খেলার মাঠে সবার আগে
Nsports-logo

শুক্রবার, ১৮ই অক্টোবর ২০২৪

লংকানদের দুর্বলতাকে পুঁজি করে সবার আগে সেমিফাইনালে স্বাগতিকরা

এবারের বিশ্বকাপে হট ফেভারিট দলগুলোর মধ্যে ভারত অন্যতম, বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের তালিকায় থাকা দলটি ৩৩তম ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে আরেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দল শ্রীলংকার। এশিয়া কাপ ফাইনাল থেকে এই ম্যাচে প্রেরণা নেওয়ার কথা ম্যাচের আগের দিন বলেছিল শ্রীলঙ্কা। প্রেরণা বলতে ৫০ রানে অলআউট হওয়ার দুঃস্মৃতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় কিন্তু ভারতই উল্টো কলম্বোর প্রেমাদাসার সেই দাপট ফিরিয়েছে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচটিতে। টসে জিতে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেয় লঙ্কানরা। ইনিংসের প্রথম বলেই ৪ মেরে দাপুটে শুরুর ইঙ্গিত দেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা, কিন্তু পরের বলে লঙ্কান পেসার দিলশান মাদুশাঙ্কার শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরে যান। তিন নাম্বার পজিশনে ব্যাট করতে নামা বিরাট কোহলি আরেক ওপেনার শুবমান গিলকে নিয়ে দলের শুরুর দিকে বিপর্যয় সামলে নেন। শুধু সামলে নেয়া বললে ভুল হবে, মূলত এই জুটিতে করা ১৮৯ রানে বড় পুঁজির ভিত পেয়ে যায় ভারত। কিন্তু দুজনেই মিসফিল্ডিংয়ের সুযোগ নিয়েই এত বড় জুটি গড়ে তোলেন। মাত্র ৮ রানের জন্য শতক মিস করা শুবমান গিল যখন সাজঘরে ফিরেন তখন দলীয় সংগ্রহ ১৯৩ রান ২ উইকেটে। তিনি ৯২ বলে ১১টি চার ও ২টি ছয়ে এই রান করেন। গিল যাবার তিন রানের মাথায় বিরাট কোহলিও সাজঘরে ফেরেন। বিরাট ৯৪ বলে ৮৮ রান করেন ১১টি চারের সাহায্যে। তাদের দুজনকে আউট করে দলকে খেলায় ফেরাতে চেষ্টা করেন পেসার দিলশান মাদুশাঙ্কা।

তবে এরমধ্যেই দুটি কীর্তি গড়েন কোহলি। বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি ক্রিকেটার কুমার সাঙ্গাকারা ও বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের নন-ওপেনার হিসেবে সর্বাধিক ১২টি পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলার রেকর্ড ভেঙে দেন তিনি। এদিন লঙ্কানদের বিপক্ষে ফিফটি তুলে নেওয়ায় কোহলির ফিফটি সংখ্যা দাঁড়ালো ১৩’তে। এছাড়া চলতি বছরে হাজারও এদিন পূরণ করেছেন কোহলি। তাতে পেছনে ফেলে দেন শচীন টেন্ডুলকারকে। এ নিয়ে আটবার এক ক্যালেন্ডার ইয়ারে হাজার রান করলেন কোহলি। অর্থাৎ এক ক্যালেন্ডার ইয়ারে সবচেয়ে বেশিবার হাজার রান করা খেলোয়াড় এখন তিনি। এর আগে ২০১৯ সালের ক্যালেন্ডার ইয়ারে হাজার রান করে শচীনের সাতবারের রেকর্ড ছুঁয়েছিলেন তিনি।

কোহলির সাজঘরে ফেরার পর লোকেশ রাহুলের সঙ্গে ৬০ রানের জুটি বেঁধে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন শ্রেয়াস আইয়ার, ব্যক্তিগত ২১ রানে চামিরার দ্বিতীয় স্বীকার হন রাহুল। এরপর শ্রেয়াসকে ক্রিজে খুব বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি সূর্যকুমার যাদব, তিনিও মাদুশাঙ্কার শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরে যান দলীয় ২৭৬ রানে। তবে রবীন্দ্র জাদেজার সঙ্গে ৫৭ রানের আরও একটি দারুণ জুটি গড়ে মাদুশাঙ্কার পঞ্চম শিকার হন শ্রেয়াস। ৫৬ বলের আক্রমণাত্মক ইনিংসে ৩টি চার ও ৬টি ছয়ে ৮৮ রান করেন এই ব্যাটসম্যান। শেষ দিকে ২৪ বলে ৩৫ রানের ইনিংস খেলেন জাদেজা। যার ফলে নির্ধারিত ৫০ ওভার খেলা শেষে ৩৫৭ রানের পাহাড়সম টার্গেট দাঁড় করায় ভারত। শ্রীলঙ্কার হয়ে এদিন ১০ ওভার বল করে ৮০ রানের খরচায় ৫টি উইকেট নিয়েছেন পেসার দিলশান মাদুশাঙ্কা।

