খেলার মাঠে সবার আগে
Nsports-logo

বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর ২০২৪

সিলেটের হারের বৃত্ত ভেঙে জয়, ঢাকা ‘বন্দী’ হারের বৃত্তে

বিপিএলে তলানির দুই দলের লড়াইয়ে দুর্দান্ত ঢাকাকে ১৫ রানে হারাল সিলেট স্ট্রাইকার্স। গত আসরে চমকপ্রদ পারফরম্যান্সে রানার্স আপ হওয়া দলটি এবার মিরপুরে দুটি ম্যাচ হারার পর টানা তিনটি হেরে যায় নিজ শহর সিলেটে। রাজনৈতিক দায়িত্ব পালনের জন্য মাশরাফি বিন মুর্তজা বিরতি নেওয়ায় বদল আসে তাদের নেতৃত্বে। ভাষার মাসে ভাষা শহীদদের সম্মান জানাতে বিশেষ জার্সি গায়ে তারা খেলতে নামে এই ম্যাচে। অবশেষে তাদের পারফরম্যান্সেও এলো পরিবর্তন।

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুক্রবার ২০ ওভারে সিলেট তোলে ৮ উইকেটে ১৪২ রান। শুরুতে শরিফুল ইসলামের সুইং বোলিংয়ে জর্জর সিলেট পরে ঘুঁরে দাঁড়ায় মোহাম্মদ মিঠুনের ব্যাটে। আগের ম্যাচে একাদশ থেকে বাদ পড়া অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান অধিনায়ক হিসেবে ফিরে উপহার দেন ৪৬ বলে ৫৯ রানের ইনিংস। শেষ দিকে তিন ছক্কায় ৯ বলে ২১ রানের কার্যকর ইনিংস খেলেন আরিফুল।

রান তাড়ায় তেমন কোনো সম্ভাবনাই জাগাতে পারেনি দুর্দান্ত ঢাকা। ইনিংসের সর্বোচ্চ ২৭ রান আসে ৯ নম্বরে নামা তাসকিন আহমেদের ব্যাট থেকে। তাদের ব্যাটিংয়ের চিত্র পরিষ্কার এতেই।

৩০ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা রিচার্ড এনাগারাভা। ৮৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে প্রথমবার ৪ উইকেটের দেখা পান জিম্বাবুয়ের বাঁহাতি পেসার।

সিলেট স্ট্রাইকার্সের ইনিংসকে পরিষ্কার দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম ৮ ওভারে তাদের রান ছিল ৩ উইকেটে ৩০। পরের ১২ ওভারে তারা তোলে ১১২ রান!

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা সিলেটকে শুরুতেই নাড়িয়ে দেন শরিফুল। ম্যাচের চতুর্থ বলেই তার শিকার শামসুর রহমান। ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিটি এমনিতেই ছিল দুর্দান্ত। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান নিজের প্রথম বলেই এলোমেলো ব্যাট চালিয়ে আরও সহজ করে দেন বোলারের কাজ।

পরে প্রান্ত বদলে চতুর্থ ওভারে বোলিংয়ে এসে আবার তিনি কাঁপিয়ে দেন সিলেটকে। অফ স্টাম্পের বাইরের বল জোর করে অন সাইডে টানার চেষ্টায় নাজমুল হোসেন শান্ত টেনে আনেন স্টাম্পে। ধুঁকতে থাকা ব্যাটসম্যান আউট হন ১২ বলে ৩ রান করে।

এবারের আসরে ৬ ইনিংসে তার মোট রান ৭২। টানা চার ইনিংসে আউট হলেন তিনি দুঙ্ক ছোঁয়ার আগে।

শান্তর বিদায়ের পর আরও বড় ধাক্কা আসে সিলেটের জন্য। চলতি আসরে তাদের সেরা ব্যাটসম্যান জাকির হাসান আউট প্রথম বলেই। শরিফুলের দুর্দান্ত ডেলিভারির জবাব পাননি তিনি।

১৩ রানেই নেই সিলেটের ৩ উইকেট!

দ্রুত রান তোলার জন্য তিনে নামানো সামিত প্যাটেলও তখন খোলসে ঢুকে যেতে বাধ্য হন অনেকটা। তাকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই শুরু করেন মিঠুন। প্রথম চার ম্যাচে ওপেন করার পর একাদশে জায়গা হারিয়েছিলেন। অধিনায়ক হয়ে ফিরে রানের দেখা পেলেন তিনি পাঁচে নেমে।

শুরুতে যদিও সময় নিয়েছেন। এক পর্যায়ে তার রান ছিল ১৫ বলে ৮। নবম ওভারে আরাফাত সানিকে টানা দুই বলে ছক্কা ও চারে তিনি শুরু করেন ইনিংসের গতি বদল। পরের ওভারে ছক্কা ও চারে স্বাগত জানান মোসাদ্দেক হোসেনকে।

পরে উসমান কাদিরকে বাউন্ডারি ও সানিকে ছক্কা মেরে রানের গতি বাড়ান সামিত প্যাটেলও। তবে ইনিংস টানতে পারেননি তিনি। সানির বলেই আউট হয়ে যান ৩২ বলে ৩২ করে।

উসমান কাদির এরপর টিকতে দেননি রায়ান বার্লকে। তবে পাকিস্তানি এই লেগ স্পিনারের বলে ছক্কা ও চার মেরে রানের গতি সচল রাখেন মিঠুন। ফিফটি করেন তিনি ৩৬ বলে।

বার্লের পর দ্রুত রান তোলার মতো আরেক ব্যাটসম্যান বেনি হাওয়েল ব্যর্থ হন (১৩ বলে ১১)। মিঠুনের ইনিংসের পরও তাই ঘাটতি ছিল সিলেটের। সেটিই পুষিয়ে দেন আরিফুল।

উসমান কাদিরের শেষ বলে ছক্কার পর টানা দুই বলে ছক্কা মারেন তিনি ঢাকার সেরা বোলার শরিফুলকে। ইনিংসের শেষ বলে নাঈম হাসানের ছক্কায় রান ছাড়িয়ে যায় ১৪০। শেষ তিন ওভারে তারা তোলে ৩৮ রান।

ঢাকার রান তাড়ায় প্রথম ওভারে আরিফুল হককে চার ও ছক্কায় শুরু করেন সাইম আইয়ুব। তবে পাকিস্তানি এই ওপেনারকে পরের ওভারেই থামান এনগারাভা। নিজের পরের ওভারে এই পেসারের শিকার মোহাম্মদ নাঈম শেখ (২)।

তৃতীয় উইকেটে সাইফ হাসান ও অ্যালেক্স রস চেষ্টা করেন ধাক্কা সামাল দিতে। তবে বেশি দূর যেতে পারেননি কেউই। ১৭ রানে রান আউট হয়ে যান সাইফ। ২০ রান করা রসকে ফিরিয়ে আসরে চতুর্থ ম্যাচে প্রথম উইকেটের দেখা পান রেজাউর রহমান রাজা।

এরপর ঢাকা আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। তাদেরকে আরও চেপে ধরেন নাঈম হাসান। প্রথম তিন ওভারে স্রেফ ছয় রান দিয়ে এক উইকেট নেন এই অফ স্পিনার।

অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন ৯ বলে কোনো রান না পাওয়ার পর নাঈমকে ছক্কায় রানের খাতা খোলেন বটে। তবে শেষ পর্যন্ত আউট হয়ে যান ১৪ বলে ১১ করে।

ঢাকার শেষ ভরসা ছিলেন গুলবাদিন নাইব। কিন্তু আফগান এই ব্যাটসম্যান ১৮ বল খেলে করতে পারেন স্রেফ ১২।

শেষ দিকে ৬ চারে ১১ বলে ক্যারিয়ার সেরা ২৭ রানের ইনিংস খেলে ব্যবধান কিছুটা কমান তাসকিন।

চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে হারিয়ে আসর শুরু করা ঢাকা টানা চার ম্যাচ হেরে এখন নেমে গেল পয়েন্ট তালিকার সবার নিচে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

সিলেট স্ট্রাইকার্স: ২০ ওভারে ১৪২/৮ (শান্ত ৩, শামসুর ০, সামিত ৩২, জাকির ০, মিঠুন ৫৯, বার্ল ১, হাওয়েল ১১, আরিফুল ২১, রেজাউর ১*, নাঈম ৬*; শরিফুল ৪-০-২৪-৪, তাসকিন ৪-০-১৯-১, গুলবাদিন ৩-০-২৫-০, সানি ৪-০-২৩-২, মোসাদ্দেক ১-০-১৪-০, কাদির ৪-০-৩৬-১)

দুর্দান্ত ঢাকা: ২০ ওভারে ১২৭/৯ (সাইম ১৩. নাঈম ২, সাইফ ১৭, রস ২০, গুলবাদিন ১২, ইরফান ৪, মোসাদ্দেক ১১, সানি ২, তাসকিন ২৭*, শরিফুল ৫, কাদির ৬*; আরিফুল ১-০-১৩-০, এনগারাভা ৪-০-৩০-৪, নাঈম ৪-০-১৯-১, রেজাউর ৪-০-৪১-২, সামিত ৩-০-৮-০, হাওয়েল ৪-০-১৬-১)

ফল: সিলেট স্ট্রাইকার্স ১৫ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: রিচার্ড এনগারাভা

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More

Privacy & Cookies Policy