ইউরোপসেরার তকমা, শক্তি-সামর্থ্য ও খেলোয়াড়দের ছন্দ সব মিলিয়ে আকাশেই উড়ছিল পিএসজি। ক্লাব বিশ্বকাপ ফাইনালে উড়ন্ত পিএসজির ডানা কেটে নতুন ফরম্যাটে চ্যাম্পিয়ন বনে গেল চেলসি।
উসমান দেম্বেলেদের মাটিতে নামিয়ে ৩-০ গোলে জিতে নতুন ফরম্যাটের ক্লাব বিশ্বকাপের প্রথম চ্যাম্পিয়ন হল চেলসি।
২০২১ সালে আগের ফরম্যাটের ক্লাব বিশ্বকাপ জিতেছিল চেলসি। চার বছর পর এই টুর্নামেন্টে এটি তাদের দ্বিতীয় শিরোপা।
ফাইনালের আগে চেলসি কোচ এনজো মারেসকা বলেছিলেন,
‘ফুটবলকে দাবা খেলার মতো মনে করি আমি। প্রতিপক্ষ যখন মুভ করবে, তখন পাল্টা কিছু দিতে হবে। ফাইনালটাও হবে দাবা খেলার মতো।’
সেই দাবার চালেই কিস্তিমাত করল চেলসি।
পিএসজি একটা সময় ৭০ শতাংশ বলের দখল রেখে খেললেও গোল করে কাজের কাজটা সেরেছে ইংলিশ দলটিই।
প্রথমার্ধ শেষে মঞ্চে পারফর্ম করেন আমেরিকান র্যাপার দোজা ক্যাট ও কলম্বিয়ান গায়ক জে বালভিন।
মেট লাইফ স্টেডিয়ামে এমন আনন্দ উৎসবে গ্যালারিতে অনেকের মুখ ভার। মাঠে প্রথমার্ধে তাঁরা যেটা দেখেছেন সেটা যে স্রেফ অবিশ্বাস্য।
ঠিক একই কারণে কারও কারও মুখে আবার হাসি ধরে না। সেই হাসির রঙ নীল, পিএসজি সমর্থকদের বুকে যা বিঁধেছে নীল বেদনা হয়ে।
চেলসির দু-একজন সমর্থক মাথায় হাত রেখে হাসছিলেন।
ক্লাব বিশ্বকাপ ফাইনালের প্রথমার্ধে যেন তাঁদের কল্পনাকেও যেন হার দিয়েছে; ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজির বিপক্ষে চেলসি কি না ৩-০ গোলে এগিয়ে!
সেমিফাইনালে এই পিএসজিই রিয়াল মাদ্রিদের জালে প্রথমার্ধেই ৩ গোল করেছিল। ফাইনালে চেলসির কাছ থেকে তারই কার্বন কপি ‘উপহার’ পেয়েছে ১০ জন নিয়ে মাঠ ছাড়া পিএসজি।
৮৫ মিনিটে লাল কার্ড দেখেন মিডফিল্ডার হোয়াও নেভেস। শেষ পর্যন্ত ৩-০ গোলের জয়েই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন চেলসি।
প্রথমার্ধে জোড়া গোল করেন চেলসি তারকা কোল পালমার।
হোয়াও পেদ্রোকে দিয়েও গোল করান তিনি।
নিজে দুই গোল করার পাশাপাশি পেদ্রোর গোলের অ্যাসিস্টও করেছিলেন পালমার। ফাইনালটা আসলে নিজেরই করে নিয়েছেন এই ইংলিশ তারকা।
পিএসজি পোস্টে প্রথম শট নেয় ১৯তম মিনিটে! এবারের টুর্নামেন্টে এটাই সবচেয়ে বেশি সময় পর বিপক্ষের পোস্টে প্রথম শট চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ীদের।
৭০ শতাংশের মত বলের দখল নিয়ে খেললেও চেলসি রক্ষণ কতটা জমাট ছিল এই পরিসংখ্যানই তার প্রমাণ।
চেলসি এগিয়ে যায় ২২তম মিনিটে। রবার্ট সানচেজের কাছ থেকে বল পেয়েছিলেন গুস্তো। গোলের বিল্ড আপে তিনি দৌড়ে পেছনে ফেলেন নুনো মেন্দেসকে।
তার শট ব্লক হলেও সেই বল পেয়ে জালে জড়ান কোল পালমার।
এবারের ক্লাব বিশ্বকাপে নকআউটে ১৪ ম্যাচের ১৩টিই জিতেছিল প্রথমে গোল করা দল। সেই আত্মবিশ্বাসেই হয়তো আরও বেশি করে জেগে উঠে চেলসি।
৩০ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন পালমারই।
কুলিং ব্রেকের পর মাঝমাঠে বল হারায় পিএসজি। প্রতি আক্রমণ থেকে বল পেয়ে বক্সে একজনকে কাটিয়ে চোখ ধাঁধানো টার্নে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন পালমার।
পিএসজি যেমন ক্লাব বিশ্বকাপে গোল উৎসব করেছে (রিয়াল ৪-০, আতলেতিকো ৪-০, মায়ামি ৪-০, বায়ার্ন ২-০) তেমনি রক্ষণেও ছিল দূর্দান্ত।
ফাইনালের আগে তারা গোল হজম করেছিল কেবল একটি। সেই পিএসজির জালেই প্রথম ৩০ মিনিটে বল জড়াল দুইবার!
চেলসি গ্রুপ পর্বে ফ্ল্যামেঙ্গোর কাছে হেরেছিল ৩-১ গোলে।
এরপর নকআউটে বেনফিকাকে ৪-১, কোয়ার্টার ফাইনালে পালমেইরাসকে ২-১ আর সেমিফাইনালে ফ্লুমিনেন্সকে হারায় ২-০ গোলে।
দিন যত গড়িয়েছে নিজেদের তত বেশি মেলে ধরেছিল তারা।
আর ফাইনালে খেলল নিজেদের সেরাটা। প্রেসিং ফুটবলে পিএসজিকে নাস্তানাবুদ করে ৪৩ মিনিটে তারা এগিয়ে যায় ৩-০ ব্যবধানে।
কোল পালমার বল পেয়েছিলেন মাঝমাঠে, তার পাশে তখন ছিল না পিএসজির কেউ।
পালমারের বাড়ানো পাসে ১০ গজ বাইরে থেকে করা ক্লিপসে বল জিয়ানলুইজি দোন্নারুমার মাথার ওপর দিয়ে জালে পাঠান জোয়াও পেদ্রো।