পরশু দিন–রাত মিলিয়ে তিন ভাগে শারজা থেকে লাহোরে পৌঁছেছেন দলের সদস্যরা। সদ্য শেষ হওয়া আমিরাত সফরের পরে পাকিস্তানে গিয়ে তীব্র গরমের মাঝেও শিশিরাতঙ্কে ভুগছেন লিটনবাহিনী!
প্রথম অনুশীলন হয়েছে কাল সন্ধ্যার পর ফ্লাডলাইটের নিচে, আজও সে রকমই হওয়ার কথা। আমিরাত–শিক্ষা থেকে লাহোরের অনুশীলনে বোলারদের ভেজা বল দিয়ে বোলিং করানোর পরিকল্পনা নিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট।
শিশিরভেজা কন্ডিশনে বোলিং–ফিল্ডিংয়ের অভ্যাস রপ্ত করার পুরোনো কৌশল এটি।
সর্বশেষ সিরিজে বাংলাদেশের বিপক্ষে এ কৌশল কাজে লাগিয়েই সফল হয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাঁহাতি স্পিনার হায়দার আলী। বালতির পানিতে ডুবিয়ে রাখা ভেজা বল দিয়ে অনুশীলন করেছেন তিনি, যেটার সুফল—শেষ ম্যাচে ৪ ওভারে মাত্র ৭ রানে ৩ উইকেট।
সিরিজের শেষ দুই ম্যাচে যে শিশিরকে হারের বড় দায় দিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাস, হায়দার ভেজা বলের অনুশীলনে জয় করেছেন সেই বাধাই।
শিশিরাতঙ্কে লাহোরে বাংলাদেশ দলও একই পথে হাঁটছে। কিন্তু লাহোরের কন্ডিশনে শিশির কোথায় যে এমন শিশিরাতঙ্কে ভোগা! নাজমূল আবেদীনই কাল বলেছেন,
‘এখানে অন্তত কন্ডিশন নিয়ে সমস্যা নেই। টিভিতে পিএসএলের ফাইনাল দেখলাম, মনে হয়নি, ডিউর (শিশির) কোনো সমস্যা ছিল। ডিউ এখানে আমাদের জন্যও কোনো সমস্যা হবে বলে মনে হয় না।’
এমন কন্ডিশনে খেলার আগেও ভেজা বল দিয়ে অনুশীলন একটা বিষয়ই পরিষ্কার করে তুলছে, প্রস্তুতিতে কোনো ফাঁকফোকর রাখতে চাইছে না টিম ম্যানেজেমন্ট। নাজমূল আবেদীন বললেন সেটাই,
‘আশা করি দুই দিনের অনুশীলনে আমরা শারজার ভুলত্রুটিগুলো শুধরে নেব। সিরিজে ভালো করার জন্য যত রকমভাবে প্রস্তুতি নেওয়া দরকার, টিম ম্যানেজমেন্ট সব ভাবেই খেলোয়াড়দের প্রস্তুত করবে।’
দল পাকিস্তানে যাওয়ার আগেই চোটে পড়ে এই সিরিজ থেকে ছিটকে গেছেন সৌম্য সরকার ও মোস্তাফিজুর রহমান। সৌম্য দেশে ফিরে এসেছেন দুবাই থেকে। মোস্তাফিজ চোট পান আইপিএলের ম্যাচে।
পাকিস্তানের বিপক্ষে মোস্তাফিজের অভাবটা একটু বেশিই উপলব্ধি করবেন নাজমূল,
‘মোস্তাফিজের চোটে পড়াটা হতাশাজনক। ওর অনুপস্থিতি আমাদের বোলিংয়ের ধার কিছুটা হলেও কমাবে।’
কাল বিকেলের দিকে লাহোরের তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
দলের সঙ্গে থাকা বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা প্রধান নাজমূল আবেদীনও টিম হোটেল থেকে মুঠোফোনে সে রকমই ধারণা দিলেন,
‘এখানে আবহাওয়া বেশ গরম। বাংলাদেশে যে রকম দেখে এসেছি, তার চাইতেও অনেক বেশি।’
তবে পাকিস্তানে সেই গরম খুব বেশি গায়ে মাখতে হবে না বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের। গরম তো শীতাতপনিয়ন্ত্রিত হোটেল থেকে বের হলে। খেলা আর অনুশীলনের সময়টুকু ছাড়া সে সুযোগই তো নেই সেখানে!
বরাবরের মতো এবারও কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যে লাহোরের পার্ল কন্টিনেন্টাল হোটেলে আছে তিন টি-টোয়েন্টির সিরিজ খেলতে যাওয়া বাংলাদেশ দল।
অন্যান্য বারের তুলনায় এবার সেখানে নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও কঠোর এবং ক্রিকেটারদের গতিবিধি আরও নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়লেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ, এবার বাংলাদেশ দল পাকিস্তানে গিয়েছেই অস্থির এক সময়ের মধ্যে।
পাক–ভারত সংঘাতের কারণে সিরিজটা হওয়া নিয়েই এক পর্যায়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল।
পরে নতুন সূচিতে পাঁচ টি–টোয়েন্টির সিরিজ থেকে দুই ম্যাচ ছেঁটে সিরিজ এখন তিন টি–টোয়েন্টি ম্যাচের, যার প্রথমটি হবে আগামীকাল লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে। একই মাঠে পরের দুই ম্যাচ ৩০ মে ও ১ জুন।
পাকিস্তানে নিরাপত্তার কঠোরতা যেহেতু বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের আগেও দেখা, এরকম কিছুর জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই সেখানে গিয়েছেন তাঁরা।
তবে মানসিক প্রস্তুতি ছিল না পাকিস্তান সফরের ঠিক আগে শারজায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে টি–টোয়েন্টি সিরিজ হারার।
খোদ দল–সংশ্লিষ্টদেরই এখন মনে হচ্ছে, আমিরাতকে একটু হালকাভাবে নেওয়ারই মাশুল দিয়েছে বাংলাদেশ। টিম ম্যানেজমেন্টের অনেক ‘ভুলত্রুটি’ও এখন চোখে পড়ছে তাঁদের।
পাকিস্তানে পিঠাপিঠি আরেকটি সিরিজের আগে অবশ্য এসব নিয়ে আলোচনা সমীচীন মনে করছেন না সংশ্লিষ্টরা। সবার দৃষ্টি এখন কাল থেকে শুরু পাকিস্তান সিরিজের দিকে।
লাহোরে ভালো খেলতে পারলে শারজার হতাশা কিছুটা হলেও কমতে পারে। সে জন্য প্রথম করণীয় হিসেবে সিরিজ শুরুর আগের দুই দিনের অনুশীলনে আমিরাতের ভুলগুলো শোধরানোর চেষ্টা করছে বাংলাদেশ দল।