লঙ্কানদের বিপক্ষে সহজ জয়ে সেমিফাইনালের পথে কিউইরা
বেঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের ৪১ তম ম্যাচটির আগে থেকে বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় সংশয় ছিল। বৃষ্টির কারণে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল প্রবল। নিউজিল্যান্ড-শ্রীলংকা ম্যাচটি নিয়ে দুদলই বেশ চিন্তিত এবং উদ্বিগ্ন ছিল। একদিকে প্রথম চার ম্যাচে জিতে উড়ন্ত শুরু করলেও পরের টানা চার ম্যাচ হেরে সেমি থেকে দূরে সরে যাচ্ছিলো গতবারের রানার্সঅপরা। অন্যদিকে ৮ ম্যাচ খেলে মাত্র দুইটিতে জয় পাওয়া শ্রীলংকার আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা নির্ভর করছিলো এই ম্যাচের হার-জিতের উপর।
টস জিতে শ্রীলংকাকে প্রথমে ব্যাটিং করার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। ব্যাটিংয়ের শুরুতেই বিপর্যয়ের মুখে পড়ে লঙ্কান ব্যাটসমেনরা। দলের ৩ রানের মাথায় সাজঘরে ফেরেন লঙ্কান ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা। এরপর লঙ্কান অধিনায়ক কুশল মেন্ডিস ফেরেন ৬ রান করে। সাদিরা সামারাবিক্রমা ১ রানেই স্লিপে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরলে দলীয় স্কোর দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৩২ রান। কিন্তু এই আসার-যাওয়া মাঝে ওপেনিংয়ে নামা কুশল পেরেরা এক প্রান্ত আগলে রেখে মারমূখী ব্যাটিং চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কুশল মেন্ডিস, সাদিরা সামারবিক্রমা এবং চারিথ আসালাঙ্কা তিনজনই আউট হয়েছেন এক অঙ্কের ঘরে। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দারুণ এক ফিফটি হাঁকান পেরেরা। তবে ফিফটির পরেই থেমেছেন তিনি, ৯.৩ ওভারে দলীয় ৭০ রানের মাথায় ২৮ বলে ৫১ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলে আউট হয়ে যান পেরেরা। তার সাজঘরে ফেরার পরে আর কোন লঙ্কান ব্যাটসমেন তেমন ভাবে দাঁড়াতে পারেননি। শেষের দিকে মাহিশ থিকশানা এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে যান। ধীরে হলেও দলকে এগিয়ে নিতে ব্যাট চালিয়ে রান তুলতে থাকেন থিকশানা। চোট পেয়েও ধৈর্য্যের সাথে দারুণভাবে ব্যাটিং করে যাচ্ছিলেন থিকশানা। শেষের দিকে দলের ইনিংসটাকে তিনি একাই টেনেছেন। ৯১ বলে ৩৮ রানের ইনিংস খেলে শেষপর্যন্ত ক্রিজে টিকে ছিলেন তিনি। ৪৬.৪ ওভারের ১৭১ রানের মাথায় অলআউট হয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। দিলশান মাদুশাঙ্কাও যথেষ্ট ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েছেন। ৪৮ বলে ১৯ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের হয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন ট্রেন্ট বোল্ট। এছাড়া লকি ফার্গুসন, রাচিন রবীন্দ্র এবং মিচেল স্যান্টনার নেন ২টি করে উইকেট, ১ উইকেট তোলেন টিম সাউদি।
১৭২ রানের লক্ষ্য তাড়ায় যা অঘটনের আশা ছিল শ্রীলঙ্কার, তা উড়িয়ে দেয় কিউইদের প্রথম পাওয়ারপ্লের ব্যাটিং। ব্ল্যাক ক্যাপস ওপেনাররা ধীরস্থির শুরুতে চার ওভারে ১৮ রান আনে। এরপরই দুই ওপেনারই মারমূখী ব্যাট চালান। ডেভন কনওয়ে পঞ্চম ওভারে দিলশান মাদুশাঙ্কাকে মারেন তিন চার। নিয়মিত বাউন্ডারি বের করে নিউজিল্যান্ড পঞ্চাশ রান করে ফেলে ৩৯ বলেই। স্টাইলিশ ব্যাটসমেন রাচিন রবিন্দ্রও দৃষ্টিনন্দন শটে চার-ছয় মারতে থাকেন। ৪০ ওভার বাকি থাকতেই কিউইরা তাদের প্রয়োজনটা নামিয়ে আনেন একশর কম রানে। কিন্তু তাদের চোখটা ছিল নেট রানরেটের দিকে। ব্ল্যাক ক্যাপস শিবির নড়বড়ে করে চামিরা। তার বলে আউট হয়ে কনওয়ে ফিরে যান ৯ চারের সাহায্যে ৪২ বলে ৪৫ রানের ইনিংস খেলে। ৮৬ রানে প্রথম উইকেট হারানো নিউজিল্যান্ড দুই রানের মধ্যেই হারিয়ে ফেলে আরেকটি উইকেট। রবিন্দ্র থিকশানাকে মারতে গিয়ে মিডঅনে ধরা খেয়ে যান। ৩ চার ও ৩ ছয়ে ৩৪ বলে ৪২ রানের ইনিংস খেলে সাজঘরে ফিরে যান তিনি। কেন উইলিয়ামসন এসে ১৪ রানেই বোল্ড হয়ে ফিরে যান। কিন্তু ড্যারিল মিচেল প্রথম বল থেকেই ব্যাটিং করেন নেট রানরেটের দিকে চোখ রেখে। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে দ্রুত রান তাড়ার তাড়না ফুটে উঠে তার ব্যাটে। দুর্দান্ত সব শটেও বের করতে থাকেন বাউন্ডারি। ভুল বোঝাবুঝিতে ৭ রানে মার্ক চ্যাপম্যান রানআউট হয়ে ফিরে যান। মিচেলের ইনিংস ৩০ বলের বড় হয়নি। তবে ৩০ বলের ইনিংসেই ৫টি চার ও ২ ছয় মেরে ৪৩ রান এনে মিচেল যখন ফিরছেন তখন ব্ল্যাকক্যাপসরা ২৩তম ওভারে জয় থেকে ১০ রান দূরে। ১০ বলে ১৭ রানের ক্যামিও খেলে জয় ছিনিয়ে আনতে বেশি সময় নেননি গ্লেন ফিলিপস। যার ফলে ৫ উইকেটের বিশাল জয় পেয়ে যায় নিউজিল্যান্ড।
প্রথম পর্বের শেষ ম্যাচে এসে সেমিতে যেতে যা করার দরকার ছিল, তার সবটুকুই করেছে নিউজিল্যান্ড। শ্রীলঙ্কাকে ১৭১ রানেই অলআউট করে দিয়ে জিততে নেয়নি ২৩.২ ওভারের বেশি। ১০ পয়েন্ট নিয়ে নেট রানরেটে বিশাল ব্যবধানে এগিয়ে থেকে সেমিতে এক পা দিয়েই রাখল ব্ল্যাক ক্যাপসরা।