ম্যাক্সওয়েলের দানবীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার অবিশ্বাস্য জয়!
একের পর এক নাটকীয়তার জন্ম দিচ্ছে এবারের ১৩তম বিশ্বকাপ। বাংলাদেশ-শ্রীলংকা ম্যাচে বিশ্ববাসী দেখেছে প্রথম বারের মত “টাইমড আউট” আর মঙ্গলবারের ৩৯তম অস্ট্রেলিয়া-আফগানিস্তান ম্যাচে ম্যাক্সওয়েলের দানবীয় মারকুটে ২০১ রানের ইনিংস। যতই শেষের দিকে যাচ্ছে ততই জমে উঠছে এবারের বিশ্বকাপ।
মঙ্গলবার ভারতের মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়া-আফগানিস্তান ম্যাচটিতে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় আফগানরা। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৭.৬ ওভারে দলীয় ৩৮ রানে ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ২১ রান করে সাজঘরে ফেরেন। ওয়ান ডাউনে নেমে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ওপেনার ইব্রাহিম জাদরানের সঙ্গে ১০০ বলে ৮৩ রান গড়ে রহমত শাহ। ২৪.৪ ওভারে দলীয় ১২১ রানে ম্যাক্সওয়েলের শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন রহমত শাহ। যাবার আগে ৪৪ বলে এক চারের সাহায্যে ৩০ রান করেন তিনি। চারে ব্যাটিংয়ে নেমে ওপেনার ইব্রাহিম জাদরানের সঙ্গে দলের হাল ধরেন অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদি। তৃতীয় উইকেট জুটিতে তারা ৭৬ বলে ৫৩ রান যোগ করেন। ৪৩ বলে দুই বাউন্ডারিতে ২৬ রান করে স্টার্কের শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন হাশমতউল্লাহ। হাশমতউল্লাহ আউট হওয়ার পর আজমতউল্লাহ ওমরজাই এসে আক্রমণের রঙ মাখান আফগানদের ইনিংসে। তৃতীয় বলেই স্টার্ককে মারেন ছক্কা, এরপর অ্যাডাম জ্যাম্পাকে আরেকটি ছক্কার সাথে দুটি চারও আসে তার ব্যাট থেকে। ৪১তম ওভারে দুইশ পেরিয়ে যায় আফগানরা। কিন্তু ১৭ বলে ২২ রানে থাকা ওমরজাই আবার মারতে গিয়ে ধরা খেয়ে যান বাউন্ডারিতে। ৪ উইকেট হারিয়ে তখন আফগানদের সংগ্রহ ২১০ রান। ৬ নম্বরে ব্যাট করতে নামা সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ নবি ১০ বলে মাত্র ১২ রান করেন। তাকে সাজঘরে ফেরান জশ হ্যাজলউড। শেষের দিকে ইব্রাহিম জাদরান ও সাবেক অধিনায়ক রশিদ খান ঝড়ো ব্যাটিংয়ে মাত্র ২৮ বলে ৫৮ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন। ষষ্ঠ উইকেটে তাদের এই জুটির অবদানেই তিনশোর দোরগোড়ায় গিয়ে পৌঁছায় আফগানিস্তান। ইনিংস ওপেন করা ইব্রাহিম জাদরান শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করেন। তিনি ১৪৩ বল খেলে দলীয় সর্বোচ্চ ১২৯ রান করে অপরাজিত থাকেন। মাত্র ১৮ বলে ৩৫ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন রশিদ খান। নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৫ উইকেটের বিনিময়ে ২৯১ রান করে আফগানরা।
২৯২ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৪৯ রানে প্রথম সারির ৪ ব্যাটসম্যানের উইকেট হারিয়ে চাপের মধ্যে পড়ে যায় অজিরা। দলকে চাপমুক্ত করে খেলায় ফেরাতে চেষ্টা করে মার্নাস লাবুশেন ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। কিন্তু লাবুশেনও বেশিক্ষন স্থায়ী হতে পারে না ক্রিজে। ১৪.১ ওভারে দলীয় ৬৯ রানের মাথায় রহমত শাহ তাকে রান আউট করে। এরপর মার্কাস স্টয়নিস ও মিচেল স্টার্ক সাজঘরে ফিরে গেলে অজিদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৮.৩ ওভারে ৭ উইকেটে ৯১ রান। এমন অবস্থায় অনেকে আরেকটি আফগান রূপকথার গল্প দেখার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। মনে হচ্ছিল এই বুঝি অলআউট হয়ে লজ্জাজনক এক পরাজয়ের স্বাদ পাবে অজিরা। তবে না! খেলা তখনও ঢের বাকি ছিল। অজিদের হয়ে ক্রিজে তখনও টিকে ছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। দলের মহাবিপদের সময় ত্রাতা হয়ে আসেন এই অলরাউন্ডার।
৯১ রানে সপ্তম উইকেট হারানোর পর অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্সকে নিয়ে জুটি বাঁধেন ম্যাক্সওয়েল। ৫১ বলে ফিফটি পেয়ে, সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৭৬ বলে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় ক্র্যাম্প, সেঞ্চুরির পরেই ভুগতে দেখা যায় ডানহাতি এই ব্যাটসমেনকে। এরপর ১৪৭ রানে চলে যাওয়ার পর অবস্থা বেগতিক হয়ে যায়। অ্যাডাম জ্যাম্পা চলে এসেছিলেন বাউন্ডারি লাইনের কাছে। কিন্তু ম্যাক্সওয়েল মাঠ থেকে উঠেননি। দৌড়াতে না পারলেও জায়গায় দাঁড়িয়ে চালাতে থাকেন তাণ্ডব। তাকে ভালোই সঙ্গে দিচ্ছিলেন অজি অধিনায়ক। ম্যাক্সওয়েল জিরো বডি মুভমেন্টে শুধু হাতের জাদু দেখাতে থাকেন। কব্জির জোর আর পাওয়ারে ঝড় চালিয়ে লণ্ডভণ্ড করে দেন আফগানিস্তানকে। আফগান বোলাররা অসহায় হয়ে পড়েছিলেন। অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্সকে নিয়ে ৮ম উইকেটে ১৭০ বলে ২০২ রান করে দলকে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে দেন এই জেদি ব্যাটসমেন। অসম্ভব মানসিক জেদ না থাকলে এই ইনিংস খেলা সম্ভব নয়। ম্যাক্সওয়েলের ২১টি চার আর ১০টি ছক্কায় সাজানো ২০১ রানের দানবীয় ইনিংসে পরাজয়ের শঙ্কা কাটিয়ে ১৯ বল আগেই ৩ উইকেটের দাপুটে জয়ে সেমিতে উঠে যায় অস্ট্রেলিয়া। পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলটি আবারও বিশ্বকাপ জেতার ক্ষমতা রাখে তা জানান দেয় বিশ্ববাসীকে।
স্কোর