ভারতের দেয়া ৩৫৮ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে বিশ্বকাপে কোন টেস্ট খেলুড়ে দেশের সর্বনিম্ন রানে অলআউট হওয়ার ‘লজ্জায়’ পড়েছে লঙ্কানরা। ৩০২ রানের হারে বিশ্বকাপে টেস্ট খেলুড়ে দেশের মধ্যে রানের ব্যবধানে সবচেয়ে বড় হারও মিলেছে তাদের। লঙ্কান ব্যাটিং ইনিংসের প্রথম বলেই উইকেট তুলে নেয় ভারত। জাসপ্রিত বুমরাহর আউটসুইঙ্গারে এলবিডাব্লিউ হয়ে বিদায় নেন লঙ্কান ওপেনার পাথুম নিসাঙ্কা। সিরাজ এসে তার প্রথম বলেও উইকেট শিকার করেন। দিমুথ করুনারত্নেকেও শূন্য রানে ফিরিয়ে দেন এলবিডাব্লিউ বানিয়ে। বুমরাহ-সিরাজ জুটি সুইং পেয়ে ঝাঁঝালো বোলিং করতে থাকেন। যেন আগুনের গোলা ছুড়ছিলেন তারা। দ্বিতীয় ওভারে সিরাজ আরও একজনকে শিকার বানিয়ে ফেলেন। সাদিরা সামারাবিক্রমা সিরাজের তোপের মুখে বাইরের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে দেন। কুশল মেন্ডিসকেও যখন পরের ওভারে এসে সিরাজ দুর্দান্ত আউটসুইঙ্গারে বোল্ড করেন, শ্রীলঙ্কার স্কোরবোর্ডে রানের থেকে উইকেট সংখ্যা বেশি। ৩ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলা লঙ্কানরা চোখে যেন আঁধার দেখছিল। ক্ষণিকেই তারা ছিটকে যায় ম্যাচ থেকে। এঞ্জেলো ম্যাথিউজ এসে চারিথ আসালাঙ্কাকে নিয়ে সিরাজ-বুমরাহ জুটির আক্রমণে কোন রকমে টিকে থাকতে পারেন। তবে লঙ্কানরা রেহাই পাবে কোথা থেকে, মোহাম্মদ শামি এসে মেডেন দিয়ে দুজনকে পাঠিয়ে দেন প্যাভিলিয়নে। আগের ২৩ বলে মাত্র ১ রান আনতে পারা আসালাঙ্কা শামির বলে চার মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন পয়েন্টে। দুশান হেমন্ত এসে প্রথম বলেই কিপারকে ক্যাচ দিয়ে দেন। লঙ্কানরা পাওয়ারপ্লেতেই হারিয়ে ফেলে ৬ উইকেট।

১৪ রানে থাকা লঙ্কানদের তখন বিশ্বকাপে ৩৬ রানের সর্বনিম্ন স্কোর চোখ রাঙানি দিচ্ছে। ২২ রানে যেতে না যেতেই আরেকটি উইকেট হারিয়ে বসে তারা। ১২তম ওভারে লোকেশ রাহুলের দুর্দান্ত রিভিউয়ের আবদারে উইকেট পান শামি। পরের ওভারে এসে ততক্ষণ একপাশে নিজেদের ধ্বংসযজ্ঞ দেখা ম্যাথিউজকেও ফিরিয়ে দেন শামি। ম্যাথিউজকে বোল্ড করে দিলে ২৯ রানেই ৮ ব্যাটসমেন সাজঘরে বসে যায় লঙ্কানদের। মাহিশ থিকশানা ও কাসুন রাজিতা এসে অপ্রত্যাশিতভাবে রান বের করে ফেলেন। দুজনেই দুই অঙ্কে পৌঁছে যান। ব্যক্তিগত ১৪ রানে শেষমেশ রাজিতা যখন আউট হন, লঙ্কানরা অবশ্য পৌঁছে যায় ৪৯ রানে। শামি পেয়ে যান ফাইফার, বিশ্বকাপে যা তার তৃতীয়। রাজিতার উইকেট নিয়ে ভারতের হয়ে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীও বনে যান শামি। ৫৫ রানে শেষ উইকেট পড়ে গেলে লঙ্কাদের দু:স্বপ্নের সমাপ্তি ঘটে।

স্কোর

 

 

 

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More

Privacy & Cookies Policy