৩ ম্যাচ হারার পর জয়ের অপেক্ষাতেই ছিলেন পান্ডিয়া
আইপিএলের যৌথভাবে রেকর্ড চ্যাম্পিয়ন মুম্বাই এবার আলোচনায় ছিল টুর্নামেন্ট শুরুর আগে থেকেই। গুজরাট টাইটান্স থেকে নাটকীয়ভাবে তারা দলে ফিরিয়ে আনে তাদের পুরোনো সৈনিক পান্ডিয়াকে। ৫ বারের শিরোপাজয়ী অধিনায়ক রোহিত শার্মার জায়গায় অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয় দলে ফেরানো এই অলরাউন্ডারকে। এটা নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটে তোলপাড় পড়ে যায়।
টুর্নামেন্টের শুরুটা মুম্বাই ভালো করতে না পারায় দলে বিভাজন আর দ্বন্দ্বের খবরও ছড়াতে থাকে। অধিনায়কত্ব ও নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েন পান্ডিয়া। শেষ পর্যন্ত চতুর্থ ম্যাচে এসে স্বস্তির ছোঁয়া পেয়েছে দলটি। ওয়াংখেড়েতে রোববার তারা ২৯ রানে হারিয়েছে দিল্লি ক্যাপিটালসকে।
ম্যাচের পর মুখে হাসি নিয়ে পান্ডিয়া বললেন, বিশ্বাস ও প্রক্রিয়ার পথ ধরে এই জয়ের নাগাল তারা পেয়েছেন।
“অনেক অনেক পরিশ্রমের ফসল এটি। ভাবনায় অনেক স্বচ্ছতা আনতে হয়েছে আমাদের, সঠিক পরিকল্পনা নিশ্চিত করতে হয়েছে, তাড়না ঠিক রাখা নিশ্চিত করতে হয়েছে এবং আজকে এমন একটি দিন ছিল, যেদিন সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গেছে।”
“অনেক ভালোবাসা ও যত্ন আছে এখানে। সবাই জানত, তিনটি ম্যাচ হেরেছি আমরা। তবে বিশ্বাস হারাইনি, পরস্পরের পাশে থাকার মানসিকতা ছিল, যা দারুণ। আমাদের স্রেফ একটি জয় দরকার ছিল এবং আজকে কেবল শুরুটা হলো।”
মুম্বাইয়ের এই জয় ছিল সত্যিকারের দলীয় পারফরম্যান্সের সমন্বয়। জয়ের পথে একটি বিশ্বরেকর্ড গড়ে তারা। ২০ ওভারে ২৩৪ রান তোলে তারা, যেখানে ফিফটি ছিল না কারও। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ব্যক্তিগত কোনো ফিফটি ছাড়া সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ এটিই।
অধিনায়কত্ব হারানো রোহিতের ২৭ বলে ৪৯ রান এ দিন ছিল দলের সর্বোচ্চ স্কোর। তার উদ্বোধনী জুটির সঙ্গী ইশান কিষানের ব্যাট থেকে আসে ২৩ বলে ৪২। চোট কাটিয়ে দলে ফেরা সুরিয়াকুমার ইয়াদাভ আউট হয়ে যান দুই বলে শূন্য রান করেই। তবে মুম্বাইয়ের রানের স্রোত থেমে থাকেনি।
অধিনায়ক পান্ডিয়া করেন ৩৩ বলে ৩৯। শেষ দিকে তাণ্ডব চালান টিম ডেভিড ও রোমারিও শেফার্ড। চার ছক্কায় ২১ বলে ৪৫ রানে অপরাজিত থাকেন ডেভিড। আনরিক নরকিয়ার করা শেষ ওভার থেকে ৩২ রানসহ শেফার্ড ৩৯ রান করেন কেবল ১০ বল খেলে।
পাওয়ার প্লেতে ৭৫ রান তুলে জয়ের ভিত গড়ে দেন রোহিত ও কিষান। সেই শুরুটাই দলকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে বলে মনে করেন পান্ডিয়া।
“এটা অসাধারণ ছিল। ছয় ওভারে ৭৭-৮০ রান তুলে ফেলা ছিল দারুণ ব্যাপার। সবাই যেভাবে ব্যাট করেছে… ব্যাটিংয়ে ওই ছন্দ আমাদের প্রয়োজন ছিল। যেভাবে সবাই নিজেদের সুযোগ কাজে লাগিয়েছে, চমৎকার ব্যাপার তা।”
শুরুর এই ঝড়ের পর শেষটা বিধ্বংসী করেন ডেভিড ও শেফার্ড। তাদের সৌজন্যে শেষ পাঁচ ওভারে অবিশ্বাস্যভাবে ৯৬ রান তোলে মুম্বাই। বিশেষ করে শেষ ওভারে চার ছক্কা ও দুই চারে শেফার্ডের ৩২ রান ম্যাচের মোমেন্টাম পুরোপুরিই নিয়ে যায় মুম্বাইয়ের দিকে।
চলতি মৌসুমে আগে একটি ম্যাচে ‘ইম্প্যাক্ট সাব’ হিসেবে নেমে ৬ বলে ১৫ করে অপরাজিত ছিলেন শেফার্ড। এবার মূল একাদশেই জায়গা পেয়ে দেখালেন নিজের ঝলক। শেষের ওই ক্যামিওর পর বল হাতে ডেভিড ওয়ার্নারের উইকেট নিয়ে এই ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডারই ম্যাচের সেরা।
মুম্বাইয়ের জয়ের মূল কৃতিত্ব শেফার্ডকেই দিলেন অধিনায়ক পান্ডিয়া।
“সে যেভাবে মাঠে নেমেছে এবং ম্যাচটি জিতিয়ে দিয়েছে, অসাধারণ ছিল তা। আজকে আমাদের ও দিল্লি ক্যাপিটালসের মধ্যে ব্যবধান গড়ে দিয়েছে সে। যেভাবে সে ব্যাট করে, আমার তা ভালো লাগে।”
“তার মুখে সবসময় হাসি লেগেই আছে। কোনো কিছুতে সে পিছপা হয় না। এই সার্কিটে বেশ লম্বা সময় ধরে আছে সে। যেভাবে সে খেলে, আমি তাকে নিয়ে গর্বিত।”