হাড্ডাহাড্ডি লড়াইতে ভারত ৪ উইকেটে জয়ী
বিশ্বকাপের চলমান ১৩তম আসরের সবচেয়ে ফেভারিট দুই দল নিউজিল্যান্ড ও ভারতের ২১তম ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয় ধর্মশালার হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে। টসে জিতে নিউজিল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় ভারত। ব্যাটিংয়ের শুরুতেই হোচট খায় কিউইরা। দলীয় ৯ রানে ডেভন কনওয়ে ও ১৯ রানে উইল ইয়ং সাজঘরে ফিরে যান। কনওয়ে রানের খাতা খোলার আগে বিদায় নিলেও ইয়ং ২৭ বলে ১৭ রান করে।
বিপদ সামলে দলের হাল ধরেন রাচিন রবীন্দ্র এবং ড্যারিল মিচেল। ধীরে ধীরে ক্রিজে জমে যাওয়া মিচেল এবং রবীন্দ্রর সাবলীল ব্যাটিংয়ে চাঙ্গা হতে শুরু করে কিউইদের ইনিংস। দুজনেই অর্ধশতক ছুঁয়ে ফেলেন। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ১৫৯ রান যোগ করেন মিচেল ও রবীন্দ্র। তবে তাদের এই লম্বা পার্টনারশিপের পেছনে ভারতীয় ফিল্ডারদের ক্যাচ মিস করাটাও অনেক বড় অবদান রেখেছে। নিজের ১২ রানের মাথায় ভারতের সেরা ফিল্ডার জাদেজার হাত থেকে বেঁচে যান রবীন্দ্র, মিচেলও জীবন পান দুবার ৬০ রানে উইকেটকিপার রাহুলের পর ৭৩ রানে তাঁর ক্যাচ ছাড়েন যশপ্রীত বুমরাহ। রবীন্দ্র দুবার বেঁচেছেন রিভিউ নিয়েও, দুবারই তাঁকে আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার আদ্রিয়ান হোল্ডস্টক। ভাগ্যকে কাজে লাগিয়ে প্রায় ২৫ ওভার ব্যাটিং করে এত বড় পার্টনারশীপ গড়েন মিচেল ও রবীন্দ্র।
শেষ পর্যন্ত দলীয় ১৭৮ রানে, রবীন্দ্র ৬টি চার ও ১টি ছয়ের সাহায্যে ৮৭ বলে ৭৫ রান করে সামির অফ কাটারে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরের পথে ফিরলে ভেঙে যায় এই পার্টনারশীপ। বেশ কিছুদিন ধরে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মিচেল রবীন্দ্র যাবার পরও ছিলেন সাবলীল, তার ব্যাটে দলের রানের চাকা সচল থাকলেও অন্য কিউই ব্যাটসমেনরা তেমন সুবিধা করতে পারেনি। রবীন্দ্রর আউটের পর তাসের ঘরের মত হুড়মুড়িয়ে ভেঙ্গে পড়তে থাকে কিউইদের ব্যাটিং লাইনআপ। তবে ছয় নাম্বারে ব্যাটিং করতে নামা গ্লেন ফিলিপস ১টি ছয়ের সাহায্যে ২৬ বলে ২৩ রান করে মিচেলকে কিছুটা সঙ্গ দিয়েছেন। কিউই ইনিংসয়ের শেষ ওভারে আউট হবার আগে মিচেল মারমূখী ব্যাটিং করে ৯টি চার আর ৫টি ছয়ের সাহায্যে ১২৭ বলে ১৩০ রান করে সাজঘরে ফেরেন। নির্ধারিত ৫০ ওভারের খেলা শেষে ২৭৩ রান তুলে অলআউট হয় নিউজিল্যান্ড।
ভারতের হয়ে মোহাম্মদ সামি ৫টি, কুলদীপ যাদব ২টি, মোহাম্মদ সিরাজ এবং জাসপ্রীত বুমরাহ ১টি করে উইকেট নেন।
২৭৪ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে ভারতের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শুবমান গিল শুরুটা বেশ ভালভাবেই করে। বেশ আগ্রাসী ছিলেন ফর্মে থাকা রোহিত, দলীয় ৭১ রানে ফার্গুসনের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরার আগে তার সংগ্রহ ছিল ৪০ বলে ৪টি চার ও ৪টি ছয়ের সাহায্যে ৪৬ রান। অধিনায়কের ফেরার পর বেশিক্ষন ক্রিজে টিকেননি গিলও, তিনিও ফার্গুসেনের শিকার হয়ে ৩১ বলে ২৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন। এরপর ভারত শিবিরের ব্যাটিংয়ের হাল ধরেন বিরাট কোহলি, যথেষ্ট দায়িত্বশীলতার সাথে ভারতের রানে চাকা সচল রাখেন তিনি। অযথা আক্রমণাত্মক খেলেননি, অতিরিক্ত ডট বলও না খেলে ঠান্ডা মাথায় দলকে জয়ের লক্ষে নিয়ে গেছেন নিজের অর্ধশতক পুরো করে। শেষ দিকে কোহলির সাথে জুটি বাঁধেন রবীন্দ্র জাদেজা। দুজন মিলে বেশ ভালোভাবেই দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিচ্ছিলেন। ইনিংসের একদম শেষ দিকে গিয়ে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগে কোহলির। কিন্তু সেই সেঞ্চুরিটা আর করতে পারেননি কোহলি। ১০৪ বলে ৮টি চার ও ২টি ছয়ের সাহায্যে ৯৫ রানের ইনিংস খেলে সাজঘরে ফিরে যান তিনি। শেষে মোহাম্মদ সামিকে নিয়ে জাদেজা দলকে জেতান। ১২ বল হাতে রেখে ৪ উইকেটের দারুণ এক জয় তুলে নেয় ভারত। ৪৪ বলে ৩৯ রানের ইনিংস খেলে শেষপর্যন্ত অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন জাদেজা।
২০০৩ সালের পরে আইসিসির কোনো ইভেন্টে নিউজিল্যান্ডকে হারালো ভারত। এই ম্যাচের ৪ উইকেটের জয়ে ২০ বছরের খরা কাটাল বিরাট কোহলিরা।
স্কোর