খেলার মাঠে সবার আগে
Nsports-logo

শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর ২০২৪

খুদে ক্রিকেটারদের মিরপুরে খেলার আনন্দ

দেশজুড়ে ৩৫২টি বিদ্যালয়ের প্রায় ৭ হাজার ক্ষুদে শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে ৬৫০ ম্যাচের দীর্ঘ লড়াই শেষে বুধবার পর্দা নামে স্কুল ক্রিকেটের এবারের আসরের। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দেন পূর্ব বাসাবোর সিফাত শাহরিয়ার সামি।

চরম বিপর্যয়ে মধ্যে ১৪৮ রানের ইনিংস খেলে দলকে সে পৌঁছে দেয় ২৮৬ রানে। পরে ৯৯ রানে গুটিয়ে যায় কেজি ইউনিয়ন।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে এক পর্যায়ে ৪১ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল পূর্ব বাসাবোর স্কুলটি। সেখান থেকে নাশিত মুসতাকিমের সঙ্গে ১৭৯ রানের জুটি গড়ে তোলে সিফাত। ৩০ রান করে আউট হন নাশিত। আর ১১৫ বলের ইনিংসটি ৯ চারের সঙ্গে ৬ ছক্কায় সাজায় সিফাত।

খেলা শুরুর আগেই ৫টি দ্বিতল বাসে চড়ে মাঠে চলে আসে পূর্ব বাসাবোর শিক্ষার্থীরা। শুরুতে দ্রুত উইকেট হারালে কিছুটা চুপসে যায় তারা। পরে সিফাতের একেকটি বাউন্ডারিতে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায় গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডে। পূর্ব বাসাবোর শিক্ষার্থীরা নিজেদের মতো করে মাতিয়ে রাখে পুরো ম্যাচ।

ফিল্ডিংয়ের সময় জয় প্রায় নিশ্চিত দেখে শিক্ষার্থীরা বনে যায় সংবাদকর্মী। অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী পানির বোতলকে মাইক বানিয়ে পাশের বন্ধুকে ম্যাচ নিয়ে নানা প্রশ্ন করতে থাকেন। একপর্যায়ে অন্য একজন নিজেকে সিফাত পরিচয় দিয়ে দুর্দান্ত শতকের প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করে।

ম্যাচ শেষ হওয়ার পর মাঠে শুরু হয় ক্রিকেটারদের আনন্দ উদযাপন। দেশের প্রধানমত ক্রিকেট ভেন্যুতে জীবনে প্রথমবার মাঠে নামা, পুরো ম্যাচ খেলার রোমাঞ্চ-উত্তেজনা ছিল ক্ষুদে ক্রিকেটারদের চোখে-মুখে। মাঠের বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায় ছবি তোলার হিড়িক।

ফাইনাল ম্যাচটি হওয়ার কথা ছিল গত সোমবার। বৃষ্টির কারণে সেদিন শুরুতে খেলা বাতিল ঘোষণা করা হয়। তখন এত কাছে এসেও মিরপুরের মাঠে খেলার স্বপ্নভঙ্গ হওয়ার বেদনা জেঁকে বসে দুই বিদ্যালয়ের ক্রিকেটারদের মাঝে। সেদিনই সিদ্ধান্ত হয় নতুন সূচিতে হবে ম্যাচটি।

শেষ পর্যন্ত হোম অব ক্রিকেটে খেলার সুযোগ পেয়ে তাই খুশির যেন বাধ মানে না খুদে ক্রিকেটারদের। এর সঙ্গে শিরোপা জেতায় য় এটিকে জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিনই বলে দিল টুর্নামেন্টের সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার জয়ী পূর্ব বাসাবো স্কুলের অধিনায়ক হৃদয় ফকির।

“যে কারও স্বপ্ন থাকে মিরপুরের এই মাঠে খেলা। এর সঙ্গে আমরা ফাইনাল জিতলাম, চ্যাম্পিয়ন হলাম। আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন এটি। বিসিবিকে অনেক ধন্যবাদ আমাদের এই সুযোগটি করে দেওয়ায়। আমাদের সবাই অনেক খুশি। সবারই একটা স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।”

নিজ স্কুলকে ফাইনাল জিতিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পায় সিফাত। ৪ ম্যাচে ১৯২ রান নিয়ে এবারের আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও সে। তবে একটিও সে নিজে গ্রহণ করতে পারেনি। ফিল্ডিংয়ের সময় পাওয়া চোটে তার ঠিকানা হয় হাসপাতাল।

