প্রোটিয়াদের ব্যাটিং-বোলিংয়ে কুপোকাত কিউইরা
১৩তম বিশ্বকাপের এই আসরে রান রেটের দিক থেকে নিজেদের অন্যতম উচ্চতায় নিয়ে গেছে সাউথ আফ্রিকা। ৭ ম্যাচের মধ্যে ১টিতে হেরেও +২.২৯০ নেট রান রেট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলে সবার উপরে আছে দলটি। তাদের এবারের শিকার নিউজিল্যান্ড।
বিশ্বকাপের এবারের আসরের প্রোটিয়া ও কিউদের মধ্যকার ৩২তম ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয় পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট এসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে। টসে জিতে কিউই অধিনায়ক টম ল্যাথাম দক্ষিণ আফ্রিকাকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায়। বোলিং নিয়ে নিউজিল্যান্ড শুরু করেছিল দুর্দান্ত, প্রথম ৫ ওভারে ২২ রানের বেশি দেয়নি কিউইরা। ৮.৩ ওভারে দলীয় ৩৮ রানে প্রোটিয়া অধিনায়ক টেম্বা বাভুমাকে সাজঘরে ফেরায় তারা। ভেন দার ডুসেন ক্রিজে আসেন অধিনায়ক ফেরার পর, জুটি বাঁধেন আরেক ওপেনার ডি ককের সাথে। প্রথম থেকেই আস্তে-ধীরে, বুঝে-শুনে খেলছিলেন ডি কক, তার দেখানো পথেই যেন হেঁটেছেন ভেন দার ডুসেনও।
তবে ধীরগতিতে শুরু করা এই দুজন যে কিউইদের জন্য কাল হয়ে উঠবেন তা হয়তো ধারণাও করতে পারেনি কিউইরা। ৬২ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করেন ডি কক। প্রথম ১০ ওভারে ৪৩ রান করা দক্ষিণ আফ্রিকা, ২১তম ওভারেই দলীয় শতরান পার করে যায়। আরেক প্রান্তে থাকা ভেন দার ডুসেন অর্ধশতক ছুঁতে ৬১টি বল খেলেন। ডি ককের সঙ্গে গড়া তার দ্বিতীয় উইকেট জুটিটা ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে এরপর। মাত্র ৩৬ ওভারেই দুইশ পেরিয়ে যায় প্রোটিয়ারা। ডি কক চলতি বিশ্বকাপের চতুর্থ শতক পেয়ে যান ১০৩ বলে। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে তারা ১৮৯ বলে ২০০ রান করেন। দলীয় ২৩৮ রানে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফেরার আগে ১১৬ বলে ১০টি চার আর তিনটি ছয়ের সাহায্যে ১১৬ রান করেন ডি কক। ডি কক ফেরার পর তৃতীয় উইকেটে ডেভিড মিলারের সঙ্গে ৪৩ বলে ৭৮ রানের জুটি বাঁধেন ভেন দার ডুসেন। দলীয় ৩১৬ রানে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে ১১৮ বলে ৯টি চার আর ৫টি ছয়ে ১৩৩ রান করেন ডুসেন। ইনিংসের শেষদিকে ব্যাটিং তাণ্ডব চালিয়ে আউট হবার আগে ৩০ বলে দুই চার আর ৪টি ছয়ে ৫৩ রান করেন ডেভিড মিলার।
ডি কক, ভেন দার ডুসেন এবং ডেভিড মিলারের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৫০ ওভারে ৪ উইকেটে ৩৫৭ রানের পাহাড় গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। নিউজিল্যান্ডের হয়ে ২ উইকেট শিকার করেন টিম সাউদি, এছাড়া ১টি করে উইকেট নেন জেমস নিশাম এবং ট্রেন্ট বোল্ট।
৩৫৮ রানের বিশাল লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় কিউইরা। ওপেনার ডেভন কনওয়ে সাজঘরে ফিরেন ইয়ানসেনের শিকার হয়ে দলের ৮ রানের মাথায়, ব্যক্তিগত ২ রান করে। এরপর ওয়ান ডাউনে নামা রাচিন রবীন্দ্রও দলীয় ৪৫ রানের মাথায় ইয়ানসেনের শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন। তার ব্যক্তিগত সংগ্রহ ছিল ১৬ বলে ৯ রান। ৪৫ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারিয়ে ফেলা নিউজিল্যান্ড পাওয়ারপ্লে শেষ করে ৫১ রানে। তৃতীয় উইকেটে উইল ইয়ং ও ড্যারিল মিচেল কিছুটা হাল ধরার চেষ্টা করলেও ইয়ংকে সাজঘরে ফিরিয়ে, সেটা ব্যর্থ করেন জেরাল্ড কোয়েটজি। ইয়ং আউট হন ৩৭ বলে ৫ চারে ৩৩ রানের ইনিংস খেলে। ২৪ রান করা মিচেলকে ফিরিয়েছেন মহারাজ, অধিনায়ক টম ল্যাথাম আউট হয়েছেন মাত্র ৪ রান করে। মিচেল স্যান্টনার ও টিম সাউদি ফিরে যান ৭ রান করে। রানের খাতাই খুলতে পারেনিনি জিমি নিশাম। অবশ্য গ্ল্যান ফিলিপস ও ট্রেন্ট বোল্টের ব্যাটে ভর করে দেড়শর কাছাকাছি যেতে পারে কিউইরা। একপাশে যাওয়া-আসার মিছিল দেখা গ্লেন ফিলিপস তোলপাড় ব্যাটিং শুরু করেন, নিয়মিত চার-ছয় বের করে ৪৬ বলে ফিফটির দেখা পেয়ে যান। শেষমেশ ইনিংসটাকে ৬০ রানের থেকে বড় করতে পারেননি। তবে চারটি করে ছয় ও চারে সাজানো সেই ইনিংসে ভর করে নিউজিল্যান্ড যেতে পারে ১৬৭ রান পর্যন্ত। ১৯০ রানের বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করে দক্ষিণ আফ্রিকা।
প্রোটিয়াদের হয়ে ৪ উইকেট নেন কেশভ মহারাজ। এছাড়া ৩ উইকেট তোলেন মার্কো ইয়ানসেন।
১৯০ রানের বড় জয়ে প্রোটিয়ারা এখন সাত ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে বিশ্বকাপের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে। পয়েন্ট সমান হলেও নেট রান রেটের হিসাবে স্বাগতিক ভারতকে টপকে গেল তারা। অন্যদিকে ৭ ম্যাচে টানা তিন পরাজয়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ পজিশনে আছে নিউজিল্যান্ড।