ফিফটি করা হ্যারি টেক্টরকে বিদায় করে তখন মাত্রই ম্যাচে দারুণভাবে প্রাণ ফিরিয়েছে খুলনা। জয়ের জন্য ২ ওভারে সিলেটের প্রয়োজন ১৯ রান। দুই দলের সম্ভাবনা বলা যায় প্রায় সমান। বোলিং আক্রমণে এলেন রুবেল হোসেন। কিন্তু মৌসুমের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা অভিজ্ঞ পেসারকে তুলাধুনা করে ছাড়লেন রায়ান বার্ল। ওই ওভার থেকেই এলো ২৪ রান। ১ ওভার বাকি থাকতেই ম্যাচ শেষ!
শেষ তিন ওভারে তাণ্ডব চালিয়ে দেড়শ ছাড়িয়েছিল খুলনা টাইগার্সের স্কোর। সিলেট স্ট্রাইকার্স জবাব দিল শেষের ঝড়েই। বিপিএলের ম্যাচটি তারা জিতে নিল ৫ উইকেটে।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে শুক্রবার খুলনা ২০ ওভারে তোলে ৪ উইকেটে ১৫৩ রান। ইনিংসের বেশির ভাগ সময় তাদের রানের গতি ছিল মন্থর। তবে এনামুল হক ও হাবিবুর রহমান শেষ তিন ওভারে তুলে ফেলেন ৫১ রান।
রান তাড়ায় শূন্য রানে দুই দফায় জীবন পেয়ে হ্যারি টেক্টর করেন ৫২ বলে ৬১ রান। শেষ দিকে ১৬ বলে ৩২ রানে অপরাজিত থাকেন রায়ান বার্ল।
প্রায় ৯ মাস পর প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরে নিজের প্রথম ওভারে এলোমেলো বোলিংয়ে ৪টি ওয়াইড দেন রুবেল। এরপর তো শেষ দিকে ফিরে ওই ওভার। ২ ওভারে ২৬ রান দিয়ে তার প্রত্যাবর্তন রূপ নিল হতাশায়।
টসজয়ী খুলনার ইনিংসে পরিষ্কার ছিল দুটি ভাগ। প্রথম ১৭ ওভারে তাদের রান ছিল ১০২। তখনও পর্যন্ত ভীষণভাবে ধুঁকছিলেন এনামুল ও সোহান। শেষ ৩ ওভারে এই দুজনই তান্ডব চালান।
ইনিংসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খেলে ৫৮ বলে ৬৭ রানে অপরাজিত থাকেন এনামুল। ৩টি করে চার ও ছক্কায় সোহান করেন ৩০ বলে ৪৩ রান।
প্রথম ওভারে সানজামুল ইসলামকে দুটি বাউন্ডারিতে ম্যাচ শুরু করেন এভিন লুইস। তবে প্রত্যাশিত ঝড় তুলতে পারেননি ঝড়ো এই ব্যাটসম্যান। সামিত প্যাটেলের শর্ট বল একটু বাড়তি লাফানোয় টাইমিংয়ে গড়বড় হয় তার। আলগা বলে আউট হয়ে হতাশায় বেশ কিছুক্ষণ ক্রিজে দাঁড়িয়ে ছিলেন ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান (১০ বলে ১২)।
লুইসের ঘাটতি পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন আফিফ হোসেন। তবে পূর্ণতা পায়নি তার ইনিংসও। ৩ চার ১ ছক্কায় ১৬ বলে ২৪ করে ফেরেন তিনি।
টিকতে পারেননি চারে নামা মাহমুদুল হাসান জয়ও। ১০ ওভারে খুলনার রান ছিল ৩ উইকেটে ৫৬। এনামুল খেলছেন ২৫ বলে ১৭ রান নিয়ে।
দ্বিতীয় ওভারের পর দ্বাদশ ওভার পর্যন্ত আর বাউন্ডারির দেখা পাননি এনামুল। পরে সামিত প্যাটেলের বলে ইন সাইড শটে চার ও রেজাউর রহমান রাজার শর্ট বলে পুল করে ছক্কায় রান কিছুটা বাড়ান তিনি।
ফিফটি করতে তার পরও ৫১ বল লেগে যায় তার। ততক্ষণে ইনিংসের ১৭ ওভার শেষ। সোহান তখন খেলছেন ১৯ বলে ১২ রান নিয়ে।
এরপরই জ্বলে ওঠেন সোহান। শেষটুকু দুর্দান্ত করেন এনামুলও। সিলেটের আলগা বোলিং কাজে লাগিয়ে ইনিংসের চিত্রই বদলে দেন দুজন।
বেনি হাওয়েলের ওভারে লেংথ বলে দুটি ছক্কা মারেন সোহান। পরের ওভারেই শেষ হতে পারত তার ইনিংস। কিন্তু তানজিমের বলে লং অফে ক্যাচ নিতে ব্যর্থ হন হাওয়েল। তার হাতে লেগে চার হয়ে যায় বল। ওই ওভারেই ব্যাটের কানায় লেগে আরেকটি বাউন্ডারি পান তিনি।
