে বিসিবিও এক বিবৃতিতে ঘটনার আদ্যোপান্ত জানিয়েছে।

শনিবার (২৬ এপ্রিল) এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন,

‘বিসিবির সাথে আমার কথা হয়েছে। এফডিআর তাদের আয়ের একটা উৎস। ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংক থেকে সরিয়ে এখন যেখানে এফডিআর করা হয়েছে সেখানে ইন্টারেস্ট রেটও ভালো। এক্ষেত্রে কোনও অনিয়ম হয়েছে কি না তা আমরা দেখবো। সরকারি যেকোন প্রতিষ্ঠানকেই আমি বলবো, ভালো যে ব্যাংকগুলো আছে সেখানে সেখানে টাকা রাখতে।’

বিসিবির টাকা স্থানান্তর বিষয়ে যা বললেন ক্রীড়া উপদেষ্টা

এর আগে টাকা অন্য ব্যাংকে স্থানান্তরের পেছনে যুক্তি দেখিয়ে বিসিবি সভাপতি বলেন,

‘রেড জোন থেকে গ্রিন আর ইয়োলো জোনের ব্যাংকে নিয়ে গেছি টাকা। স্ট্যানডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে আছে ১২ কোটি টাকা। মোট আড়াইশ কোটি। এদের থেকে আমি স্পন্সর পেয়েছি ১২ কোটি টাকার কাছাকাছি, আর প্রতিশ্রুতি পেয়েছি আরও ২৫ কোটি টাকার ইনফ্রাস্ট্রাকচার বানায় দিবে।’

শনিবার এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বিসিবি বলেছে,

‘গত ২০২৪ সালের আগস্টে বিসিবির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর জনাব ফারুক আহমেদ বিগত বছরগুলোর আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসের গণআন্দোলনের পর দেশের অর্থনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে বোর্ডের আর্থিক স্বার্থ সংরক্ষণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করেন।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে,

‘এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে বিসিবি তার ব্যাংকিং সম্পর্কগুলোর পুনর্মূল্যায়ন করে এবং কৌশলগতভাবে সিদ্ধান্ত নেয় যে শুধুমাত্র বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত গ্রীন ও ইয়েলো জোনভুক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই বোর্ড আর্থিক লেনদেনে জড়িত থাকবে।

নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিসিবি ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংকগুলো থেকে ২৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করে এবং এর মধ্যে ২৩৮ কোটি টাকা গ্রীন ও ইয়েলো জোনভুক্ত ব্যাংকগুলোতে পুনঃবিনিয়োগ করে। অবশিষ্ট ১২ কোটি টাকা বিসিবির বিবিধ পরিচালনা ব্যয় নির্বাহের জন্য নির্ধারিত একাউন্টে স্থানান্তর করা হয়।

বিসিবির টাকা স্থানান্তর বিষয়ে যা বললেন ক্রীড়া উপদেষ্টা

প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বোর্ড সভাপতি কোন একক সিদ্ধান্তবলে বোর্ড এর পরিচালনা পর্ষদের অজ্ঞাতে ব্যাঙ্ক পরিবর্তনের অথবা লেনদেন সংক্রান্ত নির্দেশ প্রদান করেন না।

পার্টনার ব্যাংকগুলোর সাথে বিসিবির আর্থিক বিষয়ক লেনদেনে স্বাক্ষরপ্রদানকারী হিসাবে দুজন বোর্ড পরিচালক আছেন বোর্ডের ফিনান্স কমিটি চেয়ারম্যান জনাব ফাহিম সিনহা ও টেন্ডার ও পারচেজ কমিটি চেয়ারম্যান জনাব মাহবুবুল আনাম। বিসিবি সভাপতি এসংক্রান্ত বিষয়ে স্বাক্ষরদাতা নন।

সেপ্টেম্বর ২০২৪ থেকে এখন পর্যন্ত বিসিবি তার অর্থ ও স্থায়ী আমানত সংরক্ষণের দায়িত্ব ১৩টি নির্ভরযোগ্য ব্যাংকের হাতে দিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বিসিবির আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহ প্রতিযোগিতামূলক মুনাফা প্রাপ্তির মাধ্যমে আয় বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করেছে।

এর ফলে পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় বিসিবির স্থায়ী আমানত থেকে ২-৫ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত মুনাফা হয়েছে।

গত ছয় মাসে বিসিবি তার বর্তমান তিনটি ব্যাংকিং অংশীদারের কাছ থেকে আনুমানিক ১২ কোটি টাকার স্পনসরশিপ পেয়েছে।

এছাড়াও, অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বিসিবির অংশীদার ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকা বিনিয়োগের আশ্বাস পাওয়া গেছে, যা এই আর্থিক সম্পর্কগুলোর দৃঢ়তা ও গভীরতা নির্দেশ করে।’

প্রসঙ্গত, এর আগে এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে গত আগস্ট থেকে বিসিবির এফডিআর স্টেটমেন্ট অনুযায়ী এই স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় লাভ হবে ক্রিকেট বোর্ডেরই।

প্রথম ধাপে, আইএফআইসি আর মিডল্যান্ডের মতো হলুদ তালিকাভুক্ত ব্যাংক থেকে ১২ কোটি টাকা সরিয়ে নেয়া হয়েছে মধুমতী ব্যাংকে।

তবে ঐ দুই ব্যাংকের চেয়ে মধুমতী ব্যাংক থেকে ইন্টারেস্টের হার বেশি থাকায়, আয় বাড়বে বিসিবির।

দ্বিতীয় ধাপে নেয়া হয়েছে আরো ১০ কোটি, এবারো একই ইন্টারেস্ট হার।

এরপর যথাক্রমে আরো বেশ কয়েক ধাপে, কখনো হলুদ, কিংবা কখনো ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে লাল তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো থেকে নতুন ১৪ ব্যাংকে নেয়া হয়েছে মোট ২৫০ কোটি টাকা।

এই স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় কেবল যে ইন্টারেস্ট রেট বেড়েছে এমন নয়, নতুন ব্যাংকগুলো থেকে পাওয়া যাচ্ছে স্পন্সরশিপ।

এ ছাড়াও আছে ২৫ কোটি টাকার অবকাঠামোগত ইনভেস্টমেন্ট পাবার কমিটমেন্ট।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরো একটি গুঞ্জন, বোর্ড পরিচালকদের অনুমতি ছাড়া একাই টাকা সরিয়ে নিয়েছেন ফারুক। তবে এই গুঞ্জনও সত্যি নয়।

মূলত বিসিবির ফাইনান্স কমিটির প্রধান ও আরো একজন প্রভাবশালী বোর্ড পরিচালক পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More

Privacy & Cookies Policy