বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ টেনিস তারকা কার্লোস আলকারাজ এল ক্লাসিকো শুরু আগে বলেছিলেন,
‘কঠিন এক ম্যাচ হবে। আমার মনে হয় রিয়াল মাদ্রিদ ২–১ গোলে জিতবে। এমবাপ্পে আর বেলিংহাম গোল করবে।’
রিয়াল মাদ্রিদের পাঁড় ভক্ত আলকাজের সেই ভবিষ্যদ্বাণীই মিলে গেল। গত মৌসুমে চার এল ক্লাসিকোতেই হারের হতাশা ভুলে এই মৌসুমে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াল রিয়াল।
কামব্যাকের রাতে এমবাপ্পে আর বেলিংহামের গোলে ২–১ ব্যবধানেই বার্সেলোনাকে হতাশায় ডুবিয়ে এল ক্লাসিকো জয় ছিনিয়ে নিয়েছে জাবি আলোনসোর দল।
ম্যাচটিতে নামার আগে ক্ষতটা বড়-ই ছিল বার্সেলোনার। চোটের কারণে রাফিনিয়া-লেভান্ডফস্কি-গাভিদের মতো তারকারা বাইরে।
কোচ হ্যান্সি ফ্লিকও কার্ডজনিত নিষেধাজ্ঞায় ডাগআউটে নেই। তাতে কী? তার পরিকল্পনা ও রণকৌশল তো আগেই সাজানো।
অন্যদিকে, রিয়ালের ক্ষতটা ছিল গত মৌসুমে নিজেদের টানা চার হারের কারণে। কেবল তাই নয়, স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নদের কাছে সেসব ম্যাচে হজম করতে হয়েছিল ১৬ গোল।
নতুন মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোয় সেই ক্ষতে কিছুটা প্রলেপ দিয়েছে।
ম্যাচ হারলেও অবশ্য পুরো সময়জুড়ে বলের পজেশন ছিল বার্সার দখলে। শটে এগিয়ে ছিল রিয়াল।
ফ্লিকের শিষ্যরা ৬৩ শতাংশ পজেশনের পাশাপাশি ১৫ শটের মধ্যে ৫টি লক্ষ্যে রাখতে সক্ষম হয়। অন্যদিকে ২২ শটের মধ্যে ৯টি লক্ষ্যে ছিল জাবি আলোনসোর দলের।
প্রেসিং ও বলের নিয়ন্ত্রণ বেশি থাকলেও, ম্যাচে ইয়ামাল-রাশফোর্ডদের শট নেওয়ার তেমন সুযোগ দেয়নি রিয়ালের রক্ষণভাগ।
খেলা শুরুর মাত্র দ্বিতীয় মিনিটেই পেনাল্টি পায় রিয়াল। তবে ভিএআর মনিটরে দেখা যায়- ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে ঠিক ফাউল করেননি ইয়ামাল।
পা ফসকানো বলে শট নিতে গিয়ে উল্টো এই ব্রাজিলিয়ান তারকা ইয়ামালের পায়ে কিক দিয়েছেন। ফলে আগের সিদ্ধান্ত বদলান রেফারি।
নবম মিনিটে বার্সার হয়ে ম্যাচে প্রথম শটটি নেন ইয়ামাল। তবে সেটি গোলপোস্টের বেশ বাইরে দিয়ে যায়।
মিনিট দুয়েকের মাথায় এমবাপের গোলে লিড পেয়ে গিয়েছিল রিয়াল, কিন্তু এবারও সেই পুরোনো হতাশা।
গত মৌসুমে বার্সার বিপক্ষে এমবাপেকে বেশ ভুগিয়েছিল ফ্লিকের সাজানো হাই-লাইন ডিফেন্স। একইভাবে নতুন মৌসুমের প্রথম ক্লাসিকোতেও তার প্রথম প্রচেষ্টা পেনাল্টিতে কাঁটা পড়ল
সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়ালের আসল নায়ক বেলিংহাম।
২২ মিনিটে ইংলিশ তারকার বানিয়ে দেওয়া বল থেকেই দলকে এগিয়ে দেন এমবাপ্পে। ৩৮ মিনিটে ফেরমিন লোপেজের গোলে সমতা ফিরিয়েছিল বার্সা।
যদিও কাতালানদের আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ৪৩ মিনিটে এদের মিলিতাওয়ের পাস থেকে ব্যবধান ২–১ করে ফেলেন বেলিংহাম।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করতে ব্যর্থ হলেও রক্ষণ ঠিকঠাকভাবে সামলে ব্যবধানটা ধরে রাখে রিয়াল।
ম্যাচের বাকি সময়ে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ হয়েছে। বেশ কয়েকটি বদলি নামায় উভয় দল।
এর মধ্যে নজর কেড়েছেন ভিনিসিয়ুস, রদ্রিগোকে নামাতে তাকে তুলে নেওয়ায় ডাগআউটে যাওয়ার আগপর্যন্ত ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই লেফট উইংগার।

শেষ পর্যন্ত স্কোরবোর্ডে পরিবর্তন আনতে পারেনি কেউই। ২-১ ব্যবধানে জয় নিয়ে লা লিগার পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষস্থান ধরে রাখল আলোনসোর দল।
মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকো জিতে লা লিগার শীর্ষস্থান আরও মজবুত করল রিয়াল। ১০ ম্যাচে লস ব্লাঙ্কোসদের পয়েন্ট ২৭। সমান সংখ্যক ম্যাচ খেলে দুইয়ে থাকা বার্সার পয়েন্ট ২২।
এল ক্লাসিকো হবে আর মাঠে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না—তা কি হয়? ম্যাচের শেষ রীতিমতো যুদ্ধংদেহী ফুটবল খেলেছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দল।
শেষ বাঁশি বাজার আগমুহূর্তে রিয়ালের অরেলিয়েঁ চুয়ামেনিকে ফাউল করে লাল কার্ডও দেখেছেন বার্সার পেদ্রি।


