সালাহ, কেইন, নাকি লেভানডফস্কি—সোনার জুতা তুমি কার?
‘ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু’ কি এবার তবে সত্যিই মোহাম্মদ সালাহর হবে? নাকি আরও একবার সোনার জুতা হাত ছাড়া হবে লিভারপুলের মিসরীয় ফরোয়ার্ডের?
পূর্বে বেশ কয়েকবার ‘ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু’ জেতার খুব কাছে গিয়েছিলেন মোহাম্মদ সালাহ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জিততে পারেননি। অন্যদিকে রবার্ট লেভানডফস্কি এবং হ্যারি কেইন কিংবা আর্লিং হলান্ডের এরই মধ্যে সৌভাগ্য হয়েছে পুরস্কারটি জেতার। মৌসুমের শেষে এবারও তারা অবিশ্বাস্য কিছু করে ফেলবেন কিনা তা সময়ই বলে দেবে।
ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু কী
সহজ কথায়, প্রতি মৌসুমে ইউরোপের প্রতিটি দেশের সর্বোচ্চ লিগগুলোর মধ্যে যিনি সবচেয়ে বেশি গোল করেন, তাঁকে দেওয়া হয় সোনার জুতা বা সোনার বুট, যে পুরস্কারের আনুষ্ঠানিক নাম ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু।
এমনিতে ইউরোপের সব লিগই আলাদা করে প্রতি মৌসুমের সর্বোচ্চ গোলদাতাকে গোল্ডেন বুট পুরস্কার দেয়। তবে ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু তাঁকেই দেওয়া হয়, যিনি পুরো ইউরোপে সব লিগ মিলিয়ে গোলের জন্য সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট পান। পয়েন্ট হিসাব করা হয় গোলসংখ্যা ও সংশ্লিষ্ট লিগের মানের ওপর ভিত্তি করে।

পুরস্কারটা দেওয়া শুরু করে ফরাসি ক্রীড়া দৈনিক ‘লেকিপ’, ১৯৬৭-৬৮ মৌসুমে। তখন এর নাম ছিল ‘সোলিয়ের ডি’অর’, ফরাসি ভাষায় যার অর্থ ‘সোনালি জুতা’। প্রথম দিকে এই পুরস্কার পুরো ইউরোপের যেকোনো লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতাকে দেওয়া হতো। তখন লিগের শক্তি বা কোন খেলোয়াড় কত ম্যাচ খেলেছেন, সেগুলো বিবেচনা করা হতো না।
এভাবে চলেছে ১৯৬৮ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত। ওই সময়ে ইউসেবিও, গার্ড মুলার, দুদু জর্জেস্কু ও ফার্নান্দো গোমেসের মতো কিংবদন্তিরা এই পুরস্কার জিতেছেন একাধিকবার।
১৯৯১-৯২ মৌসুমের পুরস্কার দিতে গিয়ে একটি বিতর্কের মধ্যে পড়ে লেকিপ। সাইপ্রাস ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন দাবি করে যে তাদের দেশের একজন খেলোয়াড় ৪০টি গোল করে ওই মৌসুমের পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য।
যদিও লেকিপের বিচারের সেই মৌসুমে যে দুজন সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন, তাঁদের নামের পাশে ছিল ১৯টি করে গোল।
ওই বিতর্কের জেরে শেষ পর্যন্ত স্থগিত হয়ে যায় ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু পুরস্কার দেওয়া এবং ১৯৯৫-৯৬ মৌসুম পর্যন্ত স্থগিতই থাকে।
অবশেষে ১৯৯৬-৯৭ মৌসুম থেকে ইউরোপিয়ান স্পোর্টস মিডিয়া নতুন করে এ পুরস্কার চালু করে। তবে তখন নতুন কিছু নিয়ম যুক্ত করা হয়। চালু হয় নতুন এক পয়েন্ট সিস্টেম।

কীভাবে জয়ী বির্ধারণ করা হয়
নতুন নিয়মানুযায়ী, উয়েফা কো–ইফিসিয়েন্ট তালিকায় প্রথম পাঁচটি লিগের প্রতিটি গোলকে দুই দিয়ে গুণ করে পয়েন্ট দেওয়া হয়। ৬ থেকে ২২ র্যাঙ্কের লিগের গোলকে ১.৫ দিয়ে গুণ করা হয় এবং ২২-এর নিচের র্যাঙ্কের লিগের গোলকে ১ দিয়ে গুণ করা হয়।
এর মানে হচ্ছে ভালো লিগের গোলগুলো দুর্বল লিগের গোলের চেয়ে বেশি মূল্যবান। এভাবে হিসাব করে যিনি সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট পাবেন, তিনিই জিতবেন ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু। এই হিসাব করেই পরে ইউরোপিয়ান স্পোর্টস মিডিয়া ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত স্থগিত হয়ে যাওয়া পুরস্কারও দেয়।
এই পরিবর্তনের পর শুধু দুজন খেলোয়াড় শীর্ষ পাঁচটি লিগের বাইরে খেলে এই পুরস্কার জিতেছেন—২০০০-০১ মৌসুমে স্কটিশ প্রিমিয়ার লিগের হেনরিক লারসন এবং ১৯৯৮-৯৯ ও ২০০১-০২ মৌসুমে পর্তুগিজ লিগার মারিও জার্ডেল।

আরও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে পরবর্তী সময়ে। আগে একাধিক খেলোয়াড় যৌথভাবে এই পুরস্কার জিততে পারতেন। ২০১৯-২০ মৌসুম থেকে নতুন নিয়ম করা হয়, পয়েন্ট সমান হলে কম সময় খেলা খেলোয়াড়কে পুরস্কৃত করা হবে। যদি তারপরও সমতা থাকে, তবে লিগে অ্যাসিস্টের সংখ্যা এবং তারপরও সমতা থাকলে কম পেনাল্টি গোল বিবেচনা করা হবে। শেষ পর্যন্ত যদি সমতা না ভাঙে, তবে পুরস্কারটি ভাগ করে দেওয়া হবে।
এবার কারা এগিয়ে
শুরুতেই বলা হয়েছে, এই মৌসুমে এখন পর্যন্ত লিভারপুলের সালাহই এগিয়ে। ৩৩ ম্যাচে সালাহ গোল করেছেন ২৭টি। প্রিমিয়ার লিগের কো–ইফিসিয়েন্ট র্যাঙ্কিং অনুযায়ী তাঁর পয়েন্ট ৫৪। সালাহর খুব কাছেই যিনি আছেন, তাঁর নামটা ফুটবলপ্রেমীদের কিছুটা অচেনা লাগতে পারে।
স্পোর্টিং লিসবনের সুইডিশ ফরোয়ার্ড ভিক্টর গিওকেরেস, ২৯ ম্যাচে যিনি করেছেন ৩৪ গোল। তবে পর্তুগিজ লিগের কোইফিসিয়েন্ট পয়েন্ট ১.৫ হওয়ায় গিওকেরেসের মোট পয়েন্ট ৫১।

এই দুজনের পরেই আছেন বার্সেলোনার পোলিশ স্ট্রাইকার রবার্ট লেভানডফস্কি, ৩১ ম্যাচ ২৫ গোল করা লেভার পয়েন্ট ৫০। চার নম্বরে বায়ার্ন মিউনিখের ইংলিশ স্ট্রাইকার হ্যারি কেইন, ২৮ ম্যাচে ২৪ গোলে তাঁর পয়েন্ট ৪৮।
পাঁচে থাকা আতালান্টা ফরোয়ার্ড মাতেও রেতেগুই ৩১ ম্যাচে করেছেন ২৩ গোল, পয়েন্ট ৪৬। এ ছাড়া ২৯ ম্যাচে ২২ গোলে ৪৪ পয়েন্ট নিয়ে ছয়ে আছেন রিয়াল মাদ্রিদের কিলিয়ান এমবাপ্পে।
প্রিমিয়ার লিগে লিভারপুলের আরও ৫ ম্যাচ বাকি, লা লিগায় বার্সেলোনারও তা-ই। তবে চোট পাওয়ায় লেভার সবগুলো ম্যাচ খেলার সম্ভাবনা খুবই কম। এই জায়গায় সালাহ তাই এগিয়ে থাকছেন। অবশ্য লিভারপুলের প্রিমিয়ার লিগ নিশ্চিত হয়ে যেতে পারে পরের ম্যাচেই।
সে ক্ষেত্রে লিভারপুল কোচ আর্নে স্লট চাইলে সালাহকে বাকি ম্যাচগুলোতে বিশ্রামও দিতে পারেন। যদি সে রকম কিছু হয়, তখন কিন্তু লেভা কিংবা কেইনের সুযোগ কিছুটা বেড়ে যাবে। অবশ্য এরই মধ্যে যদি কেউ কোনো ম্যাচে জোড়া গোল বা হ্যাটট্রিক করে ফেলেন তখন তাঁর সম্ভাবনাই থাকবে বেশি।