কাবরেরার পদত্যাগ দাবি করলেন বাফুফে সদস্য
বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের স্প্যানিশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরার দল নির্বাচনে ত্রুটি ও কৌশলে অপরিপক্কতা নিয়ে বেশ বিতর্ক চলছে। এর মাঝেই দেশের ফুটবল ইতিহাসে নজিরবিহীন এক ঘটনা ঘটল আজ।
১৪ জুন, শনিবার বাফুফের নিজস্ব সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরার পদত্যাগের দাবি তুললেন এই সংস্থার সদস্য সাখাওয়াত হোসেন।
উপস্থিত নির্বাহী কমিটির ১৪ সদস্যের সামনে সাখাওয়াত দাবি তোলেন,
‘আমার একটাই এজেন্ডা, কাবরেরার পদত্যাগ চাই।’
সাখাওয়াত হোসেন শুধু বাফুফের নির্বাহী কমিটির সদস্যই নন, বাফুফের জাতীয় দল কমিটিরও সদস্য। তাঁর এই প্রকাশ্য অবস্থান স্পষ্ট করে দিল, এটা শুধু ব্যক্তিগত ক্ষোভ নয়।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ নিয়ে শুধু ফুটবলপ্রেমী বা সাবেক ফুটবলারদের মধ্যেই নয়, মতবিরোধ আছে বাফুফের অভ্যন্তরেও।
১০ জুন জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচে হামজা চৌধুরীদের হারের পর কোচের সমালোচনা হয়েছে অনেক। এই হারের জন্য সাবেক ফুটবলারদের অনেকে দায়ী করছেন কাবরেরার কৌশলকে।
বাফুফে আজ ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মহাখালীর রাওয়া কমপ্লেক্সে। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির ১৪ সদস্য।
এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য ছিল, আগামী ছয় মাসের পরিকল্পনা ও কার্যক্রম সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরা।
বিভিন্ন কমিটির প্রধানেরা (কয়েকটি বাদে) নিজেদের দায়িত্বসংক্রান্ত পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। তবে আয়োজনজুড়েই ছিল একধরনের পূর্বপরিচিত ছকের পুনরাবৃত্তি।
সিঙ্গাপুর ম্যাচে টিকিট এবং দর্শক অব্যস্থাপনাসহ বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা থেকে শিক্ষা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সভাপতি তাবিথ আউয়াল।
তবে বাফুফের আগামী ছয় মাসের কার্যক্রমে কোনো উল্লেখযোগ্য নতুন ঘোষণা বা ভিন্নমাত্রার উদ্যোগ তেমনভাবে উঠে আসেনি।
একপর্যায়ে মঞ্চে মাইক্রোফোন হাতে পান বাফুফের নির্বাহী সদস্য সাখাওয়াত হোসেন। তাঁকে আহ্বান জানানো হয়েছিল মূলত বাফুফের অভ্যন্তরীণ অডিট ও সরকারি সম্পর্ক বিষয়ে আলোচনার জন্য।
কিন্তু তিনি সরাসরি সে প্রসঙ্গে না গিয়ে বরং অডিট বা প্রশাসনিক প্রস্তাবের গণ্ডি ভেঙে তিনি বিস্ফোরক এক দাবি তোলেন।
সাখাওয়াত বলেন,
‘আমার এজেন্ডা অডিট নয়। আমার একমাত্র এজেন্ডা জাতীয় দল। এই কমিটির একজন সদস্য হিসেবে স্পষ্ট করে বলছি, আমি কাবরেরার পদত্যাগ চাই। এটা ১৮ কোটি মানুষের দাবি। আমি ১৮ কোটি মানুষকে মুক্ত করতে চাই।’
২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশের কোচ হিসেবে আছেন কাবরেরা।
বাংলাদেশ জাতীয় দলে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় নিয়োগপ্রাপ্ত বিদেশি কোচ তিনি। তাঁর সঙ্গে বাফুফের চুক্তি আগামী মার্চ পর্যন্ত।
আর সে কথা তিনি সিঙ্গাপুর ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মলনে মনে করিয়ে দেন সাংবাদিকদের।
কাবরেরার কাছে প্রশ্ন ছিল, সিঙ্গাপুর ম্যাচে হারলে চাকরি হারানোর আশঙ্কা করছেন কি না। এ প্রসঙ্গে তিনি নিজের মেয়াদের কথা মনে করিয়ে দেন।
তবে দুই পক্ষ চাইলে সমঝোতার ভিত্তিতে আগেই চুক্তি শেষ হতে পারে।
কাবরেরার পদত্যাগ দাবি করে বাফুফে সদস্যের দেওয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে সভাপতি তাবিথ আউয়াল নিয়েছেন সতর্ক অবস্থান। তাঁর কথা,
‘বিষয়টা নিয়ে আমরা নিজেদের মধ্যে কথা বলব। কোচের কাজের পর্যালোচনা হবে। সেটা হওয়ার পর কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হলে নেওয়া হবে। তার আগ পর্যন্ত যেভাবে চলছে সেভাবে চলবে।’
১০ জুন সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে পরদিনই স্পেনে ছুটিতে চলে গেছেন কাবরেরা। ম্যাচের আগে কয়েক দিন দলের সঙ্গে থাকা ছাড়া বেশির ভাগ সময় তিনি ছুটিতেই থাকেন।
বাফুফে সভাপতি তাঁর বক্তব্যে জাতীয় ক্রীড়া উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর সুপারিশ করেছেন। একই সঙ্গে ক্রীড়াসামগ্রী আমদানিতে ৩৬ শতাংশ যে কর নেওয়া হয়, তা কমাতে সুপারিশ করেন তিনি।
সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আরও বাড়ানোর কথাও বলেছেন সভাপতি।
তিনি আরও বলেছেন, নারী-পুরুষ জাতীয় দল ও বয়সভিত্তিক দল ফুটবলে উন্নতি করেছে। জেলা লিগে মনোযোগ বাড়াতে চায় বাফুফে। মাঠের সংকট দূর করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।
তৃণমূলে ফুটবলের উন্নয়নে আরও বেশি কাজ করার ভাবনা আছে বাফুফের, এমনটাই বলেছেন সহসভাপতি নাসের শাহরিয়ার জাহেদী।
তিনি জানান,
‘কিশোর-কিশোরীদের ফুটবলে আগ্রহী করতে জোর দিচ্ছে বাফুফে। সারা দেশে ২৭২টি একাডেমিকে সার্বিক বিষয়ে যেসব সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে, তা আরও বাড়ানো হবে।’
সহসভাপতি সাব্বির আহমেদ আরেফ জানিয়েছেন, দ্রুতই প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় বিভাগ লিগ শুরু করা হবে।
বাফুফের আরেক সহসভাপতি ফাহাদ করিম জানিয়েছেন,
১০ জুন সিঙ্গাপুর ম্যাচ উপলক্ষে বাংলাদেশের ফুটবলে বেশ কিছু পৃষ্ঠপোষক পাওয়া গেছে, যা ফুটবলকে নতুন ধারায় নিয়ে এসেছে।
আট মাসে বাফুফের ফেসবুকে ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন ভিউ পাওয়া গেছে। শিগগিরই আরও কিছু অনলাইন প্লাটফর্ম তৈরি করা হবে।
২৮ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্রবাসী ফুটবলারদের ট্রায়াল। এতে অংশ নেবেন ৪০ জনের বেশি খেলোয়াড়। ট্রায়ালে অংশ নিতে পারেন দুজন নারী ফুটবলারও।
বাফুফের সদস্য ইকবাল হোসেন জানিয়েছেন, আগামী মাসের মধ্যে দেশের ২০টি জেলার লিগ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
অন্যদিকে পাইওনিয়ার লিগ আয়োজন নিয়ে পরিকল্পনা তুলে ধরেন টিপু সুলতান।
তিনি জানান, উত্তর ও দক্ষিণ—এই দুই অঞ্চলে ভাগ করে অক্টোবরের শেষে শুরু হবে এবারের পাইওনিয়ার লিগ, যেখানে অংশ নেবে ৭০টির বেশি দল।