শুভ জন্মদিন ভয়েজ অব বাংলাদেশ!
২০০৩ সালের কথা। পাকিস্তানের সঙ্গে ঐতিহাসিক মুলতান টেস্ট খেলছে বাংলাদেশ। অলক কপালির একটা ক্যাচ ডাইভ দিয়ে ধরতে গিয়ে মাটিতে ফেলে দিলেন পাকিস্তানের অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক রশিদ লতিফ। তবে কৌশলে মাটি থেকে বল তুলে আউটের আপিল করলে তাতে আম্পায়ার আউট দিয়ে দিলেন। সেদিন রশিদের এমন কান্ডে ধারাভাষ্যকক্ষে রমিজ রাজার সাথে কী এক কান্ডই না ঘটল বাংলাদেশি এক ধারাভাষ্যকারের সঙ্গে। সেই ঘটনা বোধহয় ক্রিকেট পাড়ায় কমবেশি সবারই জানা। সেদিনের প্রতিবাদী মানুষটার নাম আতহার আলী খান। যিনি আজকের দিনে ফেলে এসেছেন জীবনের ৬০ টি বসন্ত।
কমেন্ট্রি বক্সে বাংলাদেশের পক্ষে লড়ে যাওয়া আতহারের জন্ম ১৯৬২ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আতহার ’৮০’র দশকে ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের অন্যতম সদস্য। দেশের জার্সিতে ১৯ ওয়ানডে খেলে প্রায় ৩০ গড়ে ৫৩২ রানের পাশাপাশি ৬টি উইকেট শিকার করেছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের আজকের যে অবস্থান, তাতে ক্রিকেটার আতহারের অবদান ভুলবার মত নয়।
ক্রিকেট, মানে, ২২ গজের লড়াইটা যেমন ব্যাটে-বলে হয়, তেমনি হয় ধারাভাষ্য কক্ষেও। এক একটি ম্যাচের রোমাঞ্চ বহুগুণেই বাড়িয়ে দিতে পারেন ধারাভাষ্যকাররা। টনি গ্রেগ, ইয়ান বিশপ কিংবা হার্শা ভোগলে। যুগে যুগে যারা মাইক্রোফোনে ক্রিকেটকে জীবন্ত করে তুলছেন তাদের সাথে দুই যুগের বেশি সময় ধরে একমাত্র লাল-সবুজের প্রতিনিধিত্ব করছেন আতাহার আলী খান। একবাক্যে ‘ভয়েস অব বাংলাদেশ’।
ধারাভাষ্যক্ষে যিনি বাংলাদেশের হয়ে গলা ফাটান, খারাপ সময়ে প্রতিপক্ষের খোঁচা উপেক্ষা করে লড়ে যান। কমেন্ট্রি বক্সের এক নির্ভীক যোদ্ধা হয়ে।
খেলোয়ারি জীবনে দারুন স্টাইলিশ ব্যাটসমান আতহার আলী খান আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের পর বনে গেলেন আন্তর্জাতিক ধারাভাস্যকার। সঙ্গে ছিল ক্রিকেটীয় জ্ঞান এবং কথার মারপ্যাঁচের ক্ষমতা। কিন্তু এখানেও যে লড়াই!
আতহার আলী খান যে সময়ে ধারাভাষ্য শুরু করেন তখনকার দিনে বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের সফলতা ছিল কালেভদ্রের মতো। বাংলাদেশের একের পর এক ম্যাচে হার, হোয়াইওয়াশের লজ্জার ভার ধারাভাষ্য কক্ষে বসেও নিতে হয়েছে তাঁকে।
তারপরও থেমে থাকেননি আতহার আলী। লম্বা রেসের ঘোড়ার মতো ছুটেছেন প্রতিনিয়ত। সেই ছুটে চলা চলুক আরো বহুকাল। জন্মদিনে আপাতত এটুকুই চাওয়া ‘ভয়েজ অব বাংলাদেশ’ আতহার আলীর কাছে।