চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিলো ইংল্যান্ড
বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড কিন্তু চলতি আসরে বাজে পারফরম্যান্সের কারণে ৬ ম্যাচে মাত্র ২ পয়েন্ট নিয়ে আগেই সেমিফাইনালের দৌড় থেকে ছিটকে গেছে। আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে শনিবারে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের ৩৬তম ম্যাচটিতে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়া।
টসে জিতে ইংলিশরা অজিদের ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানায়। ব্যাটিংয়ের শুরুতেই দুই ওপেনারকে হারিয়ে অজিরা ধাক্কা খায়। ১.৪ ওভারে দলীয় ১১ রানে ট্রাভিস হেড এবং ৫.৪ ওভারে দলীয় ৩৮ রানে ডেভিড ওয়ার্নার সাজঘরে ফিরে যান। ট্রাভিস ১০ বলে ১১ এবং ওয়ার্নার ১৬ বলে ১৫ রান করেন। বিধ্বংসী দুই ওপেনারকে হারিয়ে সতর্কভাবে খেলতে থাকে অজিরা, পাওয়ার প্লে শেষ করে ৪৮ রানে। একপাশে স্টিভ স্মিথ স্বস্তিতে খেলে গেলেও মারনাস লাবুশেন ভোগান্তিতে পড়ে স্ট্রাইক বদল করতে ব্যর্থ হয়ে ধীরগতিতে শুরু করেন। ২০তম ওভারেই একশ পেরিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু লেগ স্পিনার রশিদ এসেই ভেঙে দেন স্মিথ-লাবুশেনের ৯৬ বলে ৭৫ রানের জুটি। স্টিভ স্মিথ ৫২ বলে ৪৪ রান করে স্পিনার রশিদের শিকার হয়ে দলীয় ১১৩ রানে সাজঘরে ফেরেন। স্মিথ ফেরার ৪ রানের মধ্যেই আরেকটি উইকেট হারিয়ে বসে অজিরা, জশ ইংলিসকেও ব্যক্তিগত ৩ রানে সাজঘরে ফেরায় আদিল রশিদ। ততক্ষণে সেট হয়ে যাওয়া লাবুশেন দায়িত্ব সহকারে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন অস্ট্রেলিয়াকে। ৬৩ বলে নিজের ফিফটি পেয়ে যান তিনি। ক্যামেরন গ্রিন এসেও ভালো শুরু করেন। দুজনের জুটি পঞ্চাশের ঘরে পৌছে যায় ৫৩ বলে। কিন্তু জুটি বড় হওয়ার আগেই গতিময় কিউই পেসার মার্ক উড এসে লাবুশেনকে এলবিডব্লিউয়ের শিকার করলে ৬১ রানের বড় হয়নি অজিদের পঞ্চম জুটি। ৮৩ বলে ৭ চারে ৭১ রানের ইনিংস খেলে বিদায় নেন লাবুশেন। তারপর ক্যামেরন গ্রিন ও মার্কাস স্টয়নিস একত্রীত হয়ে ৩৭ ওভারেই অস্ট্রেলিয়াকে ২০০ রানে পৌঁছে দেয়। ডেভিড উইলির বলে ক্যামেরন গ্রিন বোল্ড হয়ে অর্ধশতকের আক্ষেপ নিয়ে সাজঘরে ফেরেন ৫২ বলে ৪৭ রান করে। দলীয় সংগ্রহ তখন ৬ উইকেটে ২২৩ রান। মার্কাস স্টয়নিস পেশির জোর দেখিয়ে ব্যাটিং তান্ডবের ইঙ্গিত দিলেও লাভ হয়নি, লিয়াম লিভিংস্টোনের শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরার আগে ৩২ বলে ৩ চার আর ২ ছয়ের সাহায্যে ৩৫ রান করেন তিনি। ২৪১ রানে সপ্তম উইকেট হারানো অজিরা এরপর দ্রুতই হারায় অধিনায়ক প্যাট কামিন্সকে।
তবে ইংলিশদের হতাশ করে অপ্রত্যাশিতভাবে নবম উইকেটে ২৯ বলে ৩৮ রানের জুটি পেয়ে যায় অজিরা। অ্যাডাম জ্যাম্পা খেলেন ১৯ বলে ৪টি চারে ২৯ রানের ক্যামিও। শেষ ওভারে জ্যাম্পার পর মিচেল স্টার্ককেও আউট করে দেন ক্রিস ওকস। ফলস্বরূপ ৪৯.৩ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ২৮৬ রানের পুঁজি গড়ে অসিরা। ৫৪ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ইংলিশদের হয়ে সেরা বোলিং পারফরম্যান্স দেখান ক্রিস ওকস, সঙ্গে রশিদ ও উড পান দুটি করে উইকেট। উইলি ও লিভিংস্টোনের ঝুলিতে যায় একটি করে উইকেট।
জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে প্রথম বলেই ওপেনার জনি বেয়ারস্টোকে হারায় ইংলিশরা। এরপর জো রুট নামলেও বেশিক্ষন ক্রিজে থিতু হতে পারেননি। ৪.৩ ওভারে দলীয় ১৯ রানে সাজঘরে ফেরেন মাত্র ১৩ রান করে। ১৯ রানে ২ উইকেট হারানো ইংলিশ শিবিরের চাপ কমাতে চেষ্টা চালান ডেভিড ম্যালান ও বেন স্টোকস। তাদের দুজনের গড়া তৃতীয় উইকেটে ৮৪ রানের পার্টনারশিপে মোটামুটি ঘুরে দাঁড়িয়েছিল ইংলিশরা, কিন্তু বিধিবাম ২৩তম ওভারে দলীয় ১০৩ রানে ইংল্যান্ড হারায় তৃতীয় উইকেট। ৬৪ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কার ইনিংস শেষে ডেভিড ম্যালান সাজঘরে ফেরেন। দ্রুতই অধিনায়ক জস বাটলারের উইকেটও খুইয়ে ইংলিশরা ব্যাকফুটে চলে যায়। বেন স্টোকস অজিদের পথের কাঁটা হয়ে ৯০ বলে ৬৪ রান করলেও ৩৬তম ওভারে জাম্পার শিকার হওয়ার পর ম্যাচ থেকে ধীরে ধীরে ছিটকে পড়ে ইংল্যান্ড। ৪২ রান করে মঈন আলী সাজঘরে ফিরলে, জয়ের জন্য শেষ ৪ ওভারে ৫৪ রান দরকার ছিল ইংলিশদের। ক্রিস ওকস এবং আদিল রশিদ ৩৭ রানের জুটি গড়লেও লাভ হয়নি। ৪৮.১ ওভারে দলীয় ২৫৩ রানে গুঁটিয়ে যায় ইংল্যান্ড।
অস্ট্রেলিয়ার জয়ে ১০ ওভারে মাত্র ২১ রানে ৩ উইকেট নেন অ্যাডাম জাম্পা, ২টি করে উইকেট নেন মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স ও জশ হ্যাজল উড। এই পরাজয়ে বিশ্বকাপ মিশনের ইতি টানলো গতবারের বিশ্বচ্যাম্পিওনরা। ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে জায়গা করে নেওয়ার জন্য বিশ্বকাপ পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষ ৮ দলের মধ্যে থাকতেই হবে ইংল্যান্ডের। কিন্তু তা আর পারছে কোথায়! উল্টো একটু রসিকতা করে বলাই যায়, ইংল্যান্ড বাংলাদেশকে পয়েন্ট তালিকার দশে নামতেই দিচ্ছে না!