অপরাজেয় স্বাগতিকদের কাছে বিধ্বস্ত প্রোটিয়ারা
কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে বিশ্বকাপের ৩৭তম ম্যাচের দিনটি ছিল স্বাগতিকদের জন্য মনে রাখার মত একটি দিন। এদিন ভারতের তারকা ব্যাটসমেন বিরাট কোহলির জন্মদিন। দিনটিকে আরো স্মরণীয় করে রাখলেন এই ব্যাটসমেন। তার শতকের উপর ভর করে ভারত প্রতিপক্ষ দক্ষিন আফ্রিকাকে ২৪৩ রানের বিশাল ব্যবধানে হারায়। দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপ ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বড় এবং লজ্জাজনক হার। পাশাপাশি বিরাট কোহলি এই শতকের মধ্যে দিয়ে ভারতীয় সাবেক কিংবদন্তি ব্যাটসমেন শচীন টেন্ডুলকারের পাশে নিজের নাম লেখালেন। বর্তমানে সর্বোচ্চ ৪৯টি ওয়ানডে শতক আছে এই দুই ভারতীয় ব্যাটসমেনের রেকর্ডের খাতায়।
কলকাতার উইকেট ধীরগতির হওয়া সত্ত্বেও ম্যাচের শুরুতে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। হাই-ভোল্টেজ ম্যাচের শুরু থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিং করেন দুই ওপেনার অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও শুভমান গিল। ৫.৫ ওভারে দলীয় ৬২ রানে কাগিসো রাবাদার শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরার সময় রোহিতের সংগ্রহ ছিল ২৪ বলে ৪০ রান। এরপর ওয়ান ডাউনে নামেন “বার্থডে বয়” কোহলি, এসেই পাওয়ারপ্লেতে চারটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে প্রোটিয়াদের জানান দেন বড় ইনিংস খেলার। ১৪ চার ও ৩ ছক্কায় ভারত পাওয়ারপ্লেতেই এনে ফেলে ৯১ রান। মার্কো ইয়ানসেন ৪ ওভারেই ৪৩ রান দিয়ে প্রথমবারের মতো এই বিশ্বকাপে পাওয়ার প্লেতে উইকেটশূন্য থাকেন। পাওয়ার প্লের পরে কেশব মহারাজের স্পিন জাদুতে আরেক ওপেনার শুভমান গিল ২৩ বলে ২৪ রান করে সাজঘরে ফিরলে ব্যাটিং ঝড় থেমে গিয়ে শীতলতা নেমে আসে কলকাতায়। গিলের পরে শ্রেয়াস আইয়ার মাঠে নেমে কোহলির সাথে জুটি বেঁধে খুব সাবধানে খেলছিলেন। কলকাতার স্লো টার্নিং উইকেটে দুর্দান্ত লাইন-লেংথে কেশব মহারাজ চেপে ধরেন ভারতকে। রাবাদাও ঝড় থামানো ৫ ওভারের স্পেল শেষ করেন ১৯ রানে। একসময় ৩৫ বলে ১২ রানে থাকা আইয়ার পরে একাদশে ফেরা তাব্রেইজ শামসির উপর চড়াও হন। শামসিকে কয়েকটি বাউন্ডারি মারেন আইয়ার৷ তবে একপ্রান্তে নিঁখুত বোলিংয়ে বাউন্ডারিহীন দশ ওভারের স্পেল শেষ করেন মহারাজ ৩০ রান দিয়ে।
কোহলি-আইয়ারের জুটি ভেঙে আর ম্যাচে ফেরা হয়নি প্রোটিয়াদের। যদিও ৩৬ রানে থাকা অবস্থায় শামসির লেগ স্টাম্প থেকে বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাটের কানা লেগেছিল কোহলির, কিন্তু উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি কক তা হাতে জমাতে পারেননি। ১২৩ বলে চতুর্থ উইকেট জুটিতে শতরান পার করে ভারত, কোহলি তার অর্ধশতক পূর্ণ করেন ৬৭ বলে। আইয়ারও অর্ধশতক পেয়ে যান ৬৪ বলে। ৩৪তম ওভারে দুইশ পেরিয়ে যায় ভারত। শ্রেয়ার আইয়ার পরে আক্রমণের পথ বেছে নিতে গিয়ে লুঙ্গি এনগিডির বলে ক্যাচ তুলেন। ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৮৭ বলে ৭৭ রানের ইনিংস খেলে যখন ফিরছেন, ভারত ২২৭ রানে তৃতীয় উইকেট হারায়। লোকেশ রাহুল ১৭ বলে ৮ রান করে বাউন্ডারিতে ধরা পরে গেলে ২৪৯ রানেই চতুর্থ উইকেট পরে ভারতের। সূর্যকুমার যাদব এসে তাণ্ডবের ইঙ্গিত দিলেও ১৪ বলে ৫ চারে ২২ রান করে সাজঘরে ফিরে যান। ওদিকে কোহলি সেঞ্চুরির দেখা পেয়ে যান ১১৯ বলে। তার সেঞ্চুরির উদযাপন আরও বাড়িয়ে দেন শেষের দিকে রবীন্দ্র জাদেজা ঝড় তুলে। ৩ চার ও ১ ছয়ে ১৫ বলে ২৯ রানে অপরাজিত থাকেন জাদেজা। ১০ চারে কোহলি অপরাজিত থাকেন ১২১ বলে ১০১ রানে। নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ভারতের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ৩২৬ রান।
৩২৬ রানের বড় টার্গেটের জবাবে ব্যাট করতে নেমে অকল্পনীয় ব্যাটিং বিপর্যয়ে পরে দক্ষিণ আফ্রিকা। ভারতীয় বোলারদের বিধ্বংসী বোলিংয়ে ২৭.১ ওভারে মাত্র ৮৩ রানে সবকটি উইকেট হারিয়ে ফেলে প্রোটিয়ারা। রবীন্দ্র জাদেজা ৯ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে ৫টি উইকেট নিয়ে প্রোটিয়া বধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। মোহাম্মদ শামি ও কুলদীপ যাদব ২টি করে উইকেট নিয়েছেন।