ডাচদের গুড়িয়ে একমাত্র অপরাজিত দল হিসেবে সেমিফাইনালে স্বাগতিকরা
আগেই চার সেমিফাইনালিস্ট নির্ধারিত হওয়ায় ভারত-নেদারল্যান্ডসের মধ্যকার বিশ্বকাপের ৪৫তম ম্যাচটি গুরুত্বহীন ম্যাচে পরিণত হয়। তবে নেদারল্যান্ডসের জন্য ম্যাচটি বিশেষ কিছু হতো, যদি তারা ভারতকে হারাতে পারতো! সেই জয়ে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির টিকিট পেয়ে যেত তারা। তবে স্বপ্নের জয়কে বহু দূরে রেখে ১৬০ রানের পরাজয় নিয়ে ১৩তম বিশ্বকাপের আসর থেকে বিদায় নিলো ডাচরা।
রোববার বেঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় স্বাগতিকরা। ভারতীয় দুই ওপেনার অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও শুবমান গিল প্রথম পাওয়ারপ্লেতেই ঝড়ের গতিতে ৯১ রান তোলেন। ৩০ বলে ফিফটি হাঁকিয়ে ফেলা শুবমান গিল যখন পল ফন মিকেরেনের বাউন্সারে ফাইন লেগে তেজা নিদামানুরুর তালুবন্দি হন তখন ভাঙে ১০০ রানের উদ্বোধনী জুটি। ৩ চার ও ৪ ছয়ে ৩২ বলে ৫১ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। আরেক ওপেনার অধিনায়ক রোহিত ৪৪ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করে আউট হয়ে যান ইনিংস বড় করতে না পেরে। ৬১ রানে বাস ডি লিডির বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন বাউন্ডারিতে। ৫৪ বলে ৮ চার ও ২ ছয় মেরে সাজঘরে ফেরেন রোহিত। বিশ্বকাপের এবারের আসরের রান মেশিন কোহলি শুরু করেন ধীরগতিতে। ২৫ বলে ১৪ রানে থাকা কোহলি পরে খেলার ধরণ পাল্টান। মাঝখানে একটু বিরতি দিয়ে আবার শুরু হয় ভারতের ঝড়। তবে ৫৩ বলে ফিফটি হাঁকানো কোহলি ৫১ রানে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন রোলফ ফন ডার মারওয়ের বলে। ১২তম ওভারেই একশ পেরিয়ে যাওয়া ভারত ২৯তম ওভারে দুইশ ছাড়িয়ে যায়। শুরু থেকেই আত্মবিশ্বাসের সাথে খেলে আসা শ্রেয়াস আইয়ার রানের গতি ধরে রাখতে আগ্রাসী ও সতর্ক ব্যাটিংয়ের মিশ্রনে ফিফটি পেয়ে যান ৪৮ বলে। রাহুলও ক্রিজে এসেও সমানতালে খেলে যান চতুরতার সাথে। তিনি ফিফটির দেখা পান ৪০ বলে। ৪২তম ওভারে ভারত তিনশ পেরিয়ে যাওয়ার সাথে শ্রেয়াস-রাহুলের জুটিও শতরানের হয়ে যায়। ৮৪ বলে শ্রেয়াস সেঞ্চুরি পাওয়ার পর উত্তাল হয়ে ওঠে রাহুলের ব্যাট। শেষ ওভার শুরুর আগে সেঞ্চুরি থেকে ছিলেন ১১ রান দূরে। টানা দুই ছক্কায় দুর্দান্তভাবে শতক হাঁকিয়ে ফেলেন। আউট হওয়ার আগে মারেন ১১ চার ও ৪ ছক্কা। আলোড়ন তোলা ইনিংসে ১০টি চারের সঙ্গে ৫টি ছয় আসে অপরাজিত থাকা শ্রেয়াসের ব্যাট থেকে। নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৪ উইকেটে ৪১০ রানের পাহাড় গড়ে স্বাগতিকরা। ডাচ বোলারদের মধ্যে বাস ডি লিডি ২টি উইকেট নেন।
৪১১ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় ডাচরা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ওপেনার ওয়েসলি বারেসিকে ৪ রানে ফিরিয়ে উইকেটের খাতা খোলেন মোহাম্মদ সিরাজ। বারেসি ফেরার পর বেশ ভালোভাবেই ভারতীয় বোলারদের মোকাবিলা করতে থাকে ডাচ দুই ব্যাটসমেন ম্যাক্স ডি’অড ও কলিন অ্যাকারম্যান। প্রথম দশ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ৬২ রান তোলে ডাচরা। এই জুটি ভাঙেন কুলদীপ যাদব, ১৩তম ওভারে অ্যাকারম্যানকে আউট করে। অ্যাকারম্যান ৩৫ রান করে সাজঘরে ফেরেন। অ্যাকারম্যান ফেরার পর আরেক ওপেনার ম্যাক্স ডি’ওডও বেশিক্ষণ স্থায়ী হননি। তিনিও ব্যক্তিগত ৩২ রান করে আরেক স্পিনার জাদেজার শিকার হন। ৭২ রানে তিন উইকেট হারিয়ে আবার বিপদে পড়ে নেদারল্যান্ডস। চতুর্থ উইকেট জুটিতে এঙ্গেলব্রেখট ও স্কট এডওয়ার্ডস ৩৯ রান করে বিপর্যয় সামাল দেন। এদের জুটি ভাঙেন অপ্রত্যাশিতভাবে বোলিং করতে আসা কোহলি। ৩৫৭২ দিন পর কোহলি উইকেট পান স্কট এডওয়ার্ডসের। এর পর উইকেটে আসা ডি লিডি ১২ রান করে বুমরাহর বলে বোল্ড হন। অন্য প্রান্তে থাকা এঙ্গেলব্রেখটকে অর্ধশতক থেকে পাঁচ রান দূরে থাকতে সিরাজ তার শিকারে পরিণত করেন। শেষ দিকে একাই লড়াই করে যান ভারতীয় বংশোদ্ভূত নিদামানুরু। ৩৯ বলে ৫৪ রান করে ডাচদের হারের ব্যবধান কমান তিনি। ১৩ বল বাকি থাকতে ২৫০ রানে অলআউট হয়ে যায় নেদারল্যান্ডস। ভারতের বুমরাহ, সিরাজ, যাদব ও জাদেজা দুটি করে উইকেট পান, বিরাট কোহলি নেন ১ উইকেট।