উগান্ডাকে উড়িয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু আফগানিস্তানের
গায়ানায় স্থানীয় সময় সোমবার রাতের ম্যাচে উগান্ডাকে ১২৫ রানে হারায় আফগানিস্তান। ১৮৪ রানের লক্ষ্যে মাত্র ৫৮ রানেই গুটিয়ে যায় বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা পূর্ব আফ্রিকার দেশটি।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এটিই উগান্ডার সর্বনিম্ন স্কোর। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এর চেয়ে কম রানে অল আউট হওয়ার নজির আছে শুধু দুই দেশের- নেদারল্যান্ডস (শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৯ ও ৪৪ রান) এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ (ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৫ রান)।
উগান্ডাকে গুঁড়িয়ে ৪ ওভারে মাত্র ৯ রানে ৫ উইকেট নেন ফারুকি। বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড এটি। ২০২১ সালে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ২০ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন মুজিব উর রাহমান। সব মিলিয়ে তালিকার চার নম্বরে এখন ফারুকি। ম্যাচ সেরার পুরস্কার ওঠে বাঁহাতি পেসারের হাতেই।
আফগানিস্তানকে বড় জয়ের ভিতটা গড়ে দেন দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। উদ্বোধনী জুটিতে ১৫৪ রান যোগ করেন তারা দুজন। বিশ্বকাপে প্রথম উইকেটে এর চেয়ে বড় জুটি আর মাত্র একটি। গত আসরে ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের অ্যালেক্স হেলস ও জস বাটলারের অবিচ্ছিন্ন ১৭০ রান।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় বলে আলপেশ রামজানিকে ছক্কায় ওড়ান গুরবাজ। পরের ওভারে একটি করে চার মারেন দুই ওপেনার। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে টানা চারটি চার মারেন ইব্রাহিম। ৬ ওভারে ৬৬ রান করে আফগানিস্তান। বিশ্বকাপে পাওয়ার প্লেতে এটিই তাদের সর্বোচ্চ।
এরপর একই ছন্দে এগোতে থাকেন দুই ওপেনার। নবম ওভারে ২৮ বলে পঞ্চাশ পূর্ণ করেন গুরবাজ। পরের ওভারে একশ ছুঁয়ে ফেলে আফগানরা। দ্বাদশ ওভারে ইব্রাহিমের ফিফটি হয় ৩৪ বলে।
চতুর্দশ ওভারে এলোমেলো বোলিংয়ে ২৫ রান দেন বিলাল হাসান। প্রথমে ওয়াইড বলে দেন বাউন্ডারি। পরে নো বলে হজম করেন চার। এরপর একটি ছক্কা ও চার হজম করেন তিনি। ওই ওভারেই দেড়শ পূর্ণ করে আফগানিস্তান।
তখনও ৬ ওভার বাকি থাকায় দুইশ খুব কাছের পথই মনে হচ্ছিল তাদের জন্য। কিন্তু শেষ দিকে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় উগান্ডা। শেষের ৬ ওভারে একটিও বাউন্ডারি মারতে পারেনি আফগানিস্তান। বিপরীতে ৫ উইকেট হারিয়ে করে মাত্র ৩১ রান।
পঞ্চদশ ওভারে অধিনায়ক ব্রায়ান মাসাবার হাত ধরে উগান্ডার ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু। ক্রিজ ছেড়ে মারতে গিয়ে প্যাডে লেগে বোল্ড হন ইব্রাহিম। ৯ চার ও ১ ছক্কায় ৪৬ বলে ৭০ রান করেন তিনি।
পরের ওভারে গুরবাজকে থামান রামজানি। স্লগ সুইপে ছক্কার খোঁজে ডিপ স্কয়ার লেগে ধরা পড়েন কিপার-ব্যাটসম্যান। বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ ইনিংস খেলে ৪৫ বলে ৭৬ রান করে ফেরেন তিনি। ৪টি করে চার-ছক্কায় সাজান ইনিংস।
দুই ওপেনারের বিদায়ের পর আর কেউই দায়িত্ব নিতে পারেননি। অভিজ্ঞ মোহাম্মদ নাবি ১৬ বলে ১৪ রান করে অপরাজিত থাকেন।
উগান্ডার পক্ষে ৪ ওভারে মাত্র ২১ রানে ২ উইকেট নেন মাসাবা।
রান তাড়ায় প্রথম বলে বাউন্ডারি ছাড়া আর কোনো আনন্দের উপলক্ষ পায়নি উগান্ডা। প্রথম ওভারে রোনাক ও রজার মুকাসাকে ফেরান ফারুকি। পরের ওভারে সাইমন সেসাজিকে আউট করেন মুজিব।
পঞ্চম ওভারে নাভিন উল হাক তিন বলের মধ্যে দুই উইকেট নিলে পাওয়ার প্লেতেই ব্যাটিং লাইন-আপের অর্ধেক হারিয়ে ফেলে উগান্ডা। ছয় ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে তারা করে ২১ রান।
ত্রয়োদশ ওভারে দ্বিতীয় স্পেলে ফেরেন ফারুকি। এবার প্রথম দুই বলে ফেরান রিয়াজাত আলি শাহ ও মাসাবাকে। ম্যাচে দ্বিতীয়বার হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগালেও তা করতে পারেননি ফারুকি। তবে ওভারের শেষ বলে আরেক শিকার ধরে ৫ উইকেট পূর্ণ করেন তিনি।
পরে ষোড়শ ওভারের শেষ দুই বলে উগান্ডার ইনিংসের সমাপ্তি ঘটান রাশিদ খান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আফগানিস্তান: ২০ ওভারে ১৮৩/৫ (গুরবাজ ৭৬, ইব্রাহিম ৭০, নাজিবউল্লাহ ২, নাবি ১৪*, গুলবাদিন ৪, ওমারজাই ৫, রাশিদ ২*; রামজানি ৪-০-৩৩-১, কিয়ুটা ৪-০-২৫-২, নাকরানি ৩-০-৩৭-০, বিলাল ২-০-৩৪-০, সেনিয়োন্ডো ২-০-১৯-০, রিয়াজাত ১-০-১১-০, মাসাবা ৪-০-২১-২)
উগান্ডা: ১৬ ওভারে ৫৮ (রোনাক ৪, সেসাজি ৪, মুকাসা ০, রিয়াজাত ১১, নাকরানি ০, রামজানি ০, ওবুয়া ১৪, মাসাবা ০, বিলাল ৮, কিয়ুটা ২*, সেনিয়োন্ডো ০; ফারুকি ৪-০-৯-৫, মুজিব ৩-০-১৬-১, নাভিন ২-০-৪-২, ওমারজাই ২-০-৭-০, রাশিদ ৪-০-১২-২, নাবি ১-০-৮-০)
ফল: আফগানিস্তান ১২৫ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ফাজালহাক ফারুকি