পূর্ব বাসাবোর হাসি-আনন্দের দিনে কিছুটা শঙ্কা হয়েই এসেছিল সিফাতের চোট। ফিল্ডিংয়ে নেমে ২৫তম ওভারে বোলিংয়ে আসেন বাঁহাতি পেসার। পঞ্চম বল করে হ্যামস্ট্রিংয়ের টানে পিচের ওপর লুটিয়ে পড়েন তিনি। পরে হিট স্ট্রোকও হয় তার।

মাঠে প্রাথমিক শুশ্রুষার পরও জ্ঞান ফেরেনি দেখে হাসপাতালে পাঠানো হয় তাকে। ম্যাচ শেষে স্কুলের প্রধান সাইফুল আলম সজন নিশ্চিত করেন, জ্ঞান ফিরেছে সিফাতের। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রাতের মধ্যে বাড়ি ফিরতে পারবে সে।

ম্যাচের দুই পুরস্কার নিজ হাতে নিতে না পারলেও ইনিংস বিরতিতে দারুণ ‘সারপ্রাইজ’ পায় সিফাত। তার ব্যাটিংয়ে মুগ্ধ হয়ে নতুন এক জোড়া ব্যাটিং গ্লাভস উপহার দেন জাতীয় দলের অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম। এছাড়া পূর্ব বাসাবোর ইনিংসের শেষ দিকে ২৬ বলে ৪২ রান করা আলিফ মাহমুদও পায় মুশফিকের এক জোড়া গ্লাভস।

ফিল্ডিংয়ে নামার আগে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় দলের বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের মতো হতে চাওয়ার ইচ্ছার কথা বলেন সিফাত।

“সবাই আমাকে সমর্থন দিয়েছে। তাদের বিশ্বাস ছিল, আমি থাকলে ভালো কিছু করতে পারব। সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা যে আমি করতে পেরেছি। অনেক কষ্ট করেছি। ভালো করে ভালো লাগছে। বোলিংয়ে মুস্তাফিজ ভাইয়ের মতো হতে চাই। আর ব্যাটিংয়ে ভিরাট কোহলি (হাসি)।”

ফাইনালের সেঞ্চুরিয়ান সিফাতের মূল পরিচয় বাঁহাতি পেসার। ফাইনালে তার ব্যাটিং সামর্থ্য চমকে দিয়েছে সহপাঠী থেকে শুরু করে পূর্ব বাসাবো স্কুলের কোচ মুস্তাফিজুর রহমানকেও। ম্যাচ শেষে শিরোপা উদযাপনের আনন্দের মাঝেও বিস্ময় লুকালেন না ছোটবেলা থেকেই সিফাতকে কোচিং করানো মুস্তাফিজ।

“ওর (সিফাত) বোলিংয়ের কারিশমা অনেক ভালো। আমাদের মোস্তাফিজের ধরনের…সব ধরনের বল ও করতে পারে। ব্যাটিংও পারে, একদমই পারে না এমন না। সোজা সোজা ব্যাট করতে পারে। কিন্তু আজকে যেটা করেছে, শতভাগ বিস্ময়কর।”

ফাইনালের শেষের নায়ক মোহাম্মদ হোসেন। পরপর তিন বলে তিন উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিক করে পিরোজপুরের ইনিংস গুটিয়ে দেয় সে। ম্যাচ শেষে জানা গেল, এই ম্যাচেই প্রথম বোলিং করল এই মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান।

হ্যাটট্রিকের অনুভূতি জানাতে গিয়ে হোসেনের কণ্ঠে আবেগের ছটা স্পষ্ট।

“হ্যাটট্রিক যে হবে বুঝতেই পারিনি। মিরপুরের মাঠে হ্যাটট্রিক করতে পারলাম। অনেক দিন মনে থাকবে। আসলে এই মাঠে খেলতে পেরেছি, এটাই অনেক কিছু। যখন শুনলাম যে, মিরপুরে ফাইনাল খেলা হবে। কী যে আনন্দ লেগেছে। রোমাঞ্চে ঠিকঠাক ঘুমাতেই পারিনি। শুধু আমি নই, আমাদের সবারই প্রায় একই রকম উত্তেজনা।”

চ্যাম্পিয়ন হয়ে ট্রফির পাশাপাশি ১ লাখ ২৫ হাজার টাকার অর্থ পুরস্কার পেয়েছে কদমতলা পূর্ব বাসাবো স্কুল ও কলেজ। আর রানার্স-আপ হয়ে পিরোজপুর কেজি ইউনিয়ন স্কুল পেয়েছে ট্রফি ও ৭৫ হাজার টাকা। ফাইনাল হারলেও ৪ ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়ে আসরের সেরা বোলার অফ স্পিনার নুর আহমেদ সিয়াম।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More

Privacy & Cookies Policy