স্নায়ুক্ষয়ী লড়াইয়ের শেষে অজিরা ৮ম বারের মত শিরোপা নির্ধারণী মঞ্চে
বিশ্বকাপের ১৩তম আসরের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে প্রোটিয়াদের ৩ উইকেটে হারিয়ে অষ্টমবারের মতো ফাইনালে উঠল অস্ট্রেলিয়া। বৃহস্পতিবার কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে টসে জেতা প্রোটিয়াদের ব্যাটিংয়ের শুরুতে ২৪ রানেই ৪ উইকেট তুলে, তাদের বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেয় অজিরা। এরপর ডেভিড মিলার চাপের মুখে চমৎকার সেঞ্চুরি হাঁকালেও শেষপর্যন্ত প্রোটিয়াদের পুঁজি হয়েছে ২১২ রানের। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে মিচেল স্টার্ক ও অধিনায়ক কামিন্স তিনটি করে এবং জশ হ্যাজেলউড ও ট্রাভিস হেড দুটি করে উইকেট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ নিয়েও ৪৯.৪ ওভারে অলআউট হয়ে গেছে টেম্বা বাভুমার দল।
২১৩ রানের সহজ লক্ষ্যতাড়ায় নেমে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে নান্দনিক শুরু পেয়ে যায় অজিরা। কাগিসো রাবাদা ও মার্কো ইয়ানসেনের উপর আক্রমণ চালিয়ে ৬ ওভারেই ৬০ রান তুলে ফেলেন দুই অজি ওপেনার ট্রাভিস হেড ও ডেভিড ওয়ার্নার। ঝড় থামাতে প্রোটিয়া অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা নিয়ে আসেন স্পিন। এইডেন মার্করামের প্রথম বলেই লেংথ পড়তে ভুল করে বোল্ড হয়ে যান ওয়ার্নার। ফুল লেংথেই পেছনে খেলতে গিয়ে আউট হন ১৮ বলে ৪ ছক্কা ও ১ চারে ২৯ রানের ইনিংস খেলে। মিচেল মার্শও ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন শূন্য রানেই আউট হয়ে। কভার পয়েন্টে রাসি ফন ডার ডুসেনের অসাধারণ ডাইভিং ক্যাচে মার্শ আউট হলে ৬১ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। দ্রুত ২ উইকেট পড়লেও হেড তার আক্রমণের ধারায় ছেদ পড়তে দেননি। প্রথম দশ ওভারেই তারা এনে ফেলে ৭৪ রান।
অবশ্য আতঙ্ক বনে যাওয়া হেডকে দুবার ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিল প্রোটিয়ারা। ৪০ রানে থাকা বাঁহাতি ব্যাটসমেনের ক্যাচ ডিপ পয়েন্টে ফেলে দেন বদলি ফিল্ডার হিসেবে নামা রিজা হেন্ড্রিকস। জীবন পেয়ে তিনি নিজের ফিফটি পেয়ে যান ৪০ বলে। এরপর ৫৭ রানে আবার তার ক্যাচ ওঠে স্লিপে। তাবরাইজ শামসির বলে জীবন পেয়ে যদিও তাকে ৬২ রানেই ফিরতে হয়। কেশব মহারাজ এসে নিজের প্রথম বলেই বোল্ড করে দেন হেডকে। ৪৮ বলে ৯ চার ও ২ ছয়ে ৬২ রানে যখন হেডের হুঙ্কার থামে, ততক্ষনে অস্ট্রেলিয়া পৌঁছে গেছে ১০৩ রানে। টার্নিং পিচে দুই বাঁহাতি স্পিনারের লাগাতার আক্রমণে, তাবরাইজ শামসির দ্রুত দুই শিকারে ম্যাচে প্রাণ ফেরে। রিভার্স সুইপ খেলতে যাওয়া মারনাস লাবুশেনকে এলবিডব্লিউ বানিয়ে ফেরান ১৮ রানেই। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এসে ১ রানেই বোল্ড হয়ে যান। ৪ রানের মধ্যে ২ উইকেট হারিয়ে দলীয় ১৩৭ রানে পঞ্চম উইকেট পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার। স্টিভেন স্মিথের সাথে জশ ইংলিসের জুটিতে এগিয়ে যেতে থাকে অজিরা। জয় থেকে ৪৯ রানের দূরত্বে যখন চলে আসে তারা, পেসার জেরাল্ড কোয়েটজি এসে স্মিথকে ফিরিয়ে দেন। দেখেশুনে খেলতে থাকা স্মিথ হুট করে বড় শট খেলতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন। ৬২ বলে ২ চারে ৩০ রান করে প্যাভিলিয়নের পথ ধরতে হয় তাকে। এর আগে অবশ্য একবার ক্যাচ দিয়েও উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি ককের ভুলে বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি। ঠাণ্ডা মাথায় আত্মবিশ্বাসের সাথে খেলতে থাকেন ইংলিশ। তবে প্রোটিয়ারা আবার উইকেট নিয়ে লড়াইয়ের মনোভাব ফুটিয়ে তুলে। অস্ট্রেলিয়ার দরকার যখন ২০ রান, তখন ফের কোয়েটজি এসে আউট করেন ৪৯ বলে ২৮ রান করা ইংলিসকে। পড়ে যায় অজিদের সপ্তম উইকেট।
টানটান উত্তেজনাকর পরিবেশ সৃষ্টি হয় মাঠে তখন, ম্যাচের পাল্লা একবার এদিক, একবার ওদিক হচ্ছিল। তবে ধীরেসুস্থে খেলে কামিন্স ও মিচেল স্টার্ক মিলে আর কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে দেননি। যদিও জয়ের জন্য ৯ রান বাকি থাকতে ক্যাচ উঠেছিল কামিন্সের। কিন্তু ডি কক এবারও ক্যাচ লুফে নিতে ব্যর্থ হন। শেষপর্যন্ত প্রোটিয়াদের ৩ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে অষ্টমবারের মতো জায়গা করে নেয় অজিরা। আর এইদিকে ৫ম বারের মত সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেয়া প্রোটিয়ারা প্রায় প্রতিবারই দুর্দান্ত দল নিয়ে অসাধারণ ক্রিকেট উপহার দিয়েও নকআউট ধাপে গিয়ে গড়বড় করেছে।