তোমার অট্টালিকা,/কার খুনে রাঙা? ঠুলি খুলে দেখ, প্রতি ইটে আছে লেখা- কবি নজরুল এ কথা বলে গেছেন আরো অনেক আগেই। কিন্তু, কাতার বিশ্বকাপে শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে আলোচনায় যেন আরো জীবন্ত হয়েছে এসব লাইন।
বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছেই না কাতার বিশ্বকাপকে ঘিরে। এবার রীতিমতো বোমা ফাটালো ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম, ‘দ্যা গার্ডিয়ান’।
তাদের দাবি, গত দশ বছরে কাতার বিশ্বকাপের প্রস্তুতির কাজে এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে সাড়ে ছয় হাজারেরও বেশি প্রবাসীর। অর্থাৎ প্রতি সপ্তাহে গড়ে ১২ জনের মৃত্যু।
বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও শ্রীলংকার সরকারি হিসাব ও গার্ডিয়ানের সূত্র বলছে, গত দশকে কাতারে ৫,৯২৭ জন প্রবাসী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আর মৃত বাংলাদেশির সংখ্যা পেরিয়েছে হাজারের সংখ্যা।
অবশ্য জানা যায়নি ফিলিপাইনি ও কেনিয়ার মৃতের সংখ্যা, আর সেখানেই গার্ডিয়ানের সন্দেহ প্রবাসী শ্রমিকের মৃত্যুর সংখ্যাটা আরো অনেক বিশাল।
আসন্ন বিশ্বকাপকে ঘিরে কাতার তৈরি করছে নতুন সাত স্ট্যাডিয়াম, ডজনখানেক বড় প্রকল্পের কাজ শেষ বা চলমান, যার মধ্যে আছে নতুন বিমানবন্দর তৈরি, সড়ক ও যোগাযোগ, হোটেল, এবং পুরো একটা নতুন শহর তৈরির কাজ।
এমন মৃত্যুতে শুধু কয়েকজন শ্রমিকই প্রাণ হারাননি, হাজার হাজার পরিবার হারিয়েছেন তাঁদের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে।
বাংলাদেশের শহীদ মিয়া কয়েক লাখ টাকা ঋণ করে পাড়ি জমিয়েছিলেন কাতারে। সেখানেই বাসার নিচে জমে থাকা পানিতে বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তার মৃত্যুতে যেমন তার পরিবারের মৃত্যু দিতে হয়েছে স্বপ্নকে, ঠিক তেমনি ঋণের বোঝা কাঁধে উঠেছে তার বৃদ্ধ বাবা-মায়ের।
ভোট নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ছিলো আগ থেকেই, সাথে ছিলো শ্রমিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো গুরুতর অভিযোগ। ‘গার্ডিয়ান;এর এই প্রতিবেদন যেন আগুনে ঘি ঢালার মতোই।
ফুটবল বিশ্বকাপকে ঘিরে পৃথীবি জুড়ে টিভি স্ক্রিনে নজর রাখে কোটি কোটি দর্শক। কিন্তু, এমন আয়োজনকে ঘিরে মৃত্যুর মিছিল বন্ধ হোক, বন্ধ হোক প্রবাসীদের লাশকে ঘিরে স্বজনদের কান্না।