খেলার মাঠে সবার আগে
Nsports-logo

রবিবার, ১৫ই জুন ২০২৫

১৪ ব্যাংকে ২৩৮ কোটি টাকা স্থানান্তরের ব্যাখ্যায় যা বলেছে বিসিবি

জাতীয় দলের হতশ্রী পারফরম্যান্সের কারণে এমনিতেই চাপে আছে বিসিবি। তার ওপর নতুন করে বিসিবির ফিক্সড ডিপোজিটের টাকা অন্য ব্যাংকে স্থানান্তর নিয়ে নতুন করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন বিসিবিপ্রধান ফারুক আহমেদ। জানা গেছে, ১৪ ব্যাংকে ২৩৮ কোটি টাকা স্থানান্তর করেছে বিসিবি। যা নিয়ে গত দুদিন ধরেই উত্তাল দেশের ক্রিকেট। এই অবস্থায় মুখ খুলেছেন বিসিবিপ্রধান।

তবে শনিবার এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে এসব অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে বিসিবি।

তবে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, গত আগস্ট থেকে বিসিবির এফডিআর স্টেটমেন্ট অনুযায়ী এই স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় লাভ হবে ক্রিকেট বোর্ডেরই।

প্রথম ধাপে, আইএফআইসি আর মিডল্যান্ডের মতো হলুদ তালিকাভুক্ত ব্যাংক থেকে ১২ কোটি টাকা সরিয়ে নেয়া হয়েছে মধুমতী ব্যাংকে।

তবে ঐ দুই ব্যাংকের চেয়ে মধুমতী ব্যাংক থেকে ইন্টারেস্টের হার বেশি থাকায়, আয় বাড়বে বিসিবির।

দ্বিতীয় ধাপে নেয়া হয়েছে আরো ১০ কোটি, এবারো একই ইন্টারেস্ট হার। এরপর যথাক্রমে আরো বেশ কয়েক ধাপে, কখনো হলুদ, কিংবা কখনো ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে লাল তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো থেকে নতুন ১৪ ব্যাংকে নেয়া হয়েছে মোট ২৫০ কোটি টাকা।

এই স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় কেবল যে ইন্টারেস্ট রেট বেড়েছে এমন নয়, নতুন ব্যাংকগুলো থেকে পাওয়া যাচ্ছে স্পন্সরশিপ। এ ছাড়াও আছে ২৫ কোটি টাকার অবকাঠামোগত ইনভেস্টমেন্ট পাবার কমিটমেন্ট।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরো একটি গুঞ্জন, বোর্ড পরিচালকদের অনুমতি ছাড়া একাই টাকা সরিয়ে নিয়েছেন ফারুক। তবে এই গুঞ্জনও সত্যি নয়।

মূলত বিসিবির ফাইনান্স কমিটির প্রধান ও আরো একজন প্রভাবশালী বোর্ড পরিচালক পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

শনিবার (২৬ এপ্রিল) এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বিসিবি বলেছে,

‘জাতীয় গণমাধ্যমের একটি অংশে বোর্ডের আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নজরে এসেছে। বিসিবির মতে এসব প্রতিবেদন ভুল তথ্যভিত্তিক এবং বোর্ড ও এর সভাপতি জনাব ফারুক আহমেদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয়েছে।’

বিবৃতিতে এফডিআরের টাকা স্থানান্তরের ব্যাখ্যাও দিয়েছে বোর্ড। বিসিবি বলেছে,

‘গত ২০২৪ সালের আগস্টে বিসিবির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর জনাব ফারুক আহমেদ বিগত বছরগুলোর আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসের গণআন্দোলনের পর দেশের অর্থনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে বোর্ডের আর্থিক স্বার্থ সংরক্ষণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করেন।’

১৪ ব্যাংকে ২৩৮ কোটি টাকা স্থানান্তরের ব্যাখ্যায় যা বলেছে বিসিবি

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে,

‘এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে বিসিবি তার ব্যাংকিং সম্পর্কগুলোর পুনর্মূল্যায়ন করে এবং কৌশলগতভাবে সিদ্ধান্ত নেয় যে শুধুমাত্র বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত ‘গ্রীন’ ও ‘ইয়েলো’ জোনভুক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথেই বোর্ড আর্থিক লেনদেনে জড়িত থাকবে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিসিবি ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংকগুলো থেকে ২৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করে এবং এর মধ্যে ২৩৮ কোটি টাকা গ্রীন ও ইয়েলো জোনভুক্ত ব্যাংকগুলোতে পুনঃবিনিয়োগ করে। অবশিষ্ট ১২ কোটি টাকা বিসিবির বিবিধ পরিচালনা ব্যয় নির্বাহের জন্য নির্ধারিত একাউন্টে স্থানান্তর করা হয়।’

বিসিবি জানায়,

‘প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বোর্ড সভাপতি কোন একক সিদ্ধান্তবলে বোর্ড এর পরিচালনা পর্ষদের অজ্ঞাতে ব্যাঙ্ক পরিবর্তনের অথবা লেনদেন সংক্রান্ত নির্দেশ প্রদান করেন না। পার্টনার ব্যাংকগুলোর সাথে বিসিবির আর্থিক বিষয়ক লেনদেনে স্বাক্ষরপ্রদানকারী হিসাবে দুজন বোর্ড পরিচালক আছেন বোর্ডের ফিনান্স কমিটি চেয়ারম্যান জনাব ফাহিম সিনহা ও টেন্ডার ও পারচেজ কমিটি চেয়ারম্যান জনাব মাহবুবুল আনাম। বিসিবি সভাপতি এসংক্রান্ত বিষয়ে স্বাক্ষরদাতা নন।’

‘বিসিবি অবগত যে, কিছু সুবিধাভোগী মহল এবং ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী, যারা ক্রিকেট প্রশাসনের ভিতরেও সক্রিয়, বোর্ডের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বিসিবির আর্থিক নিরাপত্তা আরও জোরদার করার এটিও অন্যতম কারণ। সেপ্টেম্বর ২০২৪ থেকে এখন পর্যন্ত বিসিবি তার অর্থ ও স্থায়ী আমানত সংরক্ষণের দায়িত্ব ১৩টি নির্ভরযোগ্য ব্যাংকের হাতে দিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বিসিবির আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহ প্রতিযোগিতামূলক মুনাফা প্রাপ্তির মাধ্যমে আয় বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করেছে। এর ফলে পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় বিসিবির স্থায়ী আমানত থেকে ২-৫ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত মুনাফা হয়েছে।’

‘গত ছয় মাসে বিসিবি তার বর্তমান তিনটি ব্যাংকিং অংশীদারের কাছ থেকে আনুমানিক ১২ কোটি টাকার স্পনসরশিপ পেয়েছে। এছাড়াও, অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বিসিবির অংশীদার ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকা বিনিয়োগের আশ্বাস পাওয়া গেছে, যা এই আর্থিক সম্পর্কগুলোর দৃঢ়তা ও গভীরতা নির্দেশ করে।’

‘বিসিবি সর্বোচ্চ মানের আর্থিক ব্যবস্থা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং প্রকৃত ও তথ্যভিত্তিক উৎস থেকে তদন্ত ও পর্যালোচনাকে স্বাগত জানায়। পাশাপাশি, বোর্ড গণমাধ্যমকে ভিত্তিহীন অথবা বাংলাদেশ ক্রিকেট ও এর সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে পারে, এমন কোনো ভূল তথ্যসম্মলিত প্রতিবেদন প্রকাশ থেকে বিরত থাকার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছে।’

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More

Privacy & Cookies Policy