নতুন ব্যালন ডি’অর কিং দেম্বেলে, বোনমাতির হ্যাটট্রিক
একটা সময় ছিল যখন ব্যালন ডি’অর মানেই লিওনেল মেসি আর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর রাজত্ব চোখে ভেসে উঠতো। তবে এখন ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে তারা। ব্যালন ডি’অরের সংক্ষিপ্ত তালিকাতেও ছিলেন না দুজন।
এবারের লড়াইটা হয়েছে লামিনে ইয়ামাল আর উসমান দেম্বেলের মাঝেই নিয়ে। যেখানে ইয়ামালকে পিছনে ফেলে নতুন ব্যালন ডি’অর কিং হয়েছেন দেম্বেলে।
প্যারিসে সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে জমকালো অনুষ্ঠানে দেম্বেলের হাতে তুলে দেওয়া হয় ফরাসি সাময়িকী ‘ফ্রান্স ফুটবল’- এর পুরস্কার, ব্যালন ডি’অর ২০২৫।
প্রথমবারের মতো বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কারটি জিতলেন ২৮ বছর বয়সী এ ফুটবলার। ষষ্ঠ ফরাসি ফুটবলার হিসেবে এই কীর্তি গড়েছেন পিএসজি ফরোয়ার্ড।
এবার ব্যালন ডি’অর জয়ের জন্য অনেকেই এগিয়ে রাখছিলেন দেম্বেলেকে। গত মৌসুমে পিএসজির চ্যাম্পিয়নস লিগ, লিগ ওয়ান ও ফরাসি কাপ জয়ে বড় অবদান রাখেন তিনি।
এছাড়া এক ম্যাচের শিরোপা লড়াই ফরাসি সুপার কাপেও জয়সূচক একমাত্র গোলটি করেন সাবেক বার্সেলোনা ফরোয়ার্ড।
প্রথমবারের মতো পিএসজির চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ী আসরে ৮টিসহ সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৫৩ ম্যাচে ৩৫ গোল করেন দেম্বেলে। এছাড়া অ্যাসিস্ট করেন ১৬টি।
তবে তার সঙ্গে বেশ ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন লামিনে ইয়ামাল। যিনি নিজেও গত মৌসুমে ফুটবলের আঙিনায় দারুণ উজ্জ্বল ছিলেন। তিনি দ্বিতীয় হয়েছেন।
বার্সেলোনার লা লিগা, কোপা দেল রে ও স্প্যানিশ সুপার কাপ জয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন তরুণ স্প্যানিশ উইঙ্গার।
মৌসুমজুড়ে চোখধাঁধানো পারফরম্যান্সে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৫৫ ম্যাচে ১৮ গোল করার পাশাপাশি ২৫টি অ্যাসিস্ট করেন ইয়ামাল।
ফলে তাকেও সম্ভাব্য ব্যালন জয়ীর তালিকায় এগিয়ে রেখেছিলেন অনেকে।
ব্যালন না জিতলেও ২১ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে বর্ষসেরা হিসেবে কোপা ট্রফি ঠিকই জিতে নিয়েছেন ইয়ামাল।
দেম্বেলে মাকে পাশে রেখে বুঝে নিয়েছেন ব্যালন ডি’অর ট্রফিটা। মঞ্চে উঠে সবার আগে অতিথিদের মাঝে বসা মাকে বলেছেন, ‘আমরা একসঙ্গে এটা করেছি।’
আবেগের দমকে দেম্বেলে এরপর টলে যান। কেঁদে ফেলেন। সঞ্চালক কেট স্কট মঞ্চে তাঁর মাকে ডেকে আনার পর ধাতস্থ হলেন একটু।
নিজেকে গুছিয়ে দেম্বেলে বললেন,
‘আমার ক্যারিয়ারে অন্যতম সেরা অর্জন। পিএসজিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই ২০২৩ সালে আমাকে সই করানোর জন্য। সতীর্থরা গত বছরের মতো এ বছরও অসাধারণ। এটা ব্যক্তিগত ট্রফি নয়, আমাদের সবার অর্জন।’
বার্সেলোনায় ছয় বছর ছিলেন।
খেলার চেয়ে দেম্বেলের চোটই তখন বেশি শিরোনাম হয়েছে। পিএসজি তাঁকে পেয়েছিল বার্সেলোনায় হতাশায় ডুবতে বসা এক প্রতিভা হিসেবে।
কোচ লুইস এনরিকের ছোঁয়ায় সেই দেম্বেলেই এখন ব্যালন ডি’অর ট্রফির দ্যূতি ছড়িয়ে ধন্যবাদ জানালেন বার্সাকে,
‘যত ক্লাবে খেলেছি সবাইকে ধন্যবাদ: রেঁনে, বরুসিয়া ডর্টমুন্ড এবং সব সময় যে ক্লাবে খেলার স্বপ্ন দেখেছি, বার্সেলোনা। সেখানে অনেক কিছু শিখেছি। মেসি ও ইনিয়েস্তার মতো খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলেছি। খুব ভালো লাগছে।’
রেমন্ড কোপা, মিশেল প্লাতিনি, জ্যাঁ পিয়েরে পাঁপিন, জিনেদিন জিদান ও করিম বেনজেমার পর ষষ্ঠ ফরাসি হিসেবে ব্যালন ডি’অর জিতলেন দেম্বেলে।
শুধু দেম্বেলে নন, পিএসজি কোচ এনরিকেও তো জিতেছেন ইয়োহান ক্রুইফ ট্রফি। বর্ষসেরা কোচের পুরস্কার। ম্যাচ থাকায় ভিডিওবার্তা পাঠিয়ে পিএসজি কোচ তাঁর আনুষ্ঠানিকতা সেরেছেন।
তবে আরও একটি পুরস্কারে উচ্চারিত হয়েছে এনরিকের নাম। সক্রেটিস অ্যাওয়ার্ড।
মানবিক কাজে সংশ্লিষ্ট থাকার পুরস্কার। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত শিশু ও তাদের পরিবারের পাশে থেকে এবার তা জিতেছে জানা ফাউন্ডেশন। জানা এনরিকের মেয়ে। নয় বছর বয়সে মারা যায়।
দেম্বেলে ইনিয়েস্তাকে স্মরণ করার কিছুক্ষণ আগে মঞ্চে উঠেছিলেন স্প্যানিশ কিংবদন্তি। মেয়েদের ব্যালন ডি’অরজয়ীর হাতে ট্রফি তুলে দিতে তাঁকে ডাকা হয়েছিল।
ইনিয়েস্তারই প্রাণের ক্লাব বার্সেলোনার মিডফিল্ডার আইতানা বোনমাতির হাতে টানা তৃতীয়বারের মতো উঠল এই ট্রফি। হ্যাট্রটিক আর কি!
মেয়েদের ফুটবলে আর কেউ বোনমাতির মতো তিনবার ব্যালন ডি’অর জেতেনি। টানা তিনবারের প্রশ্ন তো ওঠেই না।
তেমনি ব্যালন ডি’অরে বার্সার শ্রেষ্ঠত্ব নিয়েও না। ছেলেদের ও মেয়েদের বিভাগ মিলিয়ে ১৭ বার এই ট্রফি উঠেছে বার্সার খেলোয়াড়দের হাতে।
লিওনেল মেসি একাই জিতেছেন ৬ বার, বোনমাতি ৩ বার।
এনরিকে ভিডিওবার্তা দেওয়ার আগে মঞ্চে উঠে ফাবিও কাপেলোর কাছ থেকে নারীদের বিভাগে বর্ষসেরা কোচের ট্রফি বুঝে নেন ইংল্যান্ডের কোচ সারিনা ভিগমান।
এনরিকের ট্রফিটি নিয়ে মঞ্চ থেকে অতিথিদের আসনে ফেরেন ইউরোপিয়ান ফুটবলে শ্রদ্ধেয় এ কোচ।
আলো ঝলমলে অনুষ্ঠানের ফাঁকে গত জুলাইয়ে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত লিভারপুল ও পর্তুগালের ফুটবলার দিয়োগো ও জোতা ও তাঁর ভাই আন্দ্রে সিলভাকে স্মরণ করা হয়।
ফুটবল বিশ্বের পক্ষ থেকে তাঁদের পরিবারকে ‘সরি’ বলেন ব্রিটিশ সঞ্চালক কেট স্কট।
এক নজরে ব্যালন ডি’অর ২০২৫:
ব্যালন ডি’অর (পুরুষ): উসমান দেম্বেলে (পিএসজি, ফ্রান্স)
ব্যালন ডি’অর (নারী): আইতানা বোনমাতি (বার্সেলোনা, স্পেন)
ইয়াসিন ট্রফি (পুরুষ): জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মা (ম্যানচেস্টার সিটি, ইতালি)
ইয়াসিন ট্রফি (নারী): হান্না হাম্পটন (চেলসি, ইংল্যান্ড)
ইয়োহান ক্রুইফ ট্রফি (পুরুষ): লুইস এনরিকে (পিএসজি)
ইয়োহান ক্রুইফ ট্রফি (নারী): সারিনা ভিগমান (ইংল্যান্ড)
কোপা ট্রফি (পুরুষ): লামিনে ইয়ামাল (বার্সেলোনা)
কোপা ট্রফি (নারী): ভিকি লোপেজ (বার্সেলোনা, স্পেন)
বর্ষসেরা ক্লাব (পুরুষ): পিএসজি
বর্ষসেরা ক্লাব (নারী): আর্সেনাল
জার্ড মুলার ট্রফি (পুরুষ): ভিক্টর ইয়োরকেরেস (আর্সেনাল, সুইডেন)
জার্ড মুলার ট্রফি (নারী): এয়া পাজোর (বার্সেলোনা, পোল্যান্ড)
সক্রেটিস অ্যাওয়ার্ড: জানা ফাউন্ডেশশন।





