পেরেরা ও রাজার শেষের ঝড়ে তৃতীয়বারের মতো পিএসএল চ্যাম্পিয়ন লাহোর
লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ২০১ রান করে কোয়েটা। রান তাড়া করতে নেমে ১ বল বাকি থাকতে ৪ উইকেটে হারিয়ে জয় তুলে নেয় লাহোর।
কুসাল পেরেরা ও সিকান্দার রাজার দুর্দান্ত জুটিতে শেষের ঝড়ে ২০ বলে ৫৭ রানের কঠিন সমীকরণ মিলিয়ে, রান তাড়ার রেকর্ড গড়ে তৃতীয়বারের মতো পিএসএল চ্যাম্পিয়ন লাহোর কালান্দার্স।
পাকিস্তান সুপার লিগের ফাইনালে (পিএসএল) কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্সকে ৬ উইকেটে হারিয়ে তৃতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছে লাহোর কালান্দার্স।
লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে ২০২ রানের লক্ষ্যে এক বল বাকি থাকতে পেরিয়ে গেছে শাহিন শাহ আফ্রিদির নেতৃত্বাধীন দলটি।
রাজাকে বলা যায় পার্শ্বনায়ক। মূল নায়ক তো কুসাল পেরেরা!
৪ ছক্কা ও ৫ চারে ৩১ বলে ৬২ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে দলের জয় নিয়ে ফেরেন শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যান। ফাইনালে ওঠার লড়াই বা দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারেও ৩৫ বলে ৬১ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছিলেন তিনি।
লাহোরের হয়ে শিরোপার স্বাদ পেলেন বাংলাদেশের তিন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ ও রিশাদ হোসেন। যদিও ফাইনালে খেলার সুযোগ পান শুধু রিশাদ।
টি-টোয়েন্টি ফাইনালে সর্বোচ্চ রান তাড়ায় জয়ের রেকর্ড এটি।
আগের রেকর্ড ছিল কলকাতা নাইট রাইডার্সের, ২০১৪ আইপিএলের ফাইনালে তখনকার কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে ২০০ রানের লক্ষ্য তিন বল বাকি থাকতে ছুঁয়ে ফেলেছিল তারা।
ছয় নম্বরে রাজা যখন উইকেটে যান, ২০ বলে লাহোরের দরকার ৫৭ রান। অসম্ভব না হলেও, শিরোপা লড়াইয়ের ম্যাচে খুব কঠিন বটে।
প্রথম দুই বলেই মোহাম্মদ আমিরকে চার ও ছক্কা মেরে যাত্রা শুরু করেন রাজা। ওই ওভারে প্রথম চার বলে স্রেফ ২ রান দিয়ে একটি উইকেট নেওয়া পাকিস্তানের অভিজ্ঞ পেসার শেষ দুই বলে দেন ১০।
তিন ওভারে চাই ৪৭। অষ্টাদশ ওভারে খুররাম শাহজাদকে দুটি ছক্কা মারেন পেরেরা। এই ওভারে আসে ১৬ রান।
দুই ওভারে দরকার যখন ৩১ রান, ১৯তম ওভারে আমিরের প্রথম বলে চার মারেন পেরেরা। ওই ওভারের শেষ দুই বলে চার ও ছক্কায় শেষ ওভারে সমীকরণটা ১৩ রানে নামিয়ে আনেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
শেষ ওভারে একটি ওয়াইডসহ ফাহিমের প্রথম তিন বলে আসে ৫ রান। এরপরই রাজার পরপর ছক্কা ও চারে লাহোরের শিরোপা উল্লাস।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় ফাখার জামান অল্পে ফিরলেও, আরেক ওপেনার মোহাম্মদ নাঈমের ৬ ছক্কা ও এক চারে ২৭ বলে ৪৬ রানের সুবাদে ভালো শুরু পায় লাহোর।
তিনে নেমে ২৮ বলে ৪১ রানের ইনিংসে দলকে এগিয়ে নেন আবদুল্লাহ শাফিক। সেই পথ ধরে দলকে জয়ের ঠিকানায় নিয়ে গেলেন পেরেরা ও রাজা।
এ দিন টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে দুইশ ছাড়ানো পুঁজি গড়েছিল কোয়েটা। টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান ভালো করতে না পারলেও, চার নম্বরে নেমে ৪ ছক্কা ও ৮ চারে ৪৪ বলে ৭৬ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন হাসান নাওয়াজ।
৩ ছক্কা ও ২ চারে ৮ বলে ২৮ রানের ক্যামিও আসে ফাহিমের ব্যাট থেকে।
৪ ওভারে ২৪ রানে ৩ উইকেট নিয়ে লাহোরের সফলতম বোলার আফ্রিদি। তাদের বাকি চার বোলারের সবাই রান দেন ওভারপ্রতি ১০ এর বেশি।
৪ ওভারে ৪২ রানে একটি উইকেট পান লেগ স্পিনার রিশাদ। এ দিন বোলিংটা ভালো না হলেও, ম্যাচ শেষে সতীর্থদের সঙ্গে শিরোপা উল্লাসে মেতে উঠলেন তিনি।
আসরে ৭ ম্যাচে ওভারপ্রতি ৯.৩৩ করে রান দিয়ে ১৩ উইকেট নিয়ে দলের শিরোপা জয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান আছে রিশাদের।
ভারত ও পাকিস্তানের সংঘাতের জেরে স্থগিত হওয়া আসর পুনরায় শুরুর পর সাকিবকে দলে নেয় লাহোর। এই আসর দিয়ে প্রায় ছয় মাস পর ক্রিকেটে ফেরেন ৩৮ বছর বয়সী অলরাউন্ডার।
যদিও তিন ম্যাচের দুটিতে শেষ দিকে ব্যাটিং পেয়ে রানের দেখা পাননি একটিতেও, বল হাতে প্রাপ্তি কেবল একটি উইকেট।
প্লে-অফের আগে মিরাজকে দলে নেয় লাহোর। প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলতে গিয়ে কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ না পেয়েই চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলেন এই অলরাউন্ডার।
সর্বোচ্চ তিনবার পিএসএল জয়ী ইসলামাবাদ ইউনাইটেডের পাশে বসল লাহোর কালান্দার্স। এর আগে ২০২২ ও ২০২৩ আসরেও তারা শিরোপা জিতেছিল আফ্রিদির নেতৃত্বে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্স: ২০ ওভারে ২০১/৯ (শাকিল ৪, অ্যালেন ১২, রুশো ২২, নাওয়াজ ৭৬, আভিশকা ২৯, চান্দিমাল ২২, ফাহিম ২৮, আমির ০, আবরার ০, শাহজাদ ২*; আফ্রিদি ৪-০-২৪-৩, সালমান ৪-০-৫১-২, রউফ ৪-০-৪১-২, রাজা ৪-০-৪৩-১, রিশাদ ৪-০-৪২-১)
লাহোর কালান্দার্স: ১৯.৫ ওভারে ২০৪/৪ (ফাখার ১১, নাঈম ৪৬, শাফিক ৪১, পেরেরা ৬২*, রাজাপাকসা ১৪, রাজা ২২*; আমির ৪-০-৪১-১, শাহজাদ ৩-০-৪৬-০, ফাহিম ৩.৫-০-৪৯-১, আবরার ৪-০-২৭-১, উসমান ৪-০-৩৮-১)
ফল: ৬ উইকেটে জিতে চ্যাম্পিয়ন লাহোর কালান্দার্স
ম্যান অব দা ম্যাচ: কুসাল পেরেরা
ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট: হাসান নাওয়াজ