রিয়ালের রাজকীয় অভিবাদন!
কে জিতবে ইউরোপ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট, লিভারপুল না রিয়াল মাদ্রিদ? অবশেষে এই তর্ক-বিতর্কের সমাধান মিলল রোববার। অলরেডদের হারিয়ে রেকর্ড ১৪তম বারের মত ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদ। তবে ম্যাচ শেষ হলেও ফুরিয়ে যায়নি এখনো ম্যাচের উত্তাপ।
প্যারিসের স্তাদ দা ফ্রান্সে ভিনির একমাত্র গোলে এবং বেলজিয়ান গোলরক্ষক কোর্তোয়ার অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সে ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন মুকুট উঠল মাদ্রিদের মাথায়। কিন্তু পথটা মোটেও মসৃণ ছিল না রিয়ালের জন্য। চেলসি,ম্যানচেষ্টার সিটি, পিএসজি এবং সবশেষ লিভারপুল।
বিশ্ব ফুটবলের মস্তবড় জায়ান্টদের রুখে স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়ালের ইউরোপের একছত্র আধিপত্য দেখল পুরো বিশ্ব।
কিন্তু এমন বাধভাঙ্গা উল্লাসের ঢেউ প্রকাশের ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না রিয়ালের মাষ্টারমাইন্ড কার্লো আনচেলত্তি।
ম্যাচ শেষে তাই বলেই ফেললেন, ‘সত্যি! আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। কঠিন একটা ম্যাচ ছিল। আমি মনে করি, এই প্রতিযোগিতায় জয়ী হওয়ার যোগ্য আমরাই। আমরা খুব খুশি। আর কীই-বা বলতে পারি। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।”
এদিন রিয়ালের জার্সি গায়ে স্তাদ দি ফ্রান্সে নেমে এসেছিলেন এক প্রাচীর। যেই প্রাচীরের কাছে বারবার মাথানত করতে হয়েছে সালাহ-মানেদের। পুরো ম্যাচে ইংলিশ জায়ান্টরা ৯ টি শট রেখেছে লক্ষ্যভ্রষ্টে। যার একটিও টপকাতে পারেনি বেলজিয়ান গোলরক্ষক কর্তোয়ার প্রাচীর।
এমন অতিমানবীয় পারফরম্যান্সের পর ম্যাচ সেরার পুরুষ্কার উঠেছে তার হাতে। তবে দলকে জেতাতে কি করতে হয়নি তার। চেনালেন নিজের জাত। কিন্তু এই যাত্রায় লিভারপুল সমর্থকদের কাছ থেকে অনেক টিপ্পনি শুনতে হয়েছে রিয়ালের। চ্যাম্পিয়ন হয়ে যা মনে করিয়ে দিলেন কোর্তোয়া। ছাড়লেন হুঙ্কারও!
‘অবিশ্বাস্য। এত বছর ধরে এত পরিশ্রম করেছি শিরোপা জেতার জন্য। যেমনটা বলেছিলাম, রিয়াল ফাইনাল ম্যাচে খেলে জেতার জন্য। এই কথার জন্য অনেক টিপ্পনী শুনেছি। আজ আমরা দেখিয়ে দিয়েছি, ইউরোপের রাজা কারা!’
দিন কয়েক আগে রিয়াল কতৃপক্ষ যাকে নিয়ে দলে অন্তর্ভুক্তির আলোচনায় রাত দিন এক করে ফেলত তার শহর প্যারিস থেকে ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের একমাত্র গোলে শিরোপা জিতে ফিরেছে রিয়াল মাদ্রিদ। এমন পারফরম্যান্সে সেই এমবাপ্পেকেই কিনা ভুলেই গেল রিয়াল মাদ্রিদ। স্পষ্ট বলে দিলেন ক্লাব সভাপতি পেরেজ।
সাক্ষাৎকারে পেরেজ বলেছেন, ‘আজ এই সাফল্যের পর এমবাপ্পেকে সবাই ভুলে গেছে। কিছুই হয়নি, রিয়াল মাদ্রিদ দুর্দান্ত একটি মৌসুম কাটিয়েছে, আর এমবাপ্পের ব্যাপারটা এখন অতীত। রিয়াল মাদ্রিদের সবাই পার্টি করতে ব্যস্ত। ‘
তবে দাপুটে ফুটবল খেলেও লিভারপুলের আরেকটি স্বপ্ন ভঙ্গের রাত পার করতে হয়েছে। তবে এই হারের হতাশায় দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে না লিভারপুল। নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর হুঙ্কার ছাড়লেন সালাহ-মানেদের শিক্ষক ইয়ুর্গেন ক্লপ। আগামী মৌসুমে ফাইনাল খেলা দেখার জন্য হোটেল বুকিং দিয়ে রাখতে বলেছেন সমর্থকদের।
লিভারপুল কোচ বলেন, ‘ আমার খুব মনে হচ্ছে, আমরা ফিরে আসব। এই ছেলেরা দারুণ লড়াকু। আমরা সামনে এগিয়ে যাব। পরের ফাইনাল যেন কোথায়? ইস্তামবুল! সেখানে হোটেল বুকিং দিয়ে রাখুন’।
তবে এতকিছু ছাপিয়ে যাদের জন্য এই খেলা প্রাণভোমরা সমর্থকরা হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে স্তাদ দা স্টেডিয়ামে এসেছিলেন ফাইনাল মহারণ দেখতে। যেখানে ঢুকতে রীতিমতো যুদ্ধই করা লাগল তাদের। যার জন্য উয়েফাকে ম্যাচ পেছাতে হয়েছে মিনিট বিশেক। পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতি,ধ্বস্তাধস্তি, কাঁদানে গ্যাস ভয়ংকর এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হল সাবেক খেলোয়াড়দের পর্যন্ত।
তবে সব তর্ক বিতর্কের অবসান করে ক্লপের সুরে বলায় এই মুহূর্তে শ্রেয়, আগামী মৌসুমে ইস্তামবুলে ফাইনাল দেখতে হোটেল বুকিং দিয়ে রাখুন’।