আবুধাবির শেখ জায়েদ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ১১ বছর পর চট্টগ্রাম হারের প্রতিশোধ নিয়েছে বাংলাদেশ। আইসিসির সহযোগী সদস্যদেশ হংকংকে ১৪ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটে হারিয়েছে টাইগাররা।
তবে এই জয়েও তৃপ্তির ঢেকুর তোলার উপায় নেই। হংকংয়ের বিপক্ষে আফগানিস্তানের মতো বড় জয় যে পাওয়া গেল না!
বড় জয় আসলেই প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের।
‘গ্রুপ অব ডেথ’ হিসেবে বিবেচনা করা ‘বি’ গ্রুপ থেকে কাগজে–কলমে সুপার ফোরে যাওয়ার দৌড়ে আছে আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ।
তুলনামূলক দুর্বল প্রতিপক্ষ হংকংয়ের বিপক্ষে তাই রানরেটটা বাড়িয়ে নিতে চাইবে তিন দলই। শ্রীলঙ্কা এখনো তাদের বিপক্ষে খেলেনি।
আফগানিস্তান কাজটা করতে পারলেও বাংলাদেশ সেভাবে পারেনি। ৯৪ রানের জয়ে আফগানিস্তানের নেট রানরেট ৪.৭০০, বাংলাদেশের ১.০০১।
হতাশার গল্পটা যে বোলিংয়েই বেশি!
টস জিতে ফিল্ডিং বেছে নেওয়ার পর মেহেদী হাসানের করা প্রথম ওভারে এলবিডব্লুর আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দিলে রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। কিন্তু আম্পায়ার্স কলে বেঁচে যান জিশান আলী।
উইকেটের অপেক্ষা খুব বেশি লম্বা হয়নি তাসকিনের পরের ওভারেই অংশুমান রাঠ ক্যাচ তুলে দেওয়ায়। যদিও আম্পায়ার সেটি আউট দেননি।
তবে রিপ্লেতে দেখা যায়, অংশুমানের ব্যাট ছুঁয়েই বল গেছে লিটনের গ্লাভসে।
এরপরই বাড়তে শুরু করে বাংলাদেশের হতাশা।
পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৩৪ রান করা হংকংয়ের হাল ধরেন জিশান ও নিজাকাত খান।
রান খুব একটা না এলেও সহজে উইকেট হারাননি তাঁরা। ১১তম ওভারে তানজিম ৪১ বলে তাঁদের ৪১ রানের জুটি ভেঙে স্বস্তি এনে দেন।
জিশান–নিজাকাতের পর অধিনায়ক ইয়াসিম মুর্তজার কার্যকর এক ইনিংসে হংকং ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৪৩ রান তুলতে পারে।
পাওয়ার হিটিং কোচ জুলিয়ান উডের দীক্ষা কাজে লাগিয়ে সিলেটে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে টপ অর্ডারদের বিগ হিটের প্রদর্শনী ছিল না এশিয়া কাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচে।
হংকংয়ের বিপক্ষে যে কোনো মূল্যে জিততে হবে, এই মানসিকতা নিয়ে ব্যাট করেছে বাংলাদেশ।
পুঁচকে প্রতিপক্ষ হংকং যেখানে তাদের ইনিংসে মেরেছে ৮ বাউন্ডারির পাশে ৫ ছক্কা, সেখানে বাংলাদেশের ইনিংসে ১০টি বাউন্ডারির পাশে ছক্কার সংখ্যা মাত্র ২টি।
বাংলাদেশের সামনে জয়ের চ্যালেঞ্জ তো ছিলই, চাওয়া ছিল কত দ্রুত ম্যাচটা শেষ করা যায়, তা–ও।
সেই তাড়া দেখা যায় ওপেনার পারভেজ হোসেনের ব্যাটে। তবে ২ চার ও ১ ছক্কায় ১৪ বলে ১৯ রানেই শেষ হয় সেই ইনিংস।
আরেক ওপেনার তানজিদের ব্যাটও হাসেনি। ১৮ বলে ১৪ রান করে থামেন তিনি।
ব্যাটসম্যানদের আউট হওয়া মানেই রানরেট আরও কমে যাওয়া। বাংলাদেশ তাদের তৃতীয় উইকেটটি হারায় জয় থেকে মাত্র ২ রান দূরে থাকতে।
৬ চার ও ১ ছক্কায় ৩৯ বলে ৫৯ রানের ইনিংসে দলকে জয়ের খুব কাছে পৌঁছে দিয়ে জয়ের নায়ক অধিনায়ক লিটন বোল্ড হয়ে যান।
৬৯ বলে ৯৫ রানের জুটিতে তাঁর সঙ্গী হৃদয় অবশ্য ৩৬ বলে অপরাজিত ৩৫ রান করে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন।
কিন্তু তাঁর ফর্ম নিয়ে সম্প্রতি ওঠা প্রশ্নচিহ্নটা আজও পুরোপুরি মোছেনি।
সিলেটে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচে ১৪ বলে ৯ রানে দর্শকের দুয়োধ্বনী শুনেছেন হৃদয়। হংকংয়ের বিপক্ষে ৩৬ বলের ইনিংসে যে শুধু একটিই বাউন্ডারি মারতে পেরেছেন হৃদয়!
রান না হয় করেছেন, কিন্তু টি–টোয়েন্টিসুলভ ব্যাটিংটা কোথায়! একটা জয় আজ পাওয়া গেছে ঠিকই। কিন্তু তৃপ্তির ঢেকুর নেয়ার যে তেমন সুযোগ নেই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
হংকং: ২০ ওভারে ১৪৩/৭ (নিজাকাত ৪২, জিশান ৩০, ইয়াসিম ২৮); (তানজিম ২/২১, রিশাদ ২/৩১, তাসকিন ২/৩৮)।
বাংলাদেশ: ১৭.৪ ওভারে ১৪৪/৩ (লিটন ৫৯, হৃদয় ৩৫*, পারভেজ ১৯, তানজিদ ১৪); (আতিক ২/১৪)।
ফল: বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: লিটন দাস।




