টাইগারদের খাপছাড়া পারফরম্যান্সে আমিরাতের ঐতিহাসিক জয়
২০৫ রানের সংগ্রহটা যেকোনো পরিস্থিতিতেই ভালো রান। কিন্তু দলটা যখন বাংলাদেশ হাতের মুঠোয় থাকা জয় পিছলে যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। সর্বোচ্চ সংগ্রহ নিয়েও শেষ পর্যন্ত খাপছাড়া পারফরম্যান্সে আমিরাতের ঐতিহাসিক জয় দেখলো শারজার দর্শকরা!
মাত্র ১ বল হাতে রেখে ২ উইকেটের শ্বাসরুদ্ধকর জয়ের দিনে প্রথমবার দুইশোর বেশি তাড়া করার রেকর্ডও গড়ল আরব আমিরাত।
একটা সময় পর ম্যাচের ভাগ্যটা ঠিক পেন্ডুলামের মতোই দুলছিল। শেষ দৃশ্যে নায়কের বেশে স্বাগতিক দলের বাজিমাত। অবশ্য বাংলাদেশও প্রতিপক্ষকে প্রাপ্র্য ঐতিহাসিক জয় উপহার দিতে চেষ্টার কমতি রাখেনি!
গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ওভার থ্রো থেকে চার রান, ম্যাচজুড়ে বাজে বোলিং কিংবা ফিল্ডিং মিস বাদ যায়নি কিছুই।
শেষ দুই ওভারে আমিরাতের প্রয়োজন ছিল ২৯ রান। আক্রমণে এসে প্রথম বলেই উইকেট শরিফুলের। তবে এরপরের গল্পটা একরাশ হতাশার। ৫ বলে গুণে গুণে খরচ করেছেন ১৭ রান।
ম্যাচ ঘুরতে শুরু করে ১৯ তম ওভারের ৫ম বলে। ছক্কা মেরে দেন হায়দার আলি। পরের বলে অনায়াসে রান আউট হতে পারতেন তিনি। কিন্তু শরিফুল থ্রো রাখতে পারেননি স্টাম্পে, উল্টো হয়ে যায় বাউন্ডারি!
শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১২ রান। তানজিম সাকিব শুরু করেন ওয়াইড দিয়ে। হায়দার সিঙ্গেল নেওয়ার পর ফুলটসে ধ্রুভ পারাশারের ব্যাটে ছক্কা হজম করেন তরুণ পেসার।
৪ বলে তখন স্বাগতিকদের প্রয়োজন ৪ রান। পরাশারকে বোল্ড করে আশা জাগান তানজিম। পরের বলে নতুন ব্যাটসম্যান মাতিউল্লাহ নেন সিঙ্গেল। এক নো বলে সমীকরণ আরও সহজ হয়ে যায় আরব আমিরাতের।
পরের বলে দুই রান নিয়ে দলকে অভাবনীয় জয় এনে দেন হায়দার। ঠিক সময়ে তাওহিদ হৃদয় থ্রো করলে টাই করার সুযোগ হয়তো পেতে পারত বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের ২ উইকেটের হারে ৩ মাচের সিরিজে ফিরল ১-১ সমতা।
যে কোনো সংস্করণের ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো আমিরাতের বিপক্ষে হারল বাংলাদেশ। আর আমিরাতের এটা টেস্ট খেলুড়ে চতুর্থ দেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি জয়।
এত রান তাড়া করে এর আগে কখনো কোনো টেস্ট খেলুড়ে দলকে হারায়নি সহযোগী কোনো সদস্য দেশ। এই হার মেনে নেওয়া স্বাভাবিকভাবেই কঠিন যেকোনো অধিনায়কের জন্য, লিটন দাসও ব্যতিক্রম নন।
ম্যাচের পর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অবশ্য তাঁর কথায় হারের একটা কারণও খুঁজে পাওয়া গেল,
‘আমরা ভালো ব্যাট করেছি, উইকেট ভালো ছিল। কিন্তু আমার মনে হয়েছে যখন তারা ব্যাট করেছে, শিশিরের সুবিধা পেয়েছে। তবুও আমরা চেষ্টা করেছি।’
এই হার থেকে কী শিখলেন জানতে চাওয়া হলে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেছেন,
‘আপনাকে বুঝতে হবে যখন এই ধরনের মাঠে খেলবেন, যা দেখে ছোট মনে হয়, শিশির একটা বড় ফ্যাক্টর- আপনি যখন বল করবেন, তখন হিসাব কষতে হবে।’
আরব আমিরাতের জয়ে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন দলটির অধিনায়ক মুহাম্মদ ওয়াসিম। ৪২ বলে ৮২ রান এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে।
উদ্বোধনী জুটিতে মুহাম্মদ জুহাইবকে নিয়ে তাঁর ১০৭ রান আমিরাতের জয়ের ভিত গড়ে দেয়। দারুণ এই জয়ের পর ওয়াসিম নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন,
‘আমার বলার মতো ভাষা নেই। বাংলাদেশকে হারাতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত। দল যে যে পারফরম্যান্স করেছে, তাতেও। আমি সবাইকে আশা দেখিয়েছে এই রান তাড়া করতে পারব, কারণ আমরা কন্ডিশনটা জানি।’