শ্রীলংকাকে ৬ উইকেটে হারাল দক্ষিণ আফ্রিকা
নবম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গতকাল দ্বিতীয় দিন প্রথমবারের মতো কাছাকাছি শক্তির দুটি দল মুখোমুখি হয়। যদিও ‘ডি’ গ্রুপের এই ম্যাচটিকে বড্ড একপেশে করে দিল দক্ষিণ আফ্রিকা। শ্রীলংকাকে মাত্র ৭৭ রানে অলআউট করে প্রোটিয়ারা ৬ উইকেট ও ২২ বল হাতে রেখেই জয় তুলে নিয়েছে।
নিউইয়র্কে নবনির্মিত নাসাউ কাউন্টি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে গতকালই প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচ মাঠে গড়ায়। ড্রপ-ইন পিচে প্রথম ম্যাচেই বিপর্যস্ত শ্রীলংকা। টস জিতে ব্যাটিং নেয়া লংকানরা শুরু থেকেই নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট হারিয়ে শেষ পর্যন্ত একশর নিচেই গুটিয়ে যায়। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৭৭ রানই শ্রীলংকার সর্বনিম্ন সংগ্রহ।
চোট কাটিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপ স্কোয়াডে ফেরা পেস বোলার এনরিখ নরকিয়া ৪ ওভারে ৭ রান দিয়ে ৪ উইকেট শিকার করেন। এছাড়া আরেক পেসার কাগিসো রাবাদা ২১ রানে দুটি ও স্পিনার কেশব মহারাজ ২২ রানে দুটি উইকেট নেন। শ্রীলংকার পক্ষে কুশল মেন্ডিস ১৯ ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ১৬ রান করেন।
ছোট টার্গেট তাড়া করতে নেমে ২৩ রানের মধ্যে রিজা হেনড্রিকস (৪) ও এইডেন মার্করামকে (১২) হারায় শ্রীলংকা। কুইন্টন ডি কক (২০) ও স্ত্রিস্তান স্টাবস (১৩) স্থিতি আনার পর তারাও বিদায় নেন দলীয় ৫৮ রানের মধ্যে। এরপর হাইনরিখ ক্লাসেন (১৯*) ও ডেভিড মিলার (৬*) অবিচ্ছিন্ন থেকে দলকে জয়ের বন্দরে নোঙর করান। ৪ উইকেট শিকারি নরকিয়া হয়েছেন ম্যাচসেরা খেলোয়াড়।
শ্রীলংকার এ পারফরম্যান্স কি আশাবাদী করে তুলবে বাংলাদেশকে? ৮ জুন সকালে ডালাসে সিংহলিজদের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। সুপার এইটে উঠতে হলে অন্তত তিনটি ম্যাচ জিততে হবে। সেক্ষেত্রে নেদারল্যান্ডস, নেপালের বিপক্ষে জয়ের পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলংকার মধ্যে অন্তত একটিকে হারাতে হবে টাইগারদের।
এদিকে গতকাল সকালে বার্বাডোজের কেনসিংটন ওভালে ওমান ও নামিবিয়ার ম্যাচ টাই হওয়ার পর গড়ায় সুপার ওভারে, যাতে জয় পেয়েছে নামিবিয়া। একগুচ্ছ রেকর্ড হওয়া এ ম্যাচের নায়ক ঊনচল্লিশের ‘তরুণ’ নামিবিয়ার ডেভিড উইজে।
প্রথমে বল হাতে নিয়েছেন ৩ উইকেট। এরপর ব্যাট হাতেও দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে ‘প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ’ উইজে।
পেসম্যান রুবেন ট্রাম্পেলম্যান শুরুতেই বিধ্বস্ত করেন ওমানের ব্যাটিং লাইনআপকে। পাওয়ার প্লেতেই নেন তিন-তিনটি উইকেট। প্রথম ওভারে দুটি ও তৃতীয় ওভারে একটি উইকেট নেন তিনি। এরপর উইজে (৩/২৮) ও অধিনায়ক গেরহার্ড এরাসমাস (২/২০) মিলে ওমানকে ১৯.৪ ওভারে মাত্র ১০৯ রানে অলআউট করে দেন।
তবে সহজে জেতা হলো নামিবিয়ার। ১১০ রানের ছোট টার্গেট তাড়া করতে নেমে তারা ৬ উইকেট হারিয়ে তুলতে পারল ১০৯ রান। পেসার মেহরান খান (৩/৭) ও স্পিনার আকিব ইলিয়াস (১/১২) অবিশ্বাস্য বোলিংয়ে নামিবিয়ার রানের চাকা আটকে দেন। ফলে ম্যাচটা টাই হয়ে গড়ায় সুপার ওভারে।
সুপার ওভারে উইজের সংহারী মূর্তির সামনে পড়েন ওমানের পেস বোলার বিলাল খান। তার করা প্রথম চার বল থেকে ১৩ রান তুলে নেন উইজে। অধিনায়ক এরাসমাস শেষ দুই বলে দুটি বাউন্ডারি হাঁকালে ২১ রানের বিশাল সংগ্রহ পেয়ে যায় আফ্রিকার দেশটি। এরপর চাপের মুখে সুপার ওভারের বল করার দায়িত্বও নিজের কাঁধে নিলেন উইজে। তার কাছ থেকে ওমানিরা নিতে পারল মাত্র ১০ রান! বলা যায়, সুপার ওভারে সহজেই জয় হলো নামিবিয়ার।
জয় শেষে ৩৯ বছর বয়সী উইজের অনুভূতি ছিল এ রকম, ‘আজ রাতে জীবন থেকে অনেকটা বছর কমে গেল (হেসে)। খুবই আবেগাপ্লুত। ব্যাটিং ও বোলিং নিয়ে আমার বিশ্বাস ছিল ব্যাটিংয়ে কিছু বলে হিট করতে পারব। এরপর বল হাতেও নিজের পরিকল্পনাটা ঠিকঠাক কাজে লাগাতে চেয়েছি। আসলে পিচ কঠিন ছিল, আমাদের প্রত্যাশামতো খেলতে পারিনি। তবে আমরা ঠিকই মানিয়ে নিয়েছি। এ ম্যাচ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।’
বার্বাডোজের এ ম্যাচে অসংখ্য রেকর্ড হয়েছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টাই হওয়া মাত্র চতুর্থ ম্যাচ এটি। এর আগে সর্বশেষ টাই হয়েছিল ২০১২ সালে। ২০১২ বিশ্বকাপে সর্বশেষ টাই হয়েছিল নিউজিল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ। একই আসরে টাই করেছিল শ্রীলংকা ও নিউজিল্যান্ড। দুটি সুপার ওভারেই হেরেছিল নিউজিল্যান্ড! নামিবিয়ার এটি প্রথম আর ওমানের ইতিহাসে দ্বিতীয় টাই।
ইনিংসে ওমানের ছয়জন ব্যাটসম্যান হয়েছেন এলবিডব্লিউ। ছেলেদের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এটি রেকর্ড। এর আগে ইনিংসে সর্বোচ্চ ৫টি করে এলবিডব্লিউর রেকর্ড আছে নেদারল্যান্ডস (প্রতিপক্ষ শ্রীলংকা, শারজা ২০২১), স্কটল্যান্ড (প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান, শারজা ২০২১) ও নেদারল্যান্ডসের (প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে, বুলাওয়ে ২০২২)। গতকাল নামিবিয়ার একজন হয়েছেন এলবিডব্লিউ। ম্যাচের মোট এলবিডব্লিউ সাতটি। একটির জন্য রেকর্ড হয়নি। সর্বোচ্চ ৮টি এলবিডব্লিউর ঘটনা ঘটে ২০২২ সালে বুলাওয়েতে নেদারল্যান্ডস-জিম্বাবুয়ে ম্যাচে।
পাওয়ার প্লেতে উইকেট শিকারের রেকর্ডও হয়েছে কাল। তিনটি উইকেট নিয়েছেন নামিবিয়ার পেসার ট্রাম্পেলম্যান। এ নিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বার এমন কীর্তি গড়লেন এ বামহাতি পেসার। ২০২১ সালে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওভারেই নিয়েছিলেন তিন উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা: ১৯.১ ওভারে ৭৭ (নিসাঙ্কা ৩, কুসাল মেন্ডিস ১৯, কামিন্দু মেন্ডিস ১১, হাসারাঙ্গা ০, সামারাউইক্রামা ০, আসালাঙ্কা ৬, ম্যাথিউস ১৬, থিকশানা ৭*, পাথিরানা ০, থুশারা ০; ইয়ানসেন ৩.১-০-১৫-০, রাবাদা ৪-১-২১-১, বার্টমান ৪-১-৯-১, মহারাজ ৪-০-২২-২, নরকিয়া ৪-০-৭-৪)
দক্ষিণ আফ্রিকা: ১৬.২ ওভারে ৮০/৪ (ডি কক ২০, হেনড্রিকস ৪, মারক্রাম ১২, স্টাবস ১৩, ক্লসেন ১৯*; মিলার ৬*; ম্যাথিউস ৩-০-১৬-০, থুশারা ৩-০-১৮-১, শানাকা ৩-১-৬-১, পাথিরানা ৩-০-১২-০, হাসারাঙ্গা ৩.২-০-২২-২, থিকশানা ১-০-৩-০)
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: আনরিক নরকিয়া