সংবর্ধনায় বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে উপস্থাপনের ইচ্ছা ব্যক্ত করলেন ঋতুপর্ণারা
ইতিহাস গড়ে প্রথমবার এএফসি নারী এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নেয়া বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের সংবর্ধনায় বাফুফে সভাপতি তাবিথ আওয়াল বললেন, 'এখন লক্ষ্য একটাই-মিশন অস্ট্রেলিয়া।'
সন্ধ্যায় মিয়ানমার থেকে ব্যাংকক হয়ে ঢাকা। মধ্যরাতে বাসে চেপে বিমানবন্দর থেকে হাতিরঝিলের এম্পিথিয়েটার। দীর্ঘ ভ্রমণ ক্লান্তি ভুলে মধ্যরাতের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ঋতুপর্ণা-আফঈদারা উচ্ছ্বাসভরা কণ্ঠে বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে উপস্থাপনের ইচ্ছা ব্যক্ত করলেন।
প্রথমবারের মতো ফিফর মূল পর্বে জায়গা করে নিয়েছে লাল-সবুজের মেয়েরা।
তাদের এই গৌরব উদ্যাপনের জন্য রোববার (৬ জুলাই) দিবাগত রাতে রাজধানীর হাতিরঝিল এম্ফিথিয়েটারে সংবর্ধনার আয়োজন করে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)।
রাত ২টা ২৯ মিনিটে খেলোয়াড়, কোচ, স্টাফদের নিয়ে টিম বাস হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে রওনা দেয় হাতিরঝিলের উদ্দেশে।
তাতে আড়াইটায় সংবর্ধনা দেওয়ার নির্ধারিত সময় যায় পেরিয়ে। মধ্যরাতের আয়োজন গিয়ে পৌঁছায় আরও গভীর রাতে।
টিম বাসে ওঠার পর ফিজিওর কাঁধে মাথা রেখে ঝিমাতে দেখা যায় ক্লান্ত মারিয়া মান্দাকে। অন্যদিকে, আফঈদাদের কেউ কেউ ক্লান্তি ভুলে হাসি মুখে গণমাধ্যকর্মীদের উদ্দেশে নাড়লেন হাত।
রাত তিনটার একটু পর আলো ঝলমলে মঞ্চে আসেন হাস্যোজ্জ্বল বাংলার দামাল মেয়েরা। তাদেরকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন বাফুফের কর্মকর্তাবৃন্দ।
জয়ী দলের সবার সামনে ঢাউস বোর্ডে লেখা ছিল ‘কোয়ালিফাইড’।
একটু পর উপস্থাপক নিজেই গিয়ে তাদের হাতে তুলে দেন জাতীয় দলের পতাকা।
তবে কনফেত্তির ওড়াউড়ি, রক মিউজিক সব কিছুকে ছাপিয়ে গেছে মাঝরাতে একত্রিত হওয়া ফুটবলপ্রেমীদের উচ্ছ্বাস।
এত রাতেও সমর্থকরা এসেছিলেন মেয়েদের অভিনন্দন জানাতে। সমর্থকদের এই ভালোবাসা দেখে ঋতুপর্ণারাও ক্লান্তি ভুলে উপভোগ করতে থাকেন অনুষ্ঠান।
সাবেক ফুটবলার আমিনুল হক মঞ্চে এসে স্বাগত বক্তব্যে সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন,
“বাংলাদেশের ফুটবল ক্রেজ এটাই। বাংলাদেশের মানুষ যে ফুটবলকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে, এটাই তার প্রমাণ।”
এশিয়ান কাপ থেকে বিশ্বকাপ ও অলিম্পিকসের মঞ্চে মেয়েরা বাংলাদেশকে নিয়ে যাবে বলে আশাবাদও জানান আমিনুল।
তারকা ফরোয়ার্ড ঋতুপর্ণা চাকমার কথায় ফুটে ওঠে দেশের সংগ্রামী মেয়েদের প্রতিচ্ছবি। আগামী মার্চে অস্ট্রেলিয়াতে হতে যাওয়া এশিয়ান কাপের সেরা ছয় দলের মধ্যে থেকে বিশ্বকাপে খেলার আশাবাদও জানান তিনি।
“প্রথমেই ধন্যবাদ জানাচ্ছি দর্শকবৃন্দকে। এত রাতে আমাদের বরণ করে নেওয়ার জন্য। সভাপতি ও কিরণ ম্যাডামকে অভিনন্দন এত কষ্ট করে এই আয়োজন করার জন্য। আজকে আমরা এখানে এসেছি দলীয় প্রচেষ্টায়, ফুটবল কোনো ব্যক্তিগত নৈপুণ্যনির্ভর খেলা নয়।
আমরা বাংলাদেশের মেয়েরা জানি, কিভাবে কঠিন পরিস্থিতিতে লড়াই করতে হয়। আপনারা আমাদের ওপর বিশ্বাস রাখবেন, আমরা আপনাদের নিরাশ করব না। আমরা এশিয়া নয়, বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে নিয়ে যেতে চাই।”
অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার প্রান্তির কণ্ঠেও ছিল বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে উপস্থাপনের প্রত্যয়,