শেষ ওভার শুরু করেন তিনি রেজাউর রহমানের হাফ ভলিতে লং অন দিয়ে ছক্কায় উড়িয়ে। এরপর এনামুলের পালা।
টানা তিন বলে অফ স্টাম্পের বাইরে কাছাকাছি লেংথে বল রাখেন রেজাউর, প্রতিটিতেই রিভার্স স্কুপ করে শর্ট থার্ডম্যান ফিল্ডারের ওপর দিয়ে বল পাঠিয়ে দেন এনামুল। প্রথম দুটিতে আসে বাউন্ডারি, শেষটিতে ছক্কা।
শেষ বলে রান আউট হয়ে যান সোহান। তবে জুটিতে আসে ৬৭ বলে ৯৯ রান।
১৭ ওভার শেষে যে দলের রান ছিল ১০২, শেষ তিন ওভারের ঝড়ে তারা পেরিয়ে যায় দেড়শ।
মৌসুমে প্রথমবার খেলতে নেমে ৪ ওভারে ১৬ রান দিয়ে ১ উইকেট নেন সানজামুল ইসলাম।
সেই পুঁজি নিয়ে বোলিংয়ের শুরুটাও খুলনার হতে পারত ভালো। ইনিংসের প্রথম বলেই নাহিদুল ইসলামের বলে স্লিপে টেক্টরের ক্যাচ নিতে পারেননি জয়। পরের ওভারে লং লেগে সহজ ক্যাচ ছাড়েন রুবেল হোসেন।
৮ বল খেলে টেক্টর তখনও কোনো রান করতে পারেনি।
আরেক প্রান্তে ওপেন করতে নেমে সামিত প্যাটেল দুটি ছক্কা মেরে বিদায় নেন। আগের ম্যাচে রানে ফেরার আভাস দেওয়া নাজমুল হোসেন শান্ত আবারও ব্যর্থ হয়ে বিদায় নেন ১৮ রানে।
শান্তর এক বল পর ছক্কার চেষ্টায় বিদায় নেন জাকির হাসানও। দুটি উইকেটই নেন আসরে প্রথমবার খেলতে নামা ক্যারিবিয়ান অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার মার্ক ডেয়াল।
টেক্টরের সঙ্গে জুটি গড়ে তখন দলকে পথে ফেরানোর চেষ্টা করেন অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন।
মন্থর শুরুর পর টেক্টর রানের গতি বাড়ান একটু। তবু রান-বলের টানাপোড়েন বাড়ছিল। সেই দাবি মেটাতে গিয়ে ডেয়ালকে তৃতীয় উইকেট উপহার দিয়ে স্টাম্পড হয়ে ফেরেন ১৯ বলে ২৪ রান করা মিঠুন।
পরের ওভারে কাসুন রাজিথার বলে চার ও ছক্কা মেরে চাপ কিছুটা কমান টেক্টর। তাকে সঙ্গ দিয়ে এগিয়ে যান বার্ল।
১৮তম ওভারের শেষ বলে যখন সুমন খানের বলে সোহানের হাতে ধরা পড়েন টেক্টর, খুলনার সম্ভাবনাও তখন ফেরে ভালোভাবেই।
কিন্তু রুবেলের এক ওভারেই সব শেষ।
গত বিপিএলের ফাইনালে রুবেলের এক ওভারে ২৩ রান হওয়াতেই পরাজয়ের দিকে এগিয়ে গিয়েছিল সিলেট স্ট্রাইকার্স। এবারের আসরে নিজের প্রথম ম্যাচে এক ওভারে ২৪ রান দিয়ে খুলনাকে পরাজয়ের দিকে ঠেলে দিলেন এই পেসার।
টানা চার জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করা খুলনা হেরে গেল টানা তিন ম্যাচে। প্রথম ম্যাচ ম্যাচেই হেরে যাওয়া সিলেট জয়ের স্বাদ পেল পরের চার ম্যাচের তিনটিতে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
খুলনা টাইগার্স: ২০ ওভারে ১৫৩/৪ (এনামুল ৬৭*, লুইস ১২, আফিফ ২৪, জয় ১, সোহান ৪৩; সানজামুল ৪-০-১৬-১, তানজিম ৩-০-২৬-১, সামিত ৪-০-২২-১, টেক্টর ১-০-৮-০, রেজাউর ৩-০-৪৫-০, হাওয়েল ৪-০-২৭-১, বার্ল ১-০-৭-০)
সিলেট স্ট্রাইকার্স: ১৯ ওভারে ১৫৯/৫ (টেক্টর , সামিত ১৩, শান্ত ১৮, জাকির ০, মিঠুন ২৪, বার্ল ৩২*, আরিফুল ১*; নাহিদুল ৩-১-১১-১, সুমন ৪-০-৩৬-১, ডেয়াল ৪-০-১৯-৩, রাজিথা ৩-০-২৯-০, নাসুম ৩-০-২৬-০, রুবেল ২-০-৩৬-০)।
ফল: সিলেট স্ট্রাইকার্স ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: হ্যারি টেক্টর।