খেলার মাঠে সবার আগে
Nsports-logo

শুক্রবার, ২৭শে জুন ২০২৫

অলৌকিক জাদুকর মেসির জন্মদিন আজ

‘অলৌকিক জাদুকর মেসি’ নামের এই মহাকাব্যটা লেখা শুরু হয়েছিল ৩৮ বছর আগে আজকের এই দিনে। কিন্তু এই গল্প যেন আর কখনোই শেষ হওয়ার নয়। অনন্তকাল ধরে বিনি সুতার মালায় গাঁথা হতে থাকবে সেই গল্পটা।
প্রজন্মের পর প্রজন্ম বয়ে বেড়াবে বাঁ পায়ের কিংবদন্তির যাদুর গল্প। যে গল্পে একজন মানুষ ভীষণ কঠিন এক লড়াই শেষে পান করবেন অমরত্বের সঞ্জীবনী।

১৯৮৭ সালের ২৪ জুন, আর্জেন্টিনার রোজারিও শহরে খুব সাধারণ এক ঘরে জর্জ মেসি ও সেলিয়া কুচিত্তেনির সংসারের তৃতীয় সন্তান হিসেবে জন্ম নেন লিওনেল আন্দ্রেস কুচিত্তেনি মেসি।

পৃথিবতে পাঠানোর আগে তাকে দেয়া হলো ফুটবল খেলার জন্য ক্ষুরধার মস্তিষ্ক, একজোড়া অসাধারণ পা। আর সঙ্গে দেয়া হলো হরমোনাল কিছু জটিলতা।

অলৌকিক জাদুকর মেসির জন্মদিন আজ

এরপরের গল্পগুলো সবার জানা। রোজারিও থেকে বার্সেলোনা, সেই ন্যাপকিনে লেখা প্রথম চুক্তি– বার্সেলোনার জাদুকরী সব রাত… চোখের সামনে দেখে আসা সব মুহূর্ত। তবু কেন যেন পড়তে গিয়ে ক্লান্ত হতে হয় না।

খুব সাধারণ একজন মেসিকে সব বাধা পেরিয়ে অসাধারণ হতে দেখার মাহাত্ম্যটা বুঝি এমনই।

কিংবদন্তির জীবনে অপবাদের ছিলনা কমতি। অপবাদ ছিল হেডে গোল করতে পারেননা, সেটা করেছেন ২০০৯ সালের চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে।
যে গোলটাকে মেসি নিজেই বলেছেন তার ক্যারিয়ারের সেরা গোল।

অপবাদ ছিল ইংলিশ ক্লাবের বিরুদ্ধে মেসি নিষ্প্রভ। কিন্তু বর্তমান বলছে ইংলিশ ফুটবলের টপ সিক্স ক্লাবের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি গোলদাতার একজন এই আর্জেন্টাইন।

অলৌকিক জাদুকর মেসির জন্মদিন আজ

সবচেয়ে বড় অপবাদ ছিল লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনার না। বার্সেলোনার মেসি যতটা উজ্জ্বল, ততটা আলো ছড়ায়নি আর্জেন্টিনার জার্সিতে।
অথচ ২০২৫ সালে এসে মেসিকে ক্লাবের জার্সিতে যত আপন লাগে, আর্জেন্টিনায় তারচেয়ে বেশি মোহনীয় মনে হয়।

পয়েন্ট অব ডিফারেন্সটা অবশ্য ২০২১ থেকে।

যেদিন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের মাঠ ব্রাজিলে গিয়ে সেই ব্রাজিলকেই হারিয়ে জিতে এসেছিলেন কোপা আমেরিকার শিরোপাটা।

এরপর ফিনালিসিমা আর ২০২২ সালের সেই অসামান্য বিশ্বকাপ। প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হার।
সেখান থেকে মেক্সিকো ম্যাচে প্রবল চাপের মুখে একটা ২৫ গজ দূর থেকে নেয়া শট- আরও একবার মেসি হয়ে উঠলেন সেই পার্থক্য গড়ে দেয়া মানুষটা।

এরপর বাকি সব জটিলতা পেরিয়ে লুসাইল স্টেডিয়ামে মেসি হলেন অমর। হয়ে উঠেছিলেন সর্বকালের সেরা ফুটবলারও।

জাদুকর মেসির গল্পগুলো আমাদের মুগ্ধ করে, কারণ জীবনে কোনো এক পর্যায়ে সবাই চায় ‘পয়েন্ট অব ডিফারেন্স’ হয়ে জিতে আসতে।
কোনো এক গল্পে সবাই নিজেকে দেখতে চায় বিজয়ীর বেশে- আর মেসি হয়ত সেটার সবচেয়ে বড় অণুপ্রেরণার একজন।

হরমোনাল জটিলতা থেকে শুরু করে ফুটবল মাঠ– জাদুকর মেসি জিতেছেন সবই।
আর এখন মেসি উপভোগ করেন নিজের কাজটা, সেটাও হাসিমুখে। যে হাসিমুখের স্বপ্ন দেখেন প্রতিটা মানুষই।

কর্মজীবনের শেষে এমন একটা সফল আর নির্ভার জীবন প্রত্যাশা করা দোষের না নিশ্চয়।

মেসি তাই কেবল ফুটবলের মাঠেই হয়ত থেমে থাকেন না, হয়ে ওঠেন জীবনের গল্পের একজন সাধারণ অণুপ্রেরণা। যার গল্পটা আমাদের শেখায় পার্থক্য গড়ে দেয়া একজন মানুষ হতে।

লিওনেল মেসির বয়স আজ ৩৮। সব পেয়ে যাওয়া মানুষটা এখনো খেলছেন।

লক্ষ্যটা সম্ভবত ২০২৬ বিশ্বকাপ। নিজেকে যেখানে অমর করেছেন, সেই মঞ্চ থেকেই বিদায় নিতে চাইছেন মেসি। সেটাই স্বাভাবিক।
নিজের প্রিয় জায়গা থেকেই শেষ করতে চাইবেন সফলতার গল্পটা।

রোজারিওর যে ছেলেটা ফুটবল দিয়ে অমর হয়েছে পৃথিবীর ইতিহাসে, তার সঙ্গে আমাদের গল্পটাও হয়ত মিশে যাবে, শেষবারের মতো।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More

Privacy & Cookies Policy