“প্রথমেই ধন্যবাদ জানাতে চাই, তাবিথ আউয়াল স্যার, কিরণ (মাহফুজা আক্তার) ম্যাডামসহ সবাইকে এত রাতে এত সুন্দর একটা আয়োজনের জন্য। কিরণ ম্যাডামকে ব্যক্তিগতভাবে আমার কৃতজ্ঞতা …এই মুহূর্ত ভোলার মতো নয়। কেবল দক্ষিণ এশিয়া নয়, বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে নিয়ে যেতে পারি।”
কোচ পিটার জেমস বাটলার অল্প কথায় সবাইকে ধন্যবাদ জানালেন। ইতিহাস গড়া মেয়েদের প্রশংসায় ভাসালেন বেশি।
“আমি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিব। কারণ সকাল হতে বেশি দেরি নেই। আমি এই সময়ে কথা বলতে অভ্যস্ত নই। প্রথমত বাফুফে সভাপতি, মিস কিরণ, কমিটির সদস্য, সব খেলোয়াড় এবং টিম স্টাফ সবাইকে কৃতজ্ঞতা। আপনাদের ছাড়া আমরা এখানে আজ থাকতে পারতাম না।
বিশেষ করে সমর্থকদের প্রতি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। এত রাতেও তারা এসেছেন, আমি আন্তরিকভাবে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।”
“এটা কঠিন একটা সপ্তাহ ছিল এবং আমি বলব, সম্ভবত এটা স্রেফ কঠিন একটা সপ্তাহ ছিল না, কিন্তু তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, সবশেষ ৯ থেকে ১২ সপ্তাহ আমাদের অনেক কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। গত বছর থেকে যেটা শুরু হয়েছিল, আমাদের ওঠা-নামার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। টালমাটাল সময় ছিল।
তবে, এই মেয়েদের ছাড়া আজ আমরা এখানে থাকতে পারতাম না। মেয়েরা যা করেছে, সে জন্য তাদের ধন্যবাদ। টিম স্টাফসহ সবাইকে ধন্যবাদ।”
-যোগ করেন তিনি।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী শুরুতেই প্রশংসায় ভাসান ঋতুপর্ণাকে। সামনের পথচলায় মেয়েদের জন্য শুভকামনাও জানান তিনি।
‘প্রথমত খেলোয়াড়দের ধন্যবাদ। আপনারা দুর্দান্ত। আপনাদের খেলা আমি দেখেছি। আমি কিছুদিন আগে, বোধহয়, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জয়ের পর আমি ফেইসবুকে লিখেছিলাম, বাংলাদেশের অ্যাথলেটদের মধ্যে ঋতুপর্ণা আমার ফেভারিট।
আমি একটু কারেকশন করতে চাই। আপনি আমার কাছে ফেভারিট স্পোর্টস পার্সোনালিটি। আপনি যেভাবে বলেছেন, বাংলাদেশের মেয়েরা জানে কীভাবে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দৌড়াতে হয়…এটা অ্যামেজিং।”
বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল তার সমাপণী বক্তব্যে খেলোয়াড়, কোচ, টিম স্টাফসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানান। দলকে মনে করিয়ে দেন, সামনে এখন একটাই লক্ষ্য অস্ট্রেলিয়াতে হতে যাওয়া এশিয়ান কাপের কথা।
“শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের নারী জাতির পক্ষ থেকে আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনারা দুটি কাজ করেছেন। আপনারা নতুন করে ইতিহাস লিখছেন এবং আমাদের সমাজের মন-মানসিকতা বদলানোর একটা যাত্রায় আমাদের এগিয়ে নিচ্ছেন।
আমরা ১৮ কোটি মানুষ, এটা একটা টিম ওয়ার্ক। আমরা ১৮ কোটি মানুষের দল, আমরা আপনাদের পাশে আছি। আপনাদের সমর্থন দেওয়ার জন্য। আপনারা এগিয়ে যান। এখন আমাদের একটাই লক্ষ্য-মিশন অস্ট্রেলিয়া।”
সপ্তাহখানেক পর গোলকিপার রুপনা চাকমা, মারিয়া মান্দা ও শামসুন্নাহার সিনিয়রের যাওয়ার কথা রয়েছে। তাই অনেকটা তড়িঘড়ি করে রাতেই ফুটবলারদের সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে।
- স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া,
- চীন,
- দক্ষিণ কোরিয়া,
- জাপান,
- বাংলাদেশ,
- ফিলিপাইনস,
- ভিয়েতনাম,
- ভারত,
- চাইনিজ তাইপে,
- উত্তর কোরিয়া ও
- উজবেকিস্তান।
‘এ’ গ্রুপের বাছাইপর্ব এখনও শুরু হয়নি।