স্বপ্নের সেমিফাইনাল খেলা হলো না আফগানদের
ভারতের আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের ৪২তম ম্যাচটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিপক্ষ ছিল আফগানিস্তান। আফগানদের জন্য বাঁচা-মরার লড়াই ছিল এই ম্যাচ, কারণ এই ম্যাচ জেতার উপর তাদের স্বপ্নের সেমিফাইনালে খেলাটা নির্ভর করছিলো।
প্রোটিয়াদের বিপক্ষে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুভসূচনা করে আফগানিস্তান। রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান উদ্ভোধনী জুটিতে ৮ ওভারে ৪১ রান করে বড় পুঁজির ইঙ্গিত দিলেও কেশভ মহারাজের দুর্দান্ত ফ্লাইটেড ডেলিভারিতে স্লিপে ক্যাচ তুলে রহমানউল্লাহ গুরবাজ সাজঘরে ফেরেন। ফেরার আগে ২২ বলে ৩ চার ও ১ ছয়ে ২৫ রানের ইনিংস খেলেন গুরবাজ। পরের দুই ওভারেই সাজঘরের পথ ধরেন আরও দুই আফগান। দশম ওভারে ইব্রাহিম জাদরান আউট হয়ে যান ৩০ বলে ১৫ রান করে। একাদশ ওভারে মহারাজ এসে শিকার করে ফেলেন অধিনায়ক হাশমতুল্লাহ শহিদিকে। আজমতউল্লাহ ওমরজাই দলের এমন ব্যাটিং বিপর্যয়ে হাল ধরে উইকেটের এক প্রান্ত আগলে রাখলেও অন্য প্রান্তের ব্যাটসম্যানরা ছিলেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। ২৭.৪ ওভারে আফগানদের স্কোর ছিল ৬ উইকেটে ১১৬। আফগানদের এই ব্যাটিং ধস দেখে মনে হচ্ছিলো ২০০ রান পেরোতে বেগ পেতে হবে তাদের। আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের নান্দনিক ব্যাটিংয়ে আফগানরা সবাইকে চমকে দিয়ে ২৪৪ রানের পুঁজি গড়ে। শতকের আক্ষেপে নিয়ে ১০৭ বলে ৭টি চার আর ৩টি ছয়ে ৯৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন আজমতউল্লাহ। ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিলে শেষের দিকে তাকে মোটামুটি সঙ্গ দিয়েছেন নূর আহমেদ। তিনি ৩২ বলে ২৬ রান করেন। দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার কোয়েটজি ৪৪ রানে ৪ উইকেট পান। দুর্দান্ত নিয়ন্ত্রণ দেখিয়ে বাঁহাতি স্পিনার মহারাজ তার কোটা শেষ করেন ২৫ রানে ২ উইকেট নিয়ে, সমান সংখ্যক উইকেট নিতে খরুচে পেসার লুঙ্গি এনগিডি দেন ৬৯ রান।
২৪৫ রানের লক্ষ্যে নেমে ফর্মের ধারা বজায় রেখে খেলে যান কুইন্টন ডি কক। টেম্বা বাভুমাকে প্রথম ইনিংসে খুড়িয়ে চলতে দেখা গিয়েছিল। ব্যাটিংয়েও সেভাবেই খেলে যান। ঠিকমতো দৌঁড়াতে না পারা বাভুমাকে নিয়ে ডি কক পাওয়ারপ্লে পার করে ৫৭ রান এনে। কিন্তু এর পরই মুজিব উর রহমানের বলে মারতে গিয়ে ২৩ রানে ধরা খেয়ে যান বাভুমা। ডি ককও পরের ওভারেই একই পথ ধরেন মোহাম্মদ নবির বলে রিভার্স সুইপে এলবিডাব্লিউ হয়ে। ৪৭ বলে ২ চার ও ৩ ছয়ে ৪১ রানেই থেমে যান ইনফর্ম ব্যাটসমেন। ওয়ান ডাউনে নামা রাসি ফন ডার ডুসেন আফগান স্পিন সতর্কতার সাথে খেলে যান। এইডেন মার্করামও এসে আত্মবিশ্বাসের সাথে ব্যাট করে, দুজনে জুটি বেঁধে ২০.১ ওভারে একশ রানে নিয়ে যায় দলকে। আফগানিস্তানের ভরসা রশিদ খান এরপর তার কারিশমা দেখান। মার্করামের পর দ্রুত ফিরিয়ে দেন ভয়ঙ্কর হেইনরিখ ক্লাসেনকেও। ৩২ বলে একটি করে চার ও ছয়ে ২৫ রান করে ফিরে যান মার্করাম। রশিদের থেমে আসা বলে লিডিং এজে মার্করাম ক্যাচ তুলে দেন কাভারে। ক্লাসেনের অফ স্টাম্প আঘাত করে ১৩ বলে ১০ রানের বেশি করতে দেননি রশিদ। ডুসেন যদিও আফগানদের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ান, ৬৬ বলে ফিফটি হাঁকিয়ে ফেলেন। ডেভিড মিলারও এসে ভালো শুরু পেয়ে গেলে আফগানদের আশার আলো নিভতে থাকে। কিন্তু ২৪ রানেই মিলারকে ফিরতি ক্যাচে ফিরিয়ে দেন নবি। ১৮২ রানে ৫ উইকেট হারিয়েও প্রোটিয়াদের প্রয়োজন ৭৭ বলে ৬৩ রান। আস্কিং রেট নাগালে রেখে নিরাপত্তার চাদরে থেকে এগিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস। শেষ ৫ ওভারে ৩৪ রানের প্রয়োজন ছিল প্রোটিয়াদের, ফেলুকওয়ায়ো তখন ৩০ বলে ১৪ রান করেছে। এরপর নাভিনের ওভারে ফেলুকওয়ায়ো ছয় মারলে প্রায় সাত ওভারের বেশি সময় পর বাউন্ডারি পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর ৩ ওভারে ১৪ রানের দরকার তিন বলেই মিটিয়ে দেন ফেলুকওয়ায়ো। বাঁহাতি এই ব্যাটসমেন নাভিনকে দুই ছয় ও চার মেরে ১৫ বল হাতে রেখেই দলের জয় নিশ্চিত করেন। ৩৭ বলে তিনি অপরাজিত থাকেন ৩৯ রানে এবং ডুসেন ৯৫ বলে ৬ চার ও ১ ছয়ে ৭৬ রানে অপরাজিত থাকেন। আফগানদের পক্ষে মোহাম্মদ নবি ও রাশিদ খান ২টি করে উইকেট নিয়েছেন।
বাংলাদেশের বিপক্ষে পরজয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা আফগানিস্তান দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হেরেই বিশ্বকাপ মিশন শেষ করল। বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিলেও নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে গেছে আফগানরা। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সফল একটি আসর শেষ করল তারা।