কিংসকে প্রায় ছিটকে দিয়ে মোহামেডানের শিরোপা স্বপ্ন উজ্জ্বল করলেন দিয়াবাতে
দুই দলের ফুটবলারদের মধ্যে হাতাহাতি, সমর্থকদের মধ্যে বোতল ছোড়াছুড়ি, পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত করা এবং লাল কার্ড। একটা ফুটবল ম্যাচে যতো রকমের উত্তেজনার রসদ থাকতে পারে এর সব কিছুই যেন ছিল বসুন্ধরা কিংস ও মোহামেডানের ম্যাচে। এর মাঝেই কিংসকে প্রায় ছিটকে দিয়ে মোহামেডানের শিরোপা স্বপ্ন উজ্জ্বল করলেন দিয়াবাতে।
শনিবার (১২ এপ্রিল) বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল দেশের ফুটবলের দুই বড় ক্লাব। যে ম্যাচে দশ জন হয়ে পড়া বসুন্ধরা কিংসকে ২-১ গোলে হারিয়েছে মোহামেডান।
সাদা কালোদের হয়ে দুটি গোলই করেছেন সোলেমান দিয়াবাতে। আর বসুন্ধরা কিংসের গোলটি রাকিব হোসেনের।

এই জয়ে যেন প্রথমবারের মতো প্রিমিয়ার ফুটবল লিগের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখছে মোহামেডান। একই সঙ্গে মোহামেডানের কাছে এই হারে শিরোপা দৌড় থেকে পুরোপুরি ছিটকে গেল প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়নরা।
১১ ম্যাচে ৩০ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরে মোহামেডান। সমান ম্যাচে ২৬ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে আবাহনী। আর বসুন্ধরা কিংসও সমান ম্যাচ খেলে ২০ পয়েন্ট নিয়ে তিনে রয়েছে।
সময়টা মোটেও ভালো যাচ্ছে না বসুন্ধরা কিংসের। গত সপ্তাহে ফেডারেশন কাপে হেরেছে দশ জনের আবাহনীর কাছে। এরপর নিজেদের ঘরের মাঠে এমন হার! কিংসের দুর্গ ভেঙে আরও একবার জয় ছিনিয়ে নিয়ে গেল মোহামেডান।
বসুন্ধরা কিংসের এই হারে দায় আছে তাদের ফরোয়ার্ড রিমন হোসেনের। ম্যাচের শুরুর দিকে একবার হলুদ কার্ড দেখা রিমন বিরতির খানিক আগে অহেতুক ইম্যানুয়েল সানডের জার্সি টেনে ফেলে দিলেন।
অথচ, এমন একটা জায়গায় সানডের জার্সিটা টেনে ধরলেন যেখানে গোল হওয়ার কোনও সম্ভাবনায় ছিল না মোহামেডানের। অভিজ্ঞ একজন ফুটবলার কিভাবে এমন অপেশাদার আচরণ করতে পারেন সেটা দেখে নিশ্চয় কোচ ভ্যালেরিউ তিতেও অবাক হয়েছেন।
ম্যাচের শুরুর দিকে সেভাবে কোনও চোখে পড়ার মতো আক্রমণ করতে পারেনি দুই দলের কেউ। বরং সোলেমান দিয়াবাতেকে আটকে রাখার কাজটা ভালোভাবেই করছিল বসুন্ধরার ডিফেন্ডাররা।
কিন্তু তারপরও সুযোগ সন্ধানী দিয়াবাতে সামান্য সুযোগ পেলেই কতখানি ভয়ঙ্কর হতে পারেন সেটা দেখা গেল ম্যাচের ১৭ মিনিটে।

বক্স ছেড়ে অনেকটা এগিয়ে এসে বসুন্ধরা কিংস গোলরক্ষক মেহেদি হাসান শ্রাবণ ক্লিয়ার করতে গিয়েছিলেন একটা বল। সেখানে ছিলেন তাদের ডিফেন্ডার ড্যাসিয়েল ডস সান্টোস।
কিন্তু দুজনের ভুল বোঝাবুঝির ফাঁকে বল কেড়ে নিয়ে বেরিয়ে আসেন দিয়াবাতে। এরপর শ্রাবণকে পরাস্ত করে বল আস্তে করে পাঠিয়ে দেন জালে। মুহূর্তেই উল্লাসে ফেটে পড়ে মোহামেডান গ্যালারি।
কিন্তু ম্যাচে ফিরতে বেশি সময় নেয়নি বসুন্ধরা কিংস। ২৫ মিনিটে জটলা থেকে রাকিব হোসেন সমতায় ফেরান কিংসকে (১-১)।
অবশ্য বিরতির পর আরেকবার পিছিয়ে পড়তে পারতো বসুন্ধরা কিংস। ৫২ মিনিটে বল ক্লিয়ার করতে জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন শ্রাবণ। ওই সময় গোললাইন সেভ করেন তপু।
এই ম্যাচেই আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার হুয়ান লেসকানোর অভিষেক হয়েছেন। কিন্তু বিরতির পর যখন নেমেছেন তিনি, ততক্ষণে ব্যাকফুটে বসুন্ধরা কিংস। একটা ভালো সুযোগ পেয়েছিলেন এই আর্জেন্টাইন। কিন্তু পোস্ট ঘেষে বেরিয়ে যায় বল।
ম্যাচের ৭০ মিনিটে রাকিব ও সুজনের মধ্যে চরম হাতাহাতি হয়েছে। গ্যালারির পেছন থেকে বোতল ছুড়ে মারে দর্শকেরা। এটা নিয়েই কথাকাটি। তখন দুজনকে থামানোর চেষ্টা করেন সতীর্থরা।
এরপর ৭২ মিনিটে দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে চলে বোতল ছোড়াছুড়ি। ইটের টুকরো ছোড়াছুড়ি। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ যায় গ্যালারিতে। মাঝে খেলা বন্ধ থাকে প্রায় ১০ মিনিট।
রাকিবের সঙ্গে এরপর মোহামেডানের ডিফেন্ডার মেহেদি হাসানের আরেক দফা কথাকাটি হয়।
ম্যাচে ১০ জন হয়েও প্রচুর আক্রমণে উঠেছে বসুন্ধরা কিংস। তবে প্রতি আক্রমণ থেকে ৮৫ মিনিটে জয়সূচক গোল করে শিরোপা স্বপ্ন জিইয়ে রাখল দিয়াবাতে।
মাঝ মাঠ থেকে লং বল পেয়ে যান দিয়াবাতে। তার সামনে শুধু ড্যাসিয়েল ও গোলরক্ষক শ্রাবণ। দুজনকে ফাঁকি দিলেন দিয়াবাতে। এরপর শ্রাবণের মাথার ওপর দিয়ে বল তুলে দিলেন জালে। ততক্ষণে মোহামেডান গ্যালারি ভরে উঠেছে রঙিন স্মোক ফ্লেয়ারে।
বাকি সময়ে আর কেউ গোল পায়নি। তবে ম্যাচ শেষে দুই দলের কোনও ফুটবলারই রেফারিদের সঙ্গে হাত মেলায়নি। আর ম্যাচ শেষে মোহামেডান ও ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে মাঠের মধ্যে উল্লাস করেছেন মোহামেডানের ফুটবলাররা।
বসুন্ধরা কিংসের হৃদয় ভাঙা দুটি গোলে নিজেদের শিরোপা স্বপ্ন উজ্জ্বল করার কারণে স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচের সেরা ফুটবলারের পুরস্কার জিতেছেন সোলেমান দিয়াবাতে।