খেলার মাঠে সবার আগে
Nsports-logo

বুধবার, ৫ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সাবেক প্রতিপক্ষ মারের হাতেই জোকোভিচের ২৫তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার ভাগ্য…!

গত গ্রীষ্মে অবসর নেয়া ৩৭ বছরের ব্রিটিশ টেনিস তারকা অ্যান্ডি মারে ভুগছিলেন বিভিন্ন চোটে। যন্ত্রণাহীন টেনিস শেষ কবে খেলেছেন, তা ভুলেই গিয়েছিলেন। তাঁর কাঁধে ছিল। গোড়ালির যন্ত্রণায় কাবু হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর কোমর কখনও ঠিক হবে বলে মনেই হচ্ছিল না। প্যারিস অলিম্পিক্স খেলে যখন চোখের জলে বিদায় নিচ্ছেন মারে, তখন তাঁর ক্লান্ত শরীর বিশ্রাম নেওয়ার জন্য উদ্‌গ্রীব।

টেনিস থেকে অবসর নিয়ে গত চার মাস ধরে নিজের জীবন উপভোগ করছিলেন মারে। তার মাঝেই ব্যাঘাত ঘটান নোভাক জোকোভিচ। তিনি যে দিন মারেকে মেসেজ করেন, সে দিন গল্‌ফ খেলছিলেন ব্রিটিশ তারকা। ২৪টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী মারেকে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে কোচ হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তাঁকে ২৫তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে সাহায্য করতে বলেছিলেন।

দু’দিন পর জোকোভিচের প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলেন মারে। ক্রীড়া জগতে এমন যুগলবন্দি খুব একটা দেখা যায়নি। রবিবার থেকে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে শুরু হবে জোকোভিচের ২৫তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের অভিযান। তাঁর অন্যতম কঠিন প্রতিপক্ষ সেই সময় কোর্টের উল্টো দিকে নয়, থাকবেন কোচের আসনে। সাতটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী জন ম্যাকেনরো বলেন,“এটা আমার কাছে পাগলামি মনে হয়েছে। তবে সেটা ইতিবাচক দিক থেকে।”

 

মারের জন্ম ১৯৮৭ সালের ১৫ মে। জোকোভিচ জন্মেছিলেন ঠিক এক সপ্তাহ পর, ১৯৮৭ সালের ২২ মে। একই সঙ্গে টেনিস জগতে উত্থান তাঁদের। টেনিস কোর্টে তাঁরা ৩৬ বার একে অপরের বিরুদ্ধে খেলেছেন। এর মধ্যে জোকোভিচ জিতেছেন ২৫ বার এবং মারে ১১ বার। সাতটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিলেন তাঁরা। এর মধ্যে পাঁচ বারই জিতেছিলেন জোকোভিচ। মারে তাঁর শিষ্যকে এক বার হারিয়েছিলেন ইউএস ওপেনে (২০১২) এবং এক বার উইম্বলডনে (২০১২)। অর্থাৎ, সমবয়সি দুই টেনিস তারকার মধ্যে সাফল্য অনেক বেশি জোকোভিচের। তা হলে মারে কী এমন শেখাবেন তাঁকে?

মারে তাঁর ছাত্রকে টেকনিক্যাল পরামর্শ হয়তো খুব বেশি দেবেন না। সেটার জন্য তাঁকে কোচ করে আনেননি জোকোভিচ। টেকনিক্যাল পরামর্শের দরকার হলে তিনি রজার ফেডেরার বা রাফায়েল নাদালকে কোচ হিসাবে আনার কথা ভাবতেন। কিন্তু মারে জানেন তরুণ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যন্ত্রণা নিয়ে লড়াই করা কতটা কষ্টের। টেনিস তারকা হয়েও অনামি কারও কাছে হেরে যাওয়ার যন্ত্রণা। জোকোভিচ বলেন, “মারে আমার খেলাকে অনেক বেশি তরতাজা করবে। সেটা আমাকে সাহায্য করবে। ওর মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মানসিকতা রয়েছে। সেটা আমাদের অনেক বেশি কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। আমাদের চিন্তাভাবনাগুলো অনেকটা এক ধরনের।”

বর্তমান তারকাদের কোচ হিসাবে প্রাক্তন তারকা, এই ঘটনা নতুন কিছু নয়। এর আগে জোকোভিচের কোচ ছিলেন উইম্বলডন জয়ী গোরান ইভানিসেভিচ। গত বছর পর্যন্ত দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। এখন তিনি মহিলা টেনিস খেলোয়াড় এলেনা রিবাকিনার কোচ। যিনি এখন বিশ্বের ছ’নম্বর। এক সময় মারের কোচ ছিলেন ইভান লেন্ডলের মতো তারকা। কিন্তু মারে এবং জোকোভিচের যুগলবন্দি সেই সব কিছুর থেকে আলাদা।

জোকোভিচ কখনও ইভানিসেভিচের বিরুদ্ধে খেলেননি। মারেও কখনও র‍্যাকেট হাতে লেন্ডলের মুখোমুখি হননি। কিন্তু মারে এবং জোকোভিচ একে অপরের বিরুদ্ধে খেলেছেন। ৩৬টি ম্যাচে টেনিস কোর্টে তাঁরা একে অপরের বিরুদ্ধে সার্ভ করেছেন। একে অপরকে হারানোর কৌশল বার করেছেন। এ বারে তাঁরাই জুটি বাঁধলেন অন্য প্রতিপক্ষকে হারানোর জন্য।

মারে এবং জোকোভিচ প্রথম বার জুটি বাঁধলেন, এমনটা নয়। ২০০৬ সালের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে তাঁরা ডাবলস খেলেছিলেন একসঙ্গে। তবে প্রথম রাউন্ড পার করতে পারেননি। ১৮ বছর পর আবার জোকোভিচের জয় চাইবেন মারে। কোচের আসন থেকে উৎসাহ দেবেন, জোকোভিচের ভুল ধরিয়ে দেবেন, জোকোভিচ পয়েন্ট পেলে হাততালি দেবেন। মারে বলেন, “আমি জানি কাজটা সহজ নয়। জোকোভিচ নিজের বক্সের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করবে। কঠিন সময়ে নিজের আগ্রাসন প্রকাশ করবে। ও যদি কোর্টে নিজের সেরাটা দেয় এবং বিপক্ষকে হারানোর জন্য সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করে, তা হলে ও আমার দিকে তাকিয়ে যা ইচ্ছে খুশি বলতে পারে। আমার যাবে- আসবে না।”

মারের সঙ্গে জোকোভিচের চুক্তি অস্ট্রেলিয়ান ওপেন পর্যন্ত। তার পর তিনি আর জোকোভিচের ‘গুরুদায়িত্ব’ পালন করবেন কি না তা স্পষ্ট করে বলেননি। জোকোভিচের কেরিয়ারের এক অদ্ভুত সময়ে কোচ হয়েছেন মারে। ২০২৪ সালে প্যারিস অলিম্পিক্সে সোনা জিতলেও ওই বছর কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে পারেননি সার্বিয়ার টেনিস তারকা। ২০১৭ সালের পর এই প্রথম জোকোভিচের বছর শেষ হয়েছে গ্র্যান্ড স্ল্যামহীন ভাবে। এখন খুব বেশি প্রতিযোগিতাও খেলেন না তিনি। গ্র্যান্ড স্ল্যামে নিজের ১০০ শতাংশ দেওয়ার কথা মাথায় রেখেই এমন সিদ্ধান্ত। যে কারণে জোকোভিচ ক্রমতালিকায় নেমে এসেছেন সাত নম্বরে। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে তাই কোয়ার্টার ফাইনালেই তাঁর দেখা হয়ে যেতে পারে কার্লোস আলকারাজ়ের সঙ্গে। যদিও তার আগে তৃতীয় রাউন্ডে রেইলি ওপেলকার মতো প্রতিপক্ষকে সামলাতে হতে পারে। যিনি ব্রিসবেনে জোকোভিচকে হারিয়ে দিয়েছিলেন। তবে ২৪টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী যে সহজে ছাড়বেন না তা সকলেই জানেন। ম্যাকেনরো বলেন, “জোকোভিচ হেরে যাবে এটা ভাবাই যায় না। তবে বয়স থাবা বসাচ্ছে ওর খেলায়।”

অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে ১০ বার খেলেছেন জোকোভিচ। মেলবোর্নের রড লেভার এরিনায় কখনও গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালে হারেননি তিনি। ভুললে চলবে না, এর মধ্যে চার বার জোকোভিচ হারিয়েছেন মারেকে।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More

Privacy & Cookies Policy