ব্রাজিলের কানের পাশ দিয়েই গেলো গুলিটা
পেরুকে ১-০ তে হারিয়ে ফাইনালে উঠে গেলো ব্রাজিল
খেলা দেখতে বসার আগেই পুরো বিশ্ব দুই ভাগে ভাগ। বলার অপেক্ষা রাখেনা এই দুই ভাগে কারা আছেন। ব্রাজিলের খেলা বলে সেলেসাওদের সাপোর্ট করা দোষের কিছুনা। তাই বলে পেরুর কোনো খেলোয়াড়ের নাম না জানার পরও কিংবা তাদের ফলো না করেও দিব্যি ভক্ত বনে গেছেন অনেকে। তারা যে আর্জেন্টিনার সমর্থক তা বুঝতে নিশ্চয় আপনাকে আইনস্টাইন হতে হবেনা।
দিনশেষে স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলেছে ব্রাজিল আর এর কোটি ভক্ত। ম্যাচটা ১-০ গোলে জিতে চলে গেলো মারাকানার ফাইনালে। যেখানে কাল সকাল ৭ টায় হওয়া আর্জেন্টিনা-কলম্বিয়া জয়ী দলের সাথে লড়বে তারা। মুখে যতই বলুক ফাইনালে আর্জেন্টিকে চায় ব্রাজিল আসলে মনে মনে কাল কলম্বিয়ার সমর্থকই বনে যাবেন এই দলের অনুসারিরা। আজ যেমন আর্জেন্টিনা ছিলো পেরুর।
খেলায় ফিরি। এটিকেও চাইলে অনায়াসে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমার্ধ ব্রাজিল, আর দ্বিতীয়ার্ধ পেরুর। এই হলো মোটা দাগে পুরো ম্যাচের চেহারা।
গ্রুপ পর্বে পেরুকে চার গোলে উড়িয়ে দিয়েছিলো ব্রাজিল। কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে আবারও সেই পেরুকে পেয়ে সহজেই উতরে যাওয়ার কথা বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের। কিন্তু যতটা সহজ ভাবা হয়েছিল ঠিক ততটা মাঠের পারফরম্যান্সে মনে হয়নি। ফাইনালে ঠিকই জায়গা করে নিয়েছে সেলেসাওরা। তবে এর জন্য বেশ ঘাম ঝরাতে হয়েছে নেইমারদের। সময়মত পাকেতার ঐ গোলটা না হলে কী হতো বলা মুশকিল!
কোপার ১০৫ বছরের ইতিহাসে এ নিয়ে ২১ বার ফাইনালের দেখা পেলো ব্রাজিল। সেমিতে ব্রাজিল দলে দুটি পরিবর্তন। জেসাস সাসপেনশনের কারণে নেই। ফিরমিনোর জায়গা হয়েছে বেঞ্চে। পাকুয়েতা ফিরেছেন।এভারটনও আছেন। অন্য দিকে পেরুর দলে একটি পরিবর্তন।
ম্যাচের শুরু থেকে প্রতিপক্ষের ওপর চড়াও হয়ে গোল করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে থাকে হলুদ জার্সিরা। কিন্তু গোল পেতে তাদের সময়ে লেগেছে। পেরুর গোলকিপার গাল্লেসে একাই গোলবারের নিচে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
৮ মিনিটে পাকেতার পাস থেকে বক্সে ঢুকে গোলকিপারকে কাটিয়ে কাটব্যাক করেছিলেন রিচার্ললিসন, কিন্তু নেইমারের শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। চার মিনিট পর কাসেমিরোর ফ্রি-কিক গোলকিপার কোনমতো প্রতিহত করেন।
১৯ মিনিটে কাসেমিরোর দূরপাল্লার শট গোলকিপার ঝাঁপিয়ে পড়ে গোল হতে দেননি।
খানিক পরই পাকেতার ক্রসে নেইমারের শট ফিরিয়ে দেন গাল্লেসে। ফিরতি বলে রিচার্ললিসন শট আবারও ফিরিয়ে দিয়ে দলকে ম্যাচে রাখেন গোলকিপার স্বয়ং।
৩৫ মিনিটে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ব্রাজিলকে। গোল করে এগিয়ে যায়। নেইমার একক প্রচেষ্টায় বল নিয়ে বক্সে ঢুকে দুই ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে বল বের করে পাকেতাকে কাটব্যাক করেন, চলতি বলে এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার বা পায়ে প্লেসিং করে দিতে কোনও কার্পণ্য করেননি। চর্মগোলকটা যেখানে যাবার সেখানেই গেলো।
তবে ওখানেই যে আজকের দিনের মত বলের জাল খুঁজে নেয়া শেষ হচ্ছে তা বুঝতে পারেননি অনেকে। দ্বিতীয়ার্ধে এই লিডটা ধরে রাখতে ব্রাজিল এমন খোলস বন্দী হলো নাকি পেরু ভালো খেললো তা নিয়ে আরো বিশ্লেষন হতে পারে। যদিও এই অর্ধে কমপক্ষে তিনবার ব্রাজিলের বুকে কাঁপন ধরাতে পেরেছে পেরু। একবার হেডে বল গেলো পোস্টের সামান্য বাইরে আর দুবার গোলরক্ষক এডারসন অসামান্য দক্ষতায় কোনোমতে বাঁচিয়েছেন দলকে। ওহহো, দল বলছি কেনো, হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন দুনিয়া জুড়ে ছড়িয়ে থাকা কোটি ব্রাজিল সমর্থক।
অবশ্য এসব নিয়ে তাদের এখন ভাবার সময় কই! আপাতত: জয়ের আনন্দেই বুঁদ হয়েই থাকুক না।