শেষ ম্যাচে নিজেদের সেরাটা দিয়েও ৮ উইকেটে হারলো টাইগাররা
শনিবার পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের ৪৩তম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষ ছিল বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়া সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত করলেও, বাংলাদেশ তা থেকে ছিটকে পড়ে ২০২৫ সালে অনুষ্টিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা নিয়ে শঙ্কায় আছে এখনো। তবে বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে নিজেদের সেরাটা দেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে সাকিবহীন টাইগাররা।
পুনেতে লাল-সবুজ দলের বিপক্ষে টসে জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। আর ব্যাটিং পেয়ে বাংলাদেশের হয়ে দুর্দান্ত সূচনা করেন দুই টাইগার ওপেনার তানজিদ হাসান ও লিটন দাস। তাদের গড়া প্রথম উইকেট জুটিতে ৭৬ রান যোগ হয় ১১.১ ওভারে। এরপর শন অ্যাবটের শিকার হয়ে তানজিদ হাসান সাজঘরে ফেরেন ৩৪ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলে। ১৬.৪ ওভারে দলীয় ১০৬ রানের মাথায় লিটন দাসকে সাজঘরে ফেরান অ্যাডাম জাম্পা। তিনি ৪৫ বলে ৩৬ রান করেন ৫টি চারের সাহায্যে। তিনে ব্যাট করতে নামা টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হাসান শান্ত রান আউট হয়ে সাজঘরে ফেরার সময় বাংলাদেশের স্কোর ১৭০ রান। কিন্তু লিটন আউট হবার পর ক্রিজে নামা তাওহিদ হৃদয় ততক্ষনে ক্রিজে থিতু হয়ে গেছেন। অধিনায়কের সাথে ৬৩ রানের জুটি গড়ার পর এবার তার সঙ্গী হন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দুজনে চতুর্থ উইকেট জুটিতে টাইগারদের দলীয় সংগ্রহে যোগ করেন আরও ৪৪ রান। কিন্তু এরপরই শান্তর মত পরিণতি বরণ করতে হয় রিয়াদকেও। তিনিও রান আউটের শিকার হন। প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে ২৮ বলে ৩ ছয় এবং ১ চারে করেছেন ৩০ রান। রিয়াদ ফেরার পর “মিস্টার ডিপেন্ডেবল” মুশফিকুর রহিম মাঠে নামলেও ২১ রানের বেশি করতে পারেননি। মুশফিক ফেরার পর দলীয় ২৮৬ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ৭৪ রানে আউট হন হৃদয়ও। শেষ পর্যন্ত মেহেদী মিরাজের ২০ বলে ২৯ রানের ইনিংসে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩০৬ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। অজিদের হয়ে সর্বোচ্চ ২টি করে উইকেট নিয়েছেন অ্যাডাম জাম্পা এবং শন অ্যাবট।
৩০৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুর দিকে ওপেনার ট্রেভিস হেডকে দলীয় ১২ রানের মাথায় হারিয়ে হালকা ধাক্কা খেলেও অজিদের আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ওয়ান ডাউনে নামা মিচেল মার্শ ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারকে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ১২০ রান যোগ করেন। ওয়ার্নারকে ৫৩ রানে সাজঘরে ফেরান কাটার মাস্টার মুস্তাফিজ। কিন্তু দমানো যায়নি মিচেল মার্শকে, স্টিভেন স্মিথকে সাথে নিয়ে তিনি তার ধারালো ব্যাট চালিয়ে যেতে থাকেন। ৮৭ বলে স্পর্শ করেন তিন অঙ্কের ফিগার। এরপরে আরও হাত খুলে মারা শুরু করেন এই ডানহাতি ব্যাটসমেন। খেলা শেষ হওয়ার অনেক আগেই পরিষ্কার হয়ে যায় ম্যাচের পরিণতি। শরীরী ভাষায় নেতিয়ে পড়া টাইগাররা বাকিটা সময় বল করে গেছে স্রেফ আনুষ্ঠানিকতার জন্য। যার ফলে হাতে ৩২ বল বাকি রেখে ৮ উইকেটের বিশাল জয় পেয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচ শেষের আগে মিচেল মার্শ ১৩২ বলে ১৭৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ম্যাচটিকে “ওয়ান ম্যান শো” তে পরিণত করেন। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেয়া স্টিভেন স্মিথ অপরাজিত থাকেন ৬৪ বলে ৬৩ রানের ইনিংস খেলে।
প্রায় দুই যুগ আগে এক জয় ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কখনোই ওয়ানডেতে লড়াই জমাতে পারেনি বাংলাদেশ। বৈশ্বিক আসরে ম্যাচগুলো তো হয়েছে আরও একপেশে। এবারও বৈশ্বিক আসরে সফলতম দলটির বিপক্ষে বাংলাদেশকে দেখা গেল দুর্বল। ব্যাটিং স্বর্গের পিচে বাংলাদেশের তিনশো ছাড়ানো পুঁজিকে মিচেল মার্শদের কাছে মনে হলো মামুলি। উইকেট পড়তে না দিয়ে মার্শ একাই করলেন দলের অর্ধেকের বেশি রান।