বিপর্যয়ের দিনে মিলারের একার লড়াইতে প্রোটিয়াদের সংগ্রহ ২১২
বৃহস্পতিবার কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের ২য় সেমিফাইনালটি রোমাঞ্চকর ছিল দুদলের জন্যই। লীগ পর্বের খেলায় ৯টির মধ্যে ২টিতে হেরে দুদলই একে অপরকে নিজেদের শক্তির জানান দিয়েছে। তাই কলকাতার দর্শকদের কাছে অস্ট্রেলিয়া-সাউথ আফ্রিকার মধ্যকার সেমিফাইনালটি ছিল সেয়ানে-সেয়ানে লড়াই দেখার সুযোগ। ম্যাচের আগে দুই অধিনায়কই টসে জিতলে ব্যাটিং নেবার ইচ্ছে প্রকাশ করলেও, টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামার কিছুক্ষণ পরই রীতিমতো ধুঁকতে শুরু করে টেম্বা বাভুমার দল।
প্রথম ওভারেই প্রোটিয়া অধিনায়ক বাভুমাকে শূন্য রানে ফিরিয়ে দেন মিচেল স্টার্ক। রানের জন্য হাঁসফাঁস করতে থাকা কুইন্টন ডি কক উড়িয়ে মারতে গিয়ে হ্যাজেলউডের বলে কামিন্সের দুর্দান্ত ক্যাচে আউট হয়ে যান ৩ রানেই। বলের এদিক-সেদিক নড়াচড়ায় প্রোটিয়ারা তখন চোখে আঁধার দেখতে পাচ্ছিল যেন। দলীয় সংগ্রহ দুই অঙ্কে যেতে দক্ষিণ আফ্রিকার লেগে যায় ৮ ওভার। প্রথম বাউন্ডারি পেতে তাদের অপেক্ষা করতে হয় ৫২ বল! ১৮ রানে প্রথম পাওয়ার প্লে শেষ করার পরও ধাক্কা কাটাতে পারেনি। ১১তম ওভারে এইডেন মার্করাম পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ১০ রান করেই। একপাশে চাপ শুষে নেওয়ার প্রাণপণ চেষ্টায় থাকা রাসি ফন ডার ডুসেনও শেষমেশ ব্যর্থ হয়ে হ্যাজেলউডের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান ৩১ বলে মাত্র ৬ রানের ইনিংস খেলে। দুই ফিনিশার হেইনরিখ ক্লাসেন ও মিলারকে তাই পুনরুদ্ধারের কাজে নামতে হয়। স্টার্ক ৭ ওভারে ১৮ রানে ২ উইকেট পেয়ে তার প্রথম স্পেল শেষ করেন। ৬ ওভারে সমান উইকেট পেতে ১২ রানের স্পেল শেষে হ্যাজেলউডের জায়গায় আসেন কামিন্স। ক্লাসেন ও মিলার মিলে তার ওভারে দুই চারে ১২ রান আনেন। ১৪ ওভারে ৪ উইকেটে ৪৪ রানে থাকতেই এরপর বৃষ্টি নেমে আসে। বেশ কিছু সময় বন্ধ থাকার পর আবার খেলা শুরু হলে ক্লাসেন-মিলার চড়াও হন লেগ স্পিনার অ্যাডাম জ্যাম্পার উপর। নিজের প্রথম পাঁচ ওভারেই পাঁচটি ছক্কার মার পড়ে জ্যাম্পার ওপর। সতর্কতার সঙ্গে জায়গামতো বল পেলে বাউন্ডারি বের করতে থাকেন দুই প্রোটিয়া ব্যাটসমেন। তারপরও বিপদের মহাসাগরে পড়া দলটির একশ ছুঁতে লেগে যায় ২৮ ওভার।
শতরানের দিকে এগোনো পঞ্চম উইকেট জুটিতে লড়াকু স্কোরের আশা দেখছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু আচমকাই দুটি উইকেট হারিয়ে বসে একই ওভারে। পার্ট-টাইমার হেডের বলে বোল্ড হয়ে যান ক্লাসেন। ৪ চার ও ২ ছয়ে ৪৮ বলে ৪৭ রান করেন বিধ্বংসী ক্লাসেন। ভাঙে ১১৩ বলে ৯৫ রানের জুটি। পরের বলেই হেডের বড় বাঁক খাওয়া ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হয়ে যান মার্কো ইয়ানসেন। তেতো স্বাদ নেন গোল্ডেন ডাকের। ৩১তম ওভারে ১১৯ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারিয়ে ফেলে আবার খাদের কিনারায় চলে যায় প্রোটিয়ারা। জেরাল্ড কোয়েটজি আট নম্বরে এসে দারুণ সঙ্গ দিয়ে সপ্তম উইকেটে ৭৬ বলে ৫৩ রানের জুটি গড়েন মিলারের সঙ্গে। ৩৯ বলে ১৯ রান করে কোয়েটজি ফিরে যান। তবে রিপ্লেতে দেখা যায়, কামিন্সের বাউন্সারে উইকেটরক্ষক জশ ইংলিসের হাতে যাওয়া ক্যাচে আউট ছিলেন না তিনি। কারণ, বল লাগেনি ব্যাটে বা গ্লাভসে। তবুও হাঁটা দেন কোয়েটজি। কেশব মহারাজও ৪ রানে ফিরে গেলে মিলারের সঙ্গীর অভাবই পড়ে যায়। লড়াকু ইনিংসে মিলার দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ দুইশ পার করান। ৭০ বলে ফিফটি ছোঁয়ার পর ১১৫ বলে সেঞ্চুরি পেয়ে যদিও পরের বলেই আউট হয়ে যান। ৮ চার ও ৫ ছক্কায় গড়া ছিল তার ১০১ রানের ইনিংস। এরপর কাগিসো রাবাদাকে বিদায় করে প্রোটিয়াদের ইনিংস গুটিয়ে দেন কামিন্স। নির্ধারিত ৫০ ওভারের ২ বল বাকি থাকতে ২১২ রান করে অল আউট হয়ে যায় প্রোটিয়ারা। প্রোটিয়া শিবিরের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো অজি বোলার মিচেল স্টার্ক ও অধিনায়ক প্যাট কামিন্স ৩টি করে উইকেট নেন এবং জশ হ্যাজেলউড ও ট্রাভিস হেড দুটি করে উইকেট নিয়ে